মাহমুদ জুয়েল, ইবি : দিনমজুরের ঘরে জন্ম নিয়েছেন সুমন। মাকে হারিয়েছে অনেক আগে। বাবা মোহাম্মদ শহীদ শাহ'র অভাবের সংসার। তবে সুমনের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন। ছোটবেলায় মায়ের স্বপ্ন ছিল সুমন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে।
সেই স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলেছে সুমন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষা বর্ষের ভর্তিপরীক্ষায় ২৩তম মেধাস্থান পেয়েছে সুমন। কিন্তু অর্থের অভাবে রাবিতে ভর্তির স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসছে তার।
সুমনের প্রথম পচ্ছন্দ আইবিএ (ইনস্টিটিউট অব বিসনেজ এ্যাডমিনিস্ট্রেশন) ভর্তি হওয়ার। সেখানে চান্স পেয়েছেন তিনি। কিন্তু মাত্র ২০ হাজার টাকার অভাবে তার সেই স্বপ্ন অধরা থেকে যাচ্ছে।
গত ১৫ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। ভর্তি হতে হবে ৮ ডিসেম্বর এর মধ্যে। এত অল্প সময়ে এতগুলো টাকা সুমনের বাবার পক্ষে ব্যবস্থা করা একেবারেই অসম্ভব। বাবার ১৫ শতক জমি ছিল সেটাও অভাবের তাড়নায় অন্যের কাছে বর্গা দিয়েছেন সুমনের বাবা।
এখন সুমনের দিন কাটছে দোলাচলের মধ্যে। সারাদিন বন্ধু বড় ভাইদের কাছে ঘুরে ঘুরে রাতে ঘরে ফেরে এক রাস হতাশা নিয়ে। কোনভাবেই টাকার ব্যবস্থা করতে পারছে না সে।
তাহলে কী সুমন তার মৃত মায়ের স্বপ্ন সফল করতে পারবে না? সুমনদের সফলাতা গুলো মনে হয় সব সময় এমনই হয়। ধরা দিয়েও দেয় না।
সুমন জানালেন, তিনি যখন ক্লাস সিক্সে পড়েন তখন তার ছোট ভাইয়ের জন্ম। ওই দিন বিকেলেই ছোট ভাই মারা যায়। এর এক সপ্তাহ পরেই মা তাদেররকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেছেন পরকালে। টাকার অভাবে সুচিকিৎসা পায়নি সুমনের মা।
জানা গেছে, সুমনের এই ১৮ বছরের জীবনের প্রতিটি দিনই কেটেছে অভাব অনাটনের মধ্য দিয়ে। প্রতিরাতে সুমনকে চিন্তা করতে হয়েছে পরের দিন কিভাবে কাটবে। এতকিছুর মধ্যে মায়ের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে অন্যের বাড়িতে দিন মজুরের কাজ করে পড়ালেখা চালিয়ে এসেছে সুমন।
সুমন এসএসসিতে জিপিএ ৪.৭৫ এবং এইচএসসিতে পেয়েছেন জিপিএ ৫। কোন ভর্তি কোচিং না করেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বপ্নের আইবিএতে চান্স পেয়েছেন তিনি। শিক্ষা জীবনের প্রতি স্তরেই পেয়েছেন একেকজন মহৎ শিক্ষকের দেখা। স্কুলে হিসাব বিজ্ঞান পড়িয়েছেন কোচিংয়ের স্যারও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র শিমুল মজুমদার, কলেজে লাভলু স্যার আর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সময়ে ইংরেজি পড়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র বিপুলের কাছে। এবার সুমন তাকিয়ে আছেন সমাজের বিবেকবানদের দিকে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আইবিএতে পড়তে একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ বাদে চার বছরে আইবিএ প্রশাসনকে মোট ৯৩ হাজার টাকা দিতে হবে। এখানে মোট ৮ সেমিষ্টার। যার মধ্যে প্রথম ও ৮ম সেমিষ্টারে ১৪ হাজার এব বাকি ৬ সেমিষ্টারের প্রতিটিতে দিতে হবে ৯ হাজার টাকা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে যে খরচ সেটাও দিতে হবে।’
এই হিসেবে প্রাথমিকভাবে ভর্তি হতে পরিবহন, আবাসন, সেশন ফি এবং আইবিএ’র ১৪হাজার টাকা মিলিয়ে ২০হাজার টাকা দরকার সুমনের।
আগামী দিনের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে সুমনদের খুবই দরকার। তাদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের সমাজের বিত্তবান ও বিবেকবানদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।
সুমনের সাথে যোগাযোগের ঠিকানা মোঃ সুমন হোসেন, পিতা মোঃ শহীদ শাহ, গ্রাম পদমদি, পোষ্ট ত্রীবেনী, থানা শৈলকূপা, জেলা ঝিনাইদাহ, মোবাইল নম্বর : ০১৯৮৩১৬৮১০৮
ঢাকা, ২৭ নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: