Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

সেদিন তুমি ফিরিয়ে দিয়েছিলে বলেই আজ আমি ব্যাংকার!

প্রকাশিত: ৫ এপ্রিল ২০১৭, ১৭:২৪

মীম : আজ দশ বছর পর হঠাৎ করে ওর সাথে দেখা। কতটা পাল্টে গেছে ও। মুখভর্তি দাঁড়ি, শুকিয়ে গেছে অনেকটাই। মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র রোজগারি পুরুষটি যেমন হয়, ওর অবস্থাটা ঠিক তেমন।

দশটা বছর... শেষ যেবার ওর সাথে দেখা হয়েছিল, স্পষ্ট মনে আছে সে দিনটির কথা। তিন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়েছিলাম আমি, দ্রুত পায়ে আমার দিকে এসে বলল-

তৃধা তোমার সাথে জরুরী কথা আছে।
তুমিতো আমার পরিবারের কথা জানোই। আমি এখনও বেকার, তোমাকে বিয়ে করে কি খাওয়াবো বলো? একটা চাকরি যদি জুটিয়েও নেই, তবে একজনের রোজগারে কি চলবে সংসার? আমার ভাইবোনের দায়িত্ব, মা-বাবা আছেন, তার উপর তুমি?"

-আমিও চাকরি করবো অনিক। দুজন মিলে রোজগার করবো।

-তুমি চাকরি করবে? শোন তৃধা, এখনকার যুগে চাকরি পাওয়া এতো সোজা নয়। কী আলাদা যোগ্যতা আছে তোমার? সিজিপিএটাওতো তুলতে পারছো না। এসব চিন্তা বাদ দাও। তুমি মা বাবার পছন্দের কোন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারকে বিয়ে করো। সারাজীবন আরামে কাটিয়ে দিতে পারবে। আর আমার সাথে সংসার করতে গেলে কষ্টই পেতে হবে।

-তুমি আমার পাশে দাঁড়ালে সবই সম্ভব, অনিক। আমি সব কষ্ট মেনে নিব।

-তা হয় না, তৃধা। ভালো থেকো।

হরবরিয়ে বলে গেল কথাগুলো। আমার কিচ্ছু বলার ছিল না। অনিক চলে যাচ্ছিল। অামার কিনে দেওয়া নীল টিশার্টে অনিককে রাজপুত্রের মতো লাগছিল। আমি অলপক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম।

দশটা বছর পর আজও সেই অলপক নয়নে দেখছিলাম অনিককে। তবে সেদিন আমাকে ঘিরে ছিল অদ্ভুত মুগ্ধতা, আর আজ শুধুই করুণা।

দশ বছর আগে যখন অনিক আমাকে একা ফেলে চলে গিয়েছিল, আমি প্রচন্ড যোগ্যতাহীনতায় ভুগছিলাম। অনিক নয়, আমার যোগ্যতা, অপারগতা আমার ভালবাসাকে মেরে ফেলেছিল।

মানতে পারছিলাম না সেটা। ভালবাসাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য হলেও নিজের পরিচয়টা খুব দরকার ছিল। আমি পরাশ্রয়ী হয়ে গিয়েছিলাম ওর জীবনে। তাই নিজের পরিচয় তৈরি করেই ওর সামনে দাঁড়াবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম।

পড়াশোনা, টিউশনিতে ব্যস্ত রাখতাম নিজেকে। তার মাঝেও মনটা মাঝে মাঝে প্রশ্ন করতো আমায়, অনিক কেমন আছে। মনকে দমিয়ে রেখে বলতাম আমি ভালো আছি সেটাই ঢের।

আজ আমি বেসরকারি একটি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার। চাকরিটা পেয়ে যখন যোগাযোগ করতে চাইলাম অনিকের সাথে, জানতে পারলাম ও একটা এনজিওতে আছে। বিয়েও করেছে সম্প্রতি।

ওর সাথে দেখা করার ইচ্ছাটাই মরে গেল। কার জন্য এতো কষ্ট করলাম। যকে পাওয়ার আশায় এতো ত্যাগ, সে কিনা আমার জন্য অপেক্ষার প্রহরটুকু গুনতে পারল না!

ঘৃণা আসছিল ওর প্রতি। পরে অবশ্য বুঝেছি অনিক যদি আমার জীবন থেকে চলে না যেত তাহলে হয়তো জীবনটা এতো গোছানো হতো না।

মা-বাবার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করেছি চার বছর হল। অর্থ, যশ, ভালবাসা জীবনে সবই আছে আমার। কিন্তু সুখে আছি কি? তার উত্তর আজ পেয়ে গেছি। যে একদিন আমাকে ফেলে চলে গিয়েছিল, আজকে যখন তার চোখের সামনে এসে দাঁড়ালাম, সে দৃষ্টি সরিয়ে নিল।

হয়তো বিবেক তার মনে কড়া নেড়ে বলছে, "এসব না করলেও পারতি"।

দশবছর আগে যে আমার দিকে আঙুল তুলেছিল, আজ সে নিজেই মাথা নিচু করে আমার সামনে থেকে সরে গেল।
প্রকৃত ভালোবাসাই পারে মানুষকে মহৎ করতে। আমার ভালোবাসা আজ জয়ী, আর আমি আজ পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।


[তৃধার ডায়েরী থেকে নেওয়া]


মীম
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়


ঢাকা, ০৫ এপ্রিল (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেএন


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ