মোস্তাকিম ফারুকী: চলছে লকডাউন, কঠোর বিধিনিষেধ, না চলছে ঈদে বাড়ি ফেরার মেলা। তেমনি একটি ঘটনা এটি। সবাই বাড়ি চলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছিলো শুধু আমিই আটকে আছি। কি করে বাড়ি যাবো কিছুই বুজতে পারছিলাম না। এই বুঝি করোনা। এই বুঝি মৃত্যু। তবুও সাহস করে সেদিন বেড়িয়ে পড়লাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। গুলিস্তান, সায়দাবাদ কোথাও যেনো মানুষের কমতি নেই।
গত ৫ ই এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের মধ্যে ৫ বার ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা যাতায়াত হয়েছে। প্রতিবারই কমপক্ষে ১০০০/১২০০ টাকা লেগেছে মাইক্রোবাস এবং প্রাইভেটকারে।
প্রথমবার যখন আসি তখন ভেবেছিলাম দুদিন পর তো লকডাউন ছেড়েই দিবে। তখন ফিরে আসব স্বাভাবিক ভাড়া দিয়ে। চলে যাই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে। কিন্তু লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে দিল। আর ফেরা হল না স্বাভাবিক ভাড়ায়। গত ৫ বারের যাতায়াতে একই ঘটনা ঘটেছে আমার সাথে সেজন্য একইভাবে অতিরিক্ত ভাড়ায় যাতায়াত করতে হয়েছে।
এসব অতিরিক্ত ভাড়ায় যাতায়াত করা, আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়া। কেননা আজমপুর স্টেশন হওয়ার পর গত ৪/৫ বছরে কোন দিন বাসে যাতায়াত করা হয় নি বললেই চলে। আর ট্রেনে শেষ কখন টিকেট কেটে যাতায়াত করেছি, তাও গভীর চিন্তার বিষয়। কাউন্টারে টিকেট পাওয়া যায় না, আর ব্লেকে অতিরিক্ত ৩০০/৪০০ টাকা দিয়ে টিকিট কাটার পাব্লিক আমি না। কেননা ট্রেনের ভেতরের কম্পাউন্ডারদের সাথে আমার একটা সখ্যতা ছিল, সেজন্য টিকিট ছাড়ায় নামে মাত্র চা নাস্তার খরচ দিলেই, এসি কম্পার্টমেন্টে মিলে যেত সীট। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সুন্দর ভ্রমণ হইত এবং একই পদ্ধতিতে চলে আসছি বিগত কয়েক বছরের ঢাকা টু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভ্রমণ।
সেই পদ্ধতির বিঘ্নয় ঘটিয়ে হঠাৎ যখন ৩ জনের সীটে ৪ জন বসে আসতে হয়েছে এবং ২০০ টাকার ভাড়া ৮০০ দিতে হয়েছে তখন ত আমার চোখ কপালে উঠার ই কথা তাও মেনে নিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম পরের বার ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সেই পরের বারের কথা চিন্তা করতে করতে ৫ বার হয়ে গেল, ঠিক আর হইল না।
৬ষ্ঠ বারের মাথায় ভাবনার উদ্রেক ঘটল, চিন্তা করে পেলাম "খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়ে গেছে।"
সিদ্ধান্ত নিলাম, এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। যেই ভাবনা সেই কাজ... কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে অজানা গন্তব্যে রওনা হইলাম। মনে মনে অনুপ্রেরণা, "আগের দিনে ত মানুষ হেটে হজ্জ করতে যেত।" কিন্তু বাসা থেকে বের হয়েই ক্যাম্পাসের ছোট ভাই নাঈমুরের সাথে সাক্ষাৎ। সেও গতানুগতিক পদ্ধতিতে, কমলাপুর থেকে গাড়ি করে ৮০০ ভাড়া দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাবে বলে নিশ্চিত করেছে। তার বক্তব্য শুনেই বাধা দিলাম, ফিরিয়ে নিলাম তার যাত্রাপথ।
সঙ্গী করে নিলাম আমার পথ চলার। কমলাপুর না গিয়ে, ৪০ টাকা রিকাশা দিয়ে চলে গেলাম যাত্রাবাড়ী। সেখানে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করার পরই পেয়ে গেলাম গাউছিয়া যাওয়ার বাস। কন্ট্রাকদারের সাথে চাপাচাপি করে, আগের স্বাভাবিক ভাড়া দিয়েই যাওয়া সম্ভব হইল গাউছিয়া️। গাউছিয়া থেকে জগন্নাথপুর, সেখান থেকে ভৈরব। ভৈরব থেকে আশুগঞ্জ, আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড, সেখান থেকে কাউতলি।
আর এই পথ আসতে আসতে ব্যবহার করেছি, রিকশা, সিএনজি, পিকাপ, ট্রাক, বাইক এবং বাস। প্রতিটি যানবাহনে চলার অভিজ্ঞতা ভিন্ন রকম এবং একেকটি যানবাহনে তৈরি হয়েছে একেকটা নতুন গল্প
অবশেষে ফিরে আসতে পেরেছি বাড়িতে এবং আগের স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে অনেক কম খরচে।
২০০ টাকার ভাড়া ১০০০ টাকা চাওয়ার পরও যখন গাড়িটি ভরে যেতে মিনিট খানেক সময় লাগল না, সেই সময়ে ১৬০ টাকায় আসতে পারার আনন্দটা অন্যরকম।
গল্পের শিক্ষা: পথে হাটলে, পথের সন্ধান পাওয়া যায়।
লেখক: মোস্তাকিম ফারুকী, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা, ১১ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআইএস//এমজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: