Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

ইঞ্জিনিয়ার থেকে বিসিএসে পুলিশ অফিসার হয়ে ওঠার গল্প

প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০১৭, ০৮:৩৮

মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার : বাবা সরকারি চাকরি করেন। সেই সুবাদে স্বপ্ন ছির ছেলেকে সরকারি চাকরি করানোর। বাবা-মায়ের অনুরক্ত ছেলেটি তাই ছোটবেলায় ওই স্বপ্নের বাইরে যেতে পারেননি। ডিফেন্সের প্রতি অসম্ভব দুর্বলতা ছিল তার। আর একারণেই বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাশ করেও পুলিশের খাতায় নাম লিখিয়েছেন তিনি। হয়েছেন মস্ত পুলিশ অফিসার। তানভীর আহমেদের সফলতার গল্পটা এমনই।

চার ভাইবোনের মধ্যে তানভীর তৃতীয়। রাজধানীর মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০১ সালে জিপিএ ৪.২০ পেয়ে এসএসসি ও নটরডেম কলেজ থেকে ২০০৩ সালে ৪.৭৫ পেয়ে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর ভর্তি হন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে।

বাবা মায়ের ভক্ত ওই তরুণ আজীবন মা-বাবার পরামর্শ মতই চলেছেন। জীবনে যখন যে সময়টা সামনে এসেছে সেটাকেই গুরুত্ব দিয়েছেন।

তবে ‘ডিফেন্সে’ যাবার ইচ্ছাটা সেই ছোট থেকেই ছিল এই পুলিশ কর্মকর্তার। সেই সঙ্গে বাবার অনুপ্রেরণা। তানভীরের বাবা ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক। সবসময়ই চাইতেন চার সন্তানের মধ্য থেকে কেউ সরকারের কর্মকর্তা হবে।

বাবা বলতেন, ‘আমার পর কে সত্যায়িত করবে!’ বাবার এই ইচ্ছাটা পূরণ হয় তানভীরকে দিয়েই। আর তাই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লেও বাবার ইচ্ছা পূরণ আর নিজের মনে লালিত স্বপ্নটা থেকেই দেন বিসিএস।

সরকারি কর্মকর্তার সন্তান হওয়ায় খুব কাছ থেকেই দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন বাবার বন্ধুদের জীবন যাপনের ধরণ। নিয়মিত যাতায়াত ছিল বাবার পুলিশ কর্মকর্তা বন্ধুদের বাসায়। তাদের জীবন যাপনের স্টাইল, পোশাক, চলাচলনে আকৃষ্ট হন তিনি। সেটাও তার প্রকৌশলী পেশা ছেড়ে বিসিএস দিয়ে পুলিশে আসার পেছনে অন্যতম কারণ।

বুয়েটে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে বিএসসি শেষ করে ভর্তি হন এমএসএ। এক বছর এমএস আর সেই সঙ্গে নিতে থাকেন বিসিএসের প্রস্তুতি।

তানভীরের বিসিএস যাত্রা শুরু ৩০তম থেকে। প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় সফল হলেও আটকে যান ভাইভায়। পুনরাবৃত্তি ঘটে ৩১তম বিসিএসে। সেখানেও বাদ পড়েন ভাইভায়। তবে দৃঢ় মনোবল আর নিজের প্রতি আস্থা থাকায় পিছ-পা হননি কখনোই।

আবারও প্রস্তুতি নিয়ে দেন ৩৩তম বিসিএস। এবার আর ব্যর্থতা নয়। তীব্র প্রতিযোগিতায় লাখ লাখ পরিক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে একেবারে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি যেন নিজেকেও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।

তানভীর বলেন, ‘আমি যে প্রথম হয়েছি এটা আমি জানতাম না। ফলাফলের দিন দুপুরবেলা আমার খুব কাছের বন্ধু শাহরিয়ার আমাকে ফোন করে জানিয়েছিল বিষয়টা। অনেক ভাল লেগেছিল যখন জানতে পারি আমি সফল হয়েছি। আরও ভাল লাগে যখন বন্ধুরা সবাই ফোন করে বলতে থাকে প্রথম হবার কথা। সে এক অন্যরকম অনুভূতি। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

ফল প্রকাশের পর বুনিয়াদী প্রশিক্ষণে অংশ নিতে যান সারদায় পুলিশ একাডেমিতে। তবে পুলিশে প্রথম হওয়ায় তানভীরের দায়িত্ব ছিল অন্যদের থেকে অনেক বেশি। কোড সিনিয়র হওয়ায় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগসহ সব দায়িত্ব পালন করতে হত তাকে।

অনেকটা দুষ্টুমি করেই তানভীর জানালেন, বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে আসো কিন্তু প্রথম হয়ো না। হা. হা. হা...

তবে প্রথম হওয়ায় যে সম্মানটা পেয়েছেন সেটাও বেশ উপভোগ করেন তানভীর।

ট্রেনিংয়ের অংশ হিসেবে ফরিদপুরে যোগ দেন শিক্ষানবিশ সহকারি পুলিশ সুপার হিসেবে। সে সময়গুলোর কথা মনে হলে এখনও অনন্দে উদ্বেলিত হন তানভীর।

শিক্ষানবিশ সময় শেষ হওয়ার পরই যোগ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে সহকারি পুলিশ কমিশনার হিসেবে। বর্তমানে কর্মরত আছেন রাজারবাগে।

চাকরি জীবনে বিভিন্ন সময় তাকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে সাহস, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা দিয়ে জয় করেছেন সব।

খেলাধুলা প্রিয় হাস্যোজ্জ্বল পুলিশের ওই কর্মকর্তা সহজ সরল জীবনে অভ্যস্ত। সময় কাটাতে পছন্দ করেন পরিবারের সঙ্গে। পছন্দ ক্রিকেট আর টেনিস। তাই খেলার সুযোগ মিললে হাতছাড়া করেন না কখনই।

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন : প্রিলিমিনারি ও রিটেনের জন্য আলাদা আলাদা না পড়ে একসঙ্গে সমন্বিত প্রস্তুতি নিতে হবে। যে বিষয়টা পড়তে হবে সেটা পুরোপুরি জানতে হবে। তাহলে যেভাবেই প্রশ্ন আসুক না কেন উত্তর দেয়া যাবে। নিজের দুর্বল পয়েন্টগুলো খুঁজে বের করতে হবে। বাবরবার অনুশীলন করতে হবে সেগুলো। প্রিলিমিনারির ক্ষেত্রে উত্তর দেয়ার সময় এলিমিনেশন পদ্ধতিটা অনেক বেশি কার্যকরী।

তানভীর বলেন, রিটেনের ক্ষেত্রে যত বেশি ডাটা, চার্ট ব্যবহার করা যায় প্রশ্নের উত্তর তত সমৃদ্ধ হয়। আর রিটেনে ভাল করার জন্য ঘড়ি ধরে বেশি বেশি লেখার অভ্যাস খুব কার্যকরী।

মৌখিক পরিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তানভীর বলেন, ভাইভায় সবচেয়ে জরুরি আই কন্টাক্ট। প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় এদিক সেদিক না তাকিয়ে সরাসরি প্রশ্নকর্তার দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়াটাই শ্রেয়। প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলেও কোন নেগেটিভ উত্তর না দিয়ে সেটাকেও পজিটিভলি উত্তর দিতে পরামর্শ দেন তানভীর। তবেই জীবনে সফলতা আসবে বলে মনে করেন তিনি।

 

ঢাকা, ১৪ এপ্রিল (ক্যাম্পাসলঅইভ২৪.কম)//জেএন


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ