Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ৯ই মে ২০২৪, ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

চলুন ঘুরে আসি রহমতপুর (উচিতপুর) নৌবন্দর, হাওড়ের অথৈ জলরাশিতে

প্রকাশিত: ৫ সেপ্টেম্বার ২০১৮, ০৩:৫৩

আজহার মাহমুদ: আপনার একগুয়েমি ভাব কাটাতে একটু ফুসরত নিন। ইট পাথরের দেয়ালের শহর ছেড়ে একটু ঘুরে আসতে পারেন। ভাল লাগবে। মনটাও হয়ে উঠবে ফুর ফুরে। সময়টাও কাটবে বেশ ভাল। জীবনে ক্ষয়ে যাওয়া সময়কে ভুলে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস পেতে হাওরে ছুটে যেতে পারেন। সন্ধ্যে হলে হাওরের পানিতে সূর্যের স্নানের নয়নাভিরাম দৃশ্যপট সমুদ্র সৈকতের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। অতএব হাওরের বুকে হারিয়ে যাওয়া সূর্যকে দেখে নির্মল বাতাসে আপনিও গুনতে পারেন পানির ঢেউ!’ অসংখ্য পালতোলা নৌকা। আর গ্রামের সহজ সরল মানুষ।

জানেন কি! সম্ভাবনার নতুনদ্বার পর্যটন কেন্দ্র রহমতপুর (উচিতপুর)। এটা এক সময় হবে নৌবন্দর। চারপাশে হাওড়ের অথৈ জলরাশি। জলের ওপর ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ। আর তার মাঝখানে বালই নদীর ওপর দাঁড়িয়ে আছে সুদৃশ্য পাকা সেতু। লাল-সাদা রঙে আঁকা সেতুটিকে দূর থেকে দেখলে মনে হয় বিশালাকারে একটি সামুদ্রিক জাহাজ। আর বালই সেতুর একটু আগে রয়েছে বিশাল নৌকা ঘাট।

আপনার মনে হবে আমি যেন বিশাল সমুদ্রের মাঝে হাবু ডুবু খাচ্ছি। অথৈ জলরাশি ভেদ করে হরদম সেখানে যাতায়াত করছে শত শত ইঞ্জিন নৌকা (ট্রলার)। হাওড়ের গহীনে বড় বড় জাল ফেলে মাছ ধরছেন মাঝিদের দল। চলতি বর্ষায় নেত্রকোনার মদন উপজেলার রহমতপুর (উচিতপুর) হাওড়ে গেলেই চোখে পড়বে এমন সব নয়নাভিরাম দৃশ্য।

ওই এলাকায় তাই রহমতপুর (উচিতপুর) এখন একটি দর্শনীয় স্থান। হাওড়-বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে প্রতিদিন সেখানে ছুটে আসছেন দূর-দূরান্তের অগণিত মানুষ। রহমতপুর (উচিতপুর) ঘাটে দাঁড়িয়ে উত্তর, পূর্ব বা দক্ষিণের যে কোন দিকে তাকালেই চোখে পড়বে সমুদ্রাকৃতির বিশাল হাওড়।

চোখের দৃষ্টিসীমায় হাওড়ের সীমানা শেষ হবে না। আপাতদৃষ্টিতে অমিল মনে হবে না হাওড় আর সমুদ্রের আকার-আকৃতির মধ্যেও। দূরে ঘন-কালো মেঘের মতো দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামগুলোকে মনে হবে একেকটা দ্বীপ।

আর এর মধ্য দিয়ে ধারণা পাওয়া যাবে বর্ষায় প্রকৃতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের বেঁচে থাকার নিরন্তর সংগ্রাম সম্পর্কেও। লিলুয়া বাতাসের দিকে একটু কান পাতলে ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ের গর্জন ও শোনা যাবে হর হামেশাই।

পাকা ঘাটের দু’পাশে দাঁড়ালে স্বচ্ছ জলে ভিজে যাবে দুই পা। মন-প্রাণ তখন নেচে উঠবে অপার আনন্দে। মন চাইলে রহমতপুর (উচিতপুর) থেকে ভাড়ায় চালিত ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে হাওড়ের মাঝখানেও যাওয়া যায়। কূলহীন হাওড়ের মাঝখানে গেলে দেখা যায় মাঝিদের মাছ ধরার দৃশ্য।

ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুলতে থাকে মাঝিদের ছোট ছোট নৌকা। উচিতপুর বন্দর থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার পূর্বদিকে অবস্থিত বালই সেতু। মদন-খালিয়াজুরি সাবমার্জিবল সড়কের মাঝখানে বালই নদীর ওপর এ সেতুটি নির্মিত হয়েছে সম্প্রতি। শুকনো মৌসুমে এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করে। আর বর্ষা মৌসুমে সড়কটি ডুবে যায়।

কিন্তু সেতুটি জেগে থাকে। চারপাশে অথৈ জলের ভিতর জেগে থাকা দৃষ্টিনন্দন পাকা সেতুটিকে তখন মনে হয় নোঙর করা কোন জাহাজ। আর সেতুর দু’পাশের এ্যাপ্রোচ সড়কগুলোকে মনে হয় সী-বিচ। অনেকের মতে, সমুদ্র- সৈকত বা আশুলিয়ার জলাভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চেয়ে কোন অংশে কম নয় রহমতপুরের (উচিতপুর) দৃশ্য।

রহমতপুর (উচিতপুর) থেকে ট্রলারে মাত্র ১০মিনিটেই পৌঁছা যায় বালই সেতুতে। ট্রলারেরও কোন অভাব নেই সেখানে। তাই বর্ষা শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই শত শত ভ্রমণপিপাসুর ভিড় জমছে রহমতপুর (উচিতপুর) এবং এর সংলগ্ন বালই সেতুতে। বলে রাখা ভাল, রহমতপুরের (উচিতপুর) এ নৈসর্গিক সৌন্দর্য কেবল বর্ষাতেই অবলোকন করা যায়। বর্ষার পর শুকনো মৌসুমে হাওড়জুড়ে চলে চাষাবাদ। তখন আর অথৈ জলের দেখা মিলে না। চলে না নৌকাও।
রহমতপুর (উচিতপুর) থেকে একবারে কাছের গ্রাম গোবিন্দশ্রী, মনিকা, কদমশ্রী, বোয়ালীসহ বেশ ক’টি গ্রাম।

কিভাবে যাবেন :
ঢাকা থেকে প্রথমে নেত্রকোনা যাওয়ার জন্য হযরত শাহ জালাল (রহ) পরিবহনে যেতে ভাড়া দিতে হবে জনপ্রতি ২৭০ টাকা করে। নেত্রকোনা শহর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত মদন উপজেলা সদর। আর মদন সদর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার পূর্ব দিকে এগুলেই রহমতপুর (উচিতপুর) হাওড়। নেত্রকোনা থেকে রহমতপুর (উচিতপুর) যাওয়ার রাস্তাও বেশ ভাল। এক থেকে সর্বোচ্চ দেড় ঘণ্টার পিচঢালা পথ।

ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস, অটোরিক্সা যে কোন যানবাহনেই সহজে পৌঁছা যায় রহমতপুরে (উচিতপুর)। আর পৌঁছার পর প্রথমেই চোখে পড়বে বিশাল নৌকাঘাট। স্থানীয়ভাবে ঘাট বলা হলেও আসলে এটি একটি নৌ-বন্দর। বন্দরজুড়ে শত শত ইঞ্জিন নৌকা আর হাজারও যাত্রীর ভিড়। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হরদম সেখানে নৌকা আসছে আর গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে। রহমতপুর (উচিতপুর) থেকে মদন, খালিয়াজুরি, মোহনগঞ্জ এবং কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করে এসব জলযান।

কোথায় থাকবেন :
বর্ষায় ভরা পূর্ণিমার রাতে রহমতপুরে (উচিতপুর) গেলে ফিরে আসতে মন চাইবে না কারও। তবে রাত যাপনের কোন সুবিধা নেই রহমতপুরে (উচিতপুর)। রহমতপুরের (উচিতপুর) পাঁচ কিলোমিটার আগে মদন সদরে একটি ডাকবাংলো এবং একটি আবাসিক হোটেল আছে। তবে সেগুলো ততটা মানসম্মত নয়। একটু ভালভাবে থাকতে চাইলে নেত্রকোনা সদরে থাকাই ভাল। এদিকে ভাত-তারকারি বা জলখাবারের কোনো অসুবিধা নেই।

সস্তায় খাবার দাবার ও মাছ মাংশ পাওয়া যায় ওই এলাকায়। বিদ্যুৎও রয়েছে রহমতপুরে (উচিতপুর)। ছাড়া ওই এলাকার মানুষ খুবই অতিথিপরায়ন। মানবসেবী। নিরাপত্তার কোন কমতি নেই। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে আধুনিক নানান সুবিধার দিকে।

ভ্রমণপিপাসুরা মনে করেন, রহমতপুর (উচিতপুর) এলাকাটিকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে কিছু উদ্যোগ আশু প্রয়োজন। বিশেষ করে দূর-দূরান্তের ভ্রমণপিপাসুদের রাত-যাপনের জন্য রহমতপুরে (উচিতপুর) একটি আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার। ওই ঘাট থেকে বালই সেতু পর্যন্ত বিরামহীন দুটি ট্রলারের ব্যবস্থা করা।

এতে করে ভ্রমণপিপাসুরা কম খরচে যাতায়াত করতে পারবেন। এছাড়া বর্ষাকালে উচিতপুর ঘাটে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা যেতে পারে। এতে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। সরকার বা স্থানীয় প্রশাসন এ সামান্য ক’টা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করলেই ‘উচিতপুর’ হয়ে উঠবে দেশের নতুন একটি পর্যটন কেন্দ্র।

বি:দ্র: উচিতপুর নামের স্থলে রহমতপুর নামটি একটি প্রস্তাবনা মাত্র। আপনিও এর পক্ষে ও বিপক্ষে মতামত দিতে পারেন। আর চালাতে পারেন প্রচারণা। জানেন তো আদিকাল থেকেই সুন্দর নামের প্রতি মানুষের রয়েছে নিরব টান, মোহ, ভালবাসা। একারণেই এই নামটি প্রস্তাব করা হয়েছে। একদিন এই এলাকা হবে আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র। ফলে ফুলে ভরে উঠবে। হয়তো আমরা সেদিন থাকবো না। দীর্ঘজীবি হও রহমতপুর (উচিতপুর)

ঢাকা, ০৪ সেপ্টেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ