Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

আমি শুধু ওকে না, ওর বয়ফ্রেন্ডকেও ভালবাসি

প্রকাশিত: ৮ অক্টোবার ২০১৮, ০৬:৫৬

রাশেদ রাজন: ২০১৭ সালের এপ্রিলের ২ তারিখ সম্ভবত প্রথম দেখছিলাম। পরিবহন মার্কেটে আমি একটা শীট ফটোকপি করতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ করে নিচের দিকে তাকিতেই একটা মেয়ের পায়ের দিকে চোখ পড়েছে। যা দেখলাম, মেয়েটার পা অনেক সুন্দর।

তারপর আস্তে করে চোখটা ফিরিয়ে হাতের দিকে তাকালাম, দেখে মনে হলো ওর হাতটা আরো সুন্দর। এরপর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি অস্থির হাসি, আর চুলগুলা স্টাইল করে কাটা। দেখতে স্লিম। মানে আমি যেমন মেয়ে চাই, আমার মন যেমন মেয়ে চায় ঠিক তেমন। তারপর আর কি করার! ওইখান থেকে চলে আসলাম।

আমি অবশ্য একবার কোন মেয়েকে দেখলে দ্বিতীয় বার তাকে সহজে চিনতে পারি না। কিন্তু পরে ওই মেয়েকে দেখে চিনতে খুব একটা সমস্যা হয় নি। পরের দিন দেখলাম, তারপরের দিন কথা বলতে গেলাম। মেয়েটা মেইন গেট দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিল। আর আমি মেয়েটির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম।

ওর পাশে গিয়ে আমি বললাম, 'এক্সকিউজ মি' আপনার সাথে কি একটু কথা বলতে পারি? তো সে কি করল, অন্যদিকে তাকিয়ে 'বিরক্তিকর' একটা ভাব নিয়ে বলল "এখন কথা বলতে ভালো লাগছে না পরে কথা বলব" আমার মনে হল যেন সে এমন একটা ভাব দেখালো যেন আমি তার খুব পরিচিত একজন।

ওকে কোন সমস্যা নেই। স্বাভাবিক ভাবেই পরেরদিনের জন্য অপেক্ষায় রইলাম। পরদিন দেখলাম মেয়েটা বন্ধুদের সাথে বসে আছে। আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম “আমি কিছু কথা বলতে চাই”। কথাটা শুনে ও কোন পাত্তাই দিল না। অন্য দিকে তাকিয়ে রইল। আমি কিছু মনে না করে বললাম, জাস্ট এক মিনিট সময় নিব, তার বেশি সময় নিব না।

আমার কথা শুনে কোন উত্তর না দিয়ে উঠে চলে যাচ্ছিল। বিষয়টা একেবারেই অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে এই ভেবে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম, আপনারা বসেন, আমিই চলে যাচ্ছি। তারপর থেকে ওভাবে আর কখনো কথা বলার সু্যোগ দেয়নি সে।

পরে একদিন ওর ফ্রেন্ড কে দিয়ে নিষেধ করাল। ওর ফ্রেন্ড এসে বলল ‘‘ভাইয়া আমি ওর বয়ফ্রেন্ড আমার গার্লফ্রেন্ড কে ডিস্টার্ব করবেন না’’। আমি বললাম ‘‘আপনার গার্লফ্রেন্ড হলে তো আমি কখনোই ডিস্টার্ব করব না। আমি অন্যের গার্লফ্রেন্ডকে কেন ডিস্টার্ব করতে যাব’’? তারপর অনেক দিন যাই নি।

হঠাৎ একদিন ইনফরমেশন নিয়ে দেখলাম ছেলেটা আসলে ওর বয়ফ্রেন্ড কি না? বুঝলাম সে আমাকে মিথ্যা বলেছে। সে আমাকে নিষেধ করে দিলেই পারতো। আমি ভাবলাম যেহেতু সে মিথ্যা বলেছে সেহেতু আমি আবার তার কাছে যেতেই পারি। কথা বলার সুযোগ না দিলেও ঘুরতেই থাকলাম।

৩ মাস পর তাকে শহীদুল্লা কলা ভবনের তিন তলায় দেখে আমি সেখানে গেলাম। আমাকে দেখেই সেই ঝাড়ি দিতে শুরু করল। তবে ঝাড়ির মধ্যে সে শুধু আমাকে একটাই প্রশ্ন করতো ‘‘আপনার সমস্যা কী’’? কিন্তু সমস্যাটা কখনো, কোনদিন শুনেনি। আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিল না। কথা গুলে বলেই চলে গেল সেখান থেকে।

কখনো কখনো ভাবতাম! সে যদি আমাকে ঝাড়ি না দিয়ে শুধু একবার বলতো, “আপনি আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না বা আপনাকে আমার পছন্দ হয় না।” আমি আর কোনদিনই যাইতাম না তার কাছে কিন্তু উল্টা ঝাড়ি দিয়ে আমাকে বার বার উস্কানি দিতো তাকে নিয়ে ভাবতে। আর সেই জন্যই নতুনভাবে উজ্জীবিত হয়ে যাওয়া শুরু করতাম এখনো করি।

এভাবে আরো একমাস-দেড়মাস পর আরেকদিন সে বসেছিল ডিন'স এর পিছনে। আমি কথা বলতে গেলাম। একটু রাগান্বিতভাব তার সামনে গেলাম যে আজ আমি ওকে ঝাড়ি দিব। কিন্তু বরাবরের মত আমাকেই উল্টো ঝাড়িটা হজম করতে হলো। শুধু বলেছিলাম আজ কোন সিনক্রিয়েট করবা না। শুধু এইটুকুই বলার সুযোগটা হয়েছিল বাঁকিটা আগের মতই।

এর বেশি আমি কোনদিন তাকে কিছু বলতে পারিনি। ওর সামনে গেলে হা করলে মুখ দিয়ে শুধু নিশ্বাসই বের হয়। কথা বের হয় না। কিন্তু এটা সে বুঝতেই চাই না। তবে সেই কষ্টটা এবার একটু বেশি পেয়েছিলাম। প্রথম বারের মত সে আমাকে তুই সম্বধন করেছিল!!

আমার নিজেকে খুব ছোট মনে হল। আমার এতোই খারাপ লাগল যে একটা মেয়ে আমার সাথে এক মিনিট কথাও বলল না। রাগ করে এসে ঘুমের কয়েকটা ট্যাবলেট একসাথে খেয়ে তিনদিন ঘুমিয়ে ছিলাম। কথা গুলো বলতেও খুব লজ্জা লাগে। তিনদিন পরে আমার ফ্রেন্ড এসে আমাকে রুম থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে, রান্না করে খাইয়েছিল।

তারপর মাথায় ভুত চাপল একটা শর্টফ্লিম বানিয়ে। শর্টফ্লিম দিয়েই তাকে প্রপোজ করব। এরপর একটা ফ্লিমের স্টোরি লিখলাম। সুন্দর ভাবে গল্প করলাম। আর আমার বন্ধু, ছোটভাই সবাইে এঘটনা জানে। পিছনে মিছিল মিটিং প্রতিদিন হতেই থাকে। আমাদের টপিকস একটাই ও‘মেয়ে। সবাই ও‘কে ভাবী হিসেবেই জানে।

এর কয়েকদিন করেই জানুয়ারির এক তারিখ ইতিমধ্যে আবার "হ্যাপী নিউ ইয়ার" এই কখাটুকু বলে তাকে উইশ করবো বলে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। এতকিছু প্রস্তুতি নেয়ার পরেও সেই দিনটিতে তার পেছনে প্রায় দেড়ঘন্টা ঘুড়েছি। এর মাঝে অন্তত ৫-৭ গ্লাস পানি খেয়েছি। কথাটা একটু লাউডলি বলবো তাই কিন্তু শুধু গলা শুকিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত লাইব্রেরির সামনে তাকে বললাম হ্যাপী নিউ ইয়ার তবে পরে বুঝলাম সে শুনতে পায়নি ভয়েজটা এতো আসতে বের হয়েছিল যে শুনতে না পাওয়ারিই কথা। সেই মুহূর্তে আমার দিকে তার চোখ না পড়তেই আমি দ্রুত চলে আসলাম।

হ্যাপী নিউ ইয়ার বলার পর কিছুদিন কম কম গেলাম। ভাবলাম তার যেহেতু আগ্রহ নাই আর কত যাব। মনতো আর মানে না। মাঝে মাঝে যাই।

এভাবেই চলছিল এর দুই-তিন মাস পরে একদিন দেখছি 'ও' কাজলায় যাবে কিন্তু শহীদুল্লাহ থেকে বের হয়ে ডিন'স এর পিছন দিয়ে সিরাজীর সামনে দিয়ে শেখ রাসেল স্কুল মাঠের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আমি ভাবলাম সে কাজলায় যদি যাবে এদিক দিয়ে আসার দরকার কী?

এদিক দিয়ে যাচ্ছে তার মানে সে আমার সাথে কথা বলবে সে। এমনটি ভেবে একটু খুশি মুডে তার পিছন পিছন যাওয়া শুরু করলাম। যে আজকে নিশ্চিত আমার সাথে খুব ভালোভাবে কথা বলবে সে। কিন্তু সেদিনো তার ব্যতিক্রম ঘটেনি আর একটুর জন্য থাপ্পড়ের হাত থেকে বেঁচে গেছি। অবশ্য থাপ্পড় খাওয়ার মানসিক প্রস্তুতি প্রায় ৮-১০ মাস আগে থেকে ছিল আমার।

এভাবেই চলছে! তাকে দেখার পর থেকে আজ দ্বিতীয় বারের মত জন্মদিনের উইশ করতে পারছি। গত বছরের বার্থডে তে সব বন্ধু ছোটভাই মিলে ৫০ জনকে নিয়ে পার্টি করে উইশ করেছিলাম। তবে এবার টাকা না থাকায় টেনেটুনে ২৫ জনকে ট্রিট দিয়ে এখন কেক কাটবো। ফানুস উড়াবো। 'ও' জানবে কিনা সেটাও জানি না।

ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়েছিলাম। প্রথমেই দুইবার ডিলিট করে দিয়েছিল। ৩ বারের বেলায় ব্লক খেলাম। তারপর আর দুইটা তিনটা আইডি থেকে রিকুয়েস্ট দিলাম। ম্যাসেজ করতেই ব্লক। এরপর থেকেই অপরিচিত আইডি থেকে রিকুয়েস্ট দিলেই সে ব্লক মারে।

ফোন নাম্বার আছে। একটু আগেই ফোন দিয়েছিলাম। কথা বলার সময় তার নাম উচ্চারণ করতেই সে বলে ওঠলো “হ্যাঁ আমি। আপনি কে?” আমি বললাম যে আমি কেউ না। নাম্বার ঠিক আছে কিনা চেক করার জন্য ফোন দিয়েছিলাম।

এখনো হ্যাপী বার্থডে বলা হয় নি এখনো। ম্যাসেজ হ্যাপী বার্থডে লিখে পাঠাচ্ছি এই মুহূর্তে।

ওর বাসার সামনে কত দিন যে বসে থেকেছি। আমাকে যদি কেউ বাজারে যেতে বলে একটাই শর্ত যে ওর বাসার সামনে দিয়ে যেতে হবে। আসলে আমি ওকে ভালোবাসি এটাই আমার ফিলিংস। সে আমাকে ভালোবাসুক না বাসুক সেটা একদমই ওর পার্সোনাল ব্যাপার। ও অন্য ছেলেকেও ভালোবাসতে পারে। আমি ওকে ভালোবাসি, এর ফ্যামিলি কে ভালোবাসি, ওর ভাল-খারাপ কেও ভালোবাসি। ওর বয়ফ্রেন্ডকেও ভালবাসি। ওর সবকিছুই ভালোবাসি।

আমি চাই যে আমি ভালোবাসি এর পরিবর্তে সেও আমাকে ভালোবাসুক। এটা একটা বিজনেসের মত হয়ে যায়। আমার ভালবাসা তো বিজনেস না। বাস্তব গল্পটি আমার পরিচিত এক বড় ভাইয়ের জীবন থেকে নেয়া। সে এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চর্তুথ বর্ষের শিক্ষার্থী কাফি খন্দকার।

 

 

ঢাকা, ০৭ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ