Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

প্যারেন্টস ডে নেই, ভার্সিটির মৌমিতারা এভাবেই সফল!

প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বার ২০১৭, ২০:৩৪

মেয়েটাকে রোজ দেখি আর অবাক হই। ভাবতে থাকি মানুষ এভাবে বাঁচে কী করে ? ছোট্ট একটা শহরে ভাইকে নিয়ে থাকে সে। ভাইটা ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়ে। মেয়েটা পাবলিক ভার্সিটির ছাত্রী। অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। মফস্বল শহরে বাসা ভাড়া কম। নিজে টিউশনি করায়। ছোট ভাইটাও এই বয়সেই টিউশনি করে।

বাবা ছোট খাটো বিজনেস করে। মা স্কুলের টিচার। ক্লাস সেভেনে থাকতেই বাপ মায়ের বিচ্ছেদ দেখেছে মেয়েটা। মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায়। বাবা চলে যায় নতুন প্রেমিকার সাথে। মায়ের বয়স তখন আটাশ। আর বাবার চলে ৩৪ বছর। ভাইটাও তখন অনেক ছোট।

সন্তানরা সাধারনত মা ছাড়া থাকে না। কিন্তু এই দুই ভাই বোন মা ছাড়াই থাকে। বাবার সাথে তাদের ওরকম সম্পর্ক নেই। মাসে মাসে হয়তো কিছু টাকা পাঠায়। তাও নগন্য। মায়ের সাথে থাকো না কেন? -- একটা ভয়ঙ্কর প্রশ্ন।

মৌমিতা ( মেয়েটির নাম ) জানে এই প্রশ্নের উত্তর খুব বিশ্রী। কাউকে বলতে চায় না সে। মায়ের সাথে থাকো না কেন মৌমি? -আবার ছুড়ে দিই প্রশ্নটা। মা মায়ের মতো ভালো থাকুক। আমরা কেন তাকে বিরক্ত করবো?
জিজ্ঞেস করলাম, কিসের বিরক্ত?

মৌমি হেসে বলে, মায়ের একটা প্রেমিক আছে। আমরা থাকলে তাঁদের প্রেম জমে না। আমি বললাম, তুমি কিভাবে জানো?

মৌমি বলল, বাবার সাথে ডিভোর্স হওয়ার পর সেই ক্লাস টেন থেকেই বুঝতাম আমাদের বাসায় আরো কেউ আসে। বসার ঘর আর মায়ের বেডরুমে সিগারেটের গন্ধ। মায়ের ডিভোর্সের বয়স তখন ৩ বছর। আমি হয়তো অনেক কিছু বুঝি না। তবে কিছু কিছু বুঝি। বাবা আসার কোন কারণ নাই। সে তার প্রেমিকা নিয়ে প্রায়ই ব্যাংককে থাকে। দেশে এলেও মায়ের সাথে দেখা করে না।

এক পহেলা বৈশাখে আমি আর ভাই গিয়েছিলাম মেলায়। মা ও আমাদের সাথে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেন যেন যেতে চাননি। সেদিন রাতে বাসায় ফিরে বুঝলাম ঘরে কেউ এসেছিল। মায়ের বিছানার পাশে সিগারেট পোড়া। কিছু জিজ্ঞেস করিনি। মা যদি রাগ করে? ছোট ভাইটার হাপানীর সমস্যা। সিগারেটের গন্ধ পেলেই মাথা ব্যাথা করে। মাকে বলেছিলাম ঘরে একটা উদ্ভট গন্ধ। মা বলেছিল ওসব কিছু না।

আমার স্বাবলম্বী মাকে এরপর থেকে আর কিছুই জিজ্ঞেস করতাম না। তবে কখনো আমাদের টাকার কষ্টে রাখেনি। যখন যা চেয়েছি তাই পেয়েছি। অভাব ছিল না কখনই। টেস্ট পরীক্ষার ঠিক আগে আগে ক্লাস থেকে ফিরে একদিন আবিস্কার করলাম মায়ের বেডরুমে আরো কেউ আছেন। লোকটাকে আমি চিনি। আমার স্কুলেরই টিচার। মায়ের কলিগ।

ভাইটা বড় হচ্ছে। এসব দেখলে উল্টা পালটা কিছু করে ফেলতে পারে। সেই থেকে আলাদা হয়ে গেছি। মা একসাথে থাকার জন্য একটু বুঝিয়েছিল। কিন্তু আমার মন চায়নি। ছোট ভাইকে নিয়ে এসএসসির পর থেকেই আলাদা থাকি। ওরা ওদের মতো ভালো থাকুক।

মৌমিতাকে খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছিল, আচ্ছা তোমার সুইসাইড করতে ইচ্ছে করে না? মৌমি জানিয়েছিল মা তাদেরকে বেশ কয়েকবার ফিরিয়ে নিতে এসেছিল। কিন্তু মৌমি যায়নি। হয়তো তার মাও কারণটা বুঝতে পেরেছিল।

মৌমিকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার মা কী বিয়ে করে নিয়েছেন? তাহলে যাচ্ছো না কেন বাসায়?

মৌমি জানিয়েছিল, আসলে মা তাকে বিয়ে করে নিয়েছেন। কিন্তু যে অবস্থায় এই লোককে দেখে বাসা থেকে বের হয়ে এসেছিলাম তাতে করে এখন তাকে বাবা হিসাবে মেনে নেয়া খুব কষ্টের। মা আমাদেরকে জানালেই পারতো তার বিয়ে করা দরকার। আমরা মেনে নিতাম। এমন প্রেম করতে গেল কেন? মায়ের সাথে উনাকে যেভাবে দেখেছি তা এখনো হজম করতে পারিনি আমি।

মৌমিতার চোখে জল। আমি কিছু বললাম না। বুঝলাম মেয়েটা সাইকোলজিক্যালি ডাউন হয়ে গেছে। মায়ের ব্যাপারে সে অত্যন্ত নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে।

মৌমিকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার বাবার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নাই? স্মিত হেসে মৌমি বলল, জানেন আমার বাপ মায়ের ছিল ভালোবাসার বিয়ে। সেই ভালোবাসার ঘরে আমি ছিলাম তাদের প্রথম সন্তান। এক সময় বাবাকে ভাবতাম একজন অত্যাচারী। সারাক্ষণ মায়ের উপর নজরদারী করতো। মায়ের ফেসবুক মেসেজ নিয়ে প্রতিদিন ঝগড়া করতো বাবা। একদিন রাগ করে মোবাইলটাই ভেঙ্গে ফেলেছিল।

ছোট বয়স তখন আমার। বাবাকে গিয়ে বললাম মাকে তুমি এভাবে নির্যাতন করো কেন? বাবা সেদিন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন। এরপর থেকে আমার বাবা হয়ে গেলো উদাসীন। আমাদের তেমন খবর নিতো না। কখনো কখনো রাতেও বাসায় ফিরতো না। কেন ফিরতো না জানি না। তবে আমার মায়ের সেদিকে ভ্রূক্ষেপ ছিল না। সে ভালোই ছিল। ভালো ছিল না শুধু বাবাটা। আলাদা বিছানায় ঘুমাতো। কারণটা আমি জানতাম না। তবে এখন বুঝি। আমার মা হয়তো একজনে সন্তুষ্ট হওয়ার মানুষ ছিলেন না। বাবা কেন এতো নজরদারী করতো এবং মা যখন ডিভোর্স চাইলো তখন বাবা কেন টু শব্দটি করলো না তা এখন বুঝি আমি।

এরপরেও সমাজের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মৌমিতারা একাই পথে চলে। নিজের টাকা নিজেই উপার্জন করে। একটা ভাইকে মানুষ করে। শত শত লোকের ভীড়ে গা বাঁচিয়ে সম্মান নিয়ে চলা এই মৌমিতারা ঠিকই তাদের রাস্তায় একেকজন লিজেন্ড।

মৌমিতারা অনার্স করে, মাস্টার্স করে। তারা গবেষক হয়। বিসিএস ক্যাডার হয়। তাদের কোন প্যারেন্টস ডে বলে কিছু থাকে না। তাদের কোন প্রেমিক থাকে না। সমাজ একা একা পথচলা মেয়েটাকে খারাপ বলতে সময় নেয় না। কিন্তু পেছনের গল্পটা জানতে চায় না।

সবার গল্প হয়তো মৌমিতার মতো নয়। তবে একটা স্টোরি আছে। একটা ক্রাইসিস আছে। ব্রোকেন ফ্যামিলির ব্রোকেন ছেলেমেয়েগুলোর দিকে তাই বাঁকা দৃষ্টিতে না তাকিয়ে একটু বোঝার চেষ্টা করুন। কী পরিমাণ সংগ্রাম করে তারা একটা স্টেজে আসে। আল্লাহ মৌমিতাদের সহায় হউন...

গল্প : মৌমিতা

Arafat Abdullah ( মধ্যরাতের অশ্বারোহী )
University Of Chittagong

ঢাকা, ২৯ নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ