Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বুধবার, ১৫ই মে ২০২৪, ১লা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

স্কুলে বেকবেঞ্চার, বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধার স্ফুরণ : ফলাফলে রেকর্ড

প্রকাশিত: ৪ অক্টোবার ২০১৭, ২২:৫৩

রাফিউল রাফি : স্কুল-কলেজে তার পড়াশোনাটা তেমন হয়ে উঠেনি। পাঠ্যপুস্তকের গৎবাঁধা পড়াশোনা তার ভালো লাগেনি। তাই ওই পর্যায়ে তার ভালো রেজাল্টও করা হয়নি। গড়পড়তা রেজাল্ট হয়েছে। স্কুলে কখনও টপ টেনের মধ্যেও ছিলেন না। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যস্ততা ছিল তার।

কলেজ লাইফ কেটেছে আড্ডা আর হৈ-চৈয়ে। সেখানেও তার ব্যস্ততা একই কাজ নিয়ে। তবে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে মেধার স্ফুরণ ঘটিয়েছেন। এমন ফলাফল করেছেন যা আগের রেকর্ডকে টপকে গেছে। তিনি এখন ঢাবির সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টার্সে রেকর্ড ফলধারী। সিজিপিএ সিস্টেম চালুর পর থেকে এমন ফল আর কেউ কখনও করেননি। সফলতার ওই গল্পটি আশরাফুল গণি সেতু। সেরা ১০-এর মধ্যে কখনো জায়গা করতে পারেননি। তবে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে ছিলেন খুব। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর জেলা পর্যায়ে ‘জাতীয় শিশু পুরস্কার’ জিতেছেন।

স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে ঢাকা সিটি কলেজে সায়েন্সে ভর্তি হন আশরাফুল। লেখাপড়া আর আড্ডায়ই কলেজ লাইফ কেটেছে। তবে সেখান থেকে স্বপ্ন বুনেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার। যদিও মা-বাবার ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হওয়ার। তাদের অমতেই ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি কোচিং শুরু করলেন। অবশেষে চান্স পেলেন ঢাবিতে।

যেহেতু গৎবাঁধা পড়াশোনা ভালো লাগেনি কখনই তাই গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগকেই বেছে নিলেন। নিজের ইচ্ছামতো কিছু পড়তে পারবেন, সমৃদ্ধ হবেন, সাংবাদিকতার রোমাঞ্চকর জীবন হবে ভেবেই ভর্তি হলেন ওই বিভাগে। এরই মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নিতে শুরু করলেন।

প্রথম বর্ষেই বিভাগে আয়োজিত বিতর্কে অংশ নিয়ে রানার-আপ হলেন। অাত্মবিশ্বাস বেড়ে গেল। এরপর ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি মডেল ইউনাইটেড নেশনস (ডিইউমুন)’-এ যোগ দিয়ে জাতিসংঘের আদলে নানা আয়োজন করতে লাগলেন।
ছায়া জাতিসংঘের একটি আসরে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হলেন।

এভাবে আড্ডা আর নানা কর্মকাণ্ডে কেটে গেল প্রথম বর্ষ। ফলাফল ৩.৪৪ সিজিপিএ। দ্বিতীয় বর্ষ থেকে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম থেকে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগানোর চেষ্টা করলেন। গুছিয়ে লেখাপড়া শুরু করলেন সেতু। প্রতিদিন ক্লাসে যা পড়ানো হতো, তা সহায়ক বই ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে পূর্ণতা দিতে লাগলেন। ফলে রেজাল্টও ভালো হলো।

তৃতীয় বর্ষে উঠে বিতর্কে ফের মনোযোগ দিলেন। সার্জেন্ট জহুরুল হক হল হাউস অব ডিবেটরসের প্রতিটি সেশনে অংশ নিতেন। রাত ১০টায় একরাশ ক্লান্তি নিয়ে বাসায় ফিরতেন। বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায় বিতর্ক করলেও ইংরেজি বিতর্কে নাম ছড়ালেন। গত বছর এই সংগঠনের তিনি সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, এ বছর সভাপতি। গেল বছর এশিয়ান-ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি ডিবেটের অন্যতম বিচারক হিসেবে জাকার্তা গিয়েছেন।

যুক্তি-তর্কের এই ভুবনই তাকে পরীক্ষার খাতায় যুক্তি দিয়ে, সুন্দর করে গুছিয়ে লেখা শেখালো। ফলে তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারে ৩.৭৫ সিজিপিএ পেলেন। আত্মবিশ্বাসটা আরো বেড়ে গেল।

এবার ভালোভাবে ক্লাস নোট করতে লাগলেন। শিক্ষকদের রেফারেন্সগুলো জোগাড় করে দিনের পড়া দিনেই শেষ করলেন। ছুটি কি অবসরে সেগুলো রিভিশন দেন। এত কষ্টের ফলও পেলেন। ৩.৬৩ সিজিপিএ নিয়ে অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে ষষ্ঠ। বিভাগের সেরা ১০ জনের একজন হয়ে ‘অধ্যাপক সিতারা পারভীন’ পুরস্কার লাভ করলেন তিনি।

এবার মাস্টার্সে আরো ভালো করার আত্মবিশ্বাস নিয়ে পড়ালেখা শুরু করলেন। প্রথম সেমিস্টারে ৩.৮১ সিজিপিএ নিয়ে যৌথভাবে ‘প্রথম’। পরের সেমিস্টারে বিভাগের ছয় বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সিজিপিএ ‘৪’ পেয়েছেন তিনি। সিজিপিএ চালু করার পর মাস্টার্সে আশরাফুল গণি সেতুর চেয়ে ভালো ফল এখনো কেউ করতে পারেনি। তিনি এখন সিজিপিএ পেয়েছেন ‘৩.৯১’। শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে নিতে চান আশরাফুল গণি সেতু। শুভকামনা রইলো।


ঢাকা, ০৪ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ