Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ১৬ই মে ২০২৪, ১লা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

বয়ফ্রেন্ড বনাম গার্লফ্রেন্ড, বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রেকআপের প্রতিশোধের গল্প

প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০১৮, ১৯:০৬

আরাফাত আবদুল্লাহ : আমার প্রথম সম্পর্কটা ছিল তিশার সঙ্গে। সেই ফাস্ট ইয়ার থেকে শুরু। টানা চার বছরের সম্পর্কের পর প্রতিদান হিসেবে পেলাম বিয়ের কার্ড। এক ব্যাবসায়ি ছেলেকে বিয়ে করতে যাচ্ছে সে। তাহলে আমার কী হবে? জিজ্ঞেস করলাম তিশাকে।

তিশা আমাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলল, দেখো বিয়ে করে যদি বউকে খাওয়াতে না পারো তাহলে বউতো তোমার কাছে থাকবে না? এর চেয়ে ভালো তুমি ক্যারিয়ারের দিকে নজর দাও। অনেক ভালো মেয়ে পাবা। you are a good boy... বলে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে চলে গেল তিশা। আমি বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। কোন উত্তর নেই আমার কাছে।

এর ঠিক ৩ বছর পরের কথা। একটা বেসরকারি ব্যাংকে মোটা বেতনে চাকরি করি। ব্যাচেলর মানুষ। তিশা চলে যাওয়ার পর আরো অনেকের সঙ্গেই সম্পর্কে জড়িয়েছি। বাবা নেই আমার। ছোট বেলায়ই হারিয়েছি। যখন ভার্সিটিতে উঠলাম তখন মারা গেলেন মা। খুব একটা পিছুটান নেই আমার। তাই টাকা উড়াতাম নিজের মতোই। উশৃঙ্খল ছিলাম না। তবে নারীদের প্রতি আমার টান ছিল। তিশা চলে যাওয়ার পর অভাবটা বুঝতে পারলাম।
ও চলে যাওয়ার দুই মাসের মাথায় আমার চেয়ে ১ বছরের বড় এক সিনিয়র আপুর সঙ্গে প্রেম করতে শুরু করলাম । ১৫ দিনের মাথায় রুমডেট আর ১ মাসের মাথায় কক্সবাজার ট্যুর। সময়টা বেশ ভালোই উপভোগ করছিলাম।

একদিন মেয়েটা জানালো আমাকে বিয়ে করতে চায় সে। কিন্তু আমারতো বিয়েতে আগ্রহ নেই। যোগাযোগ বন্ধ করে দিলাম। এরপর তার সঙ্গে আর দেখা হয়নি। বিসিএস কোচিংয়ের সময় এক মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হলো। ও আর ওর বয়ফ্রেন্ড এক সাথেই ক্লাস করে। কেমন করে যেন এই মেয়েটার সাথেও ঘনিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলাম। ওর প্রেমিককে ফাঁকি দিয়েই আমরা সম্পর্কে জড়িয়েছিলাম। রিলেশন ছিল ২ মাস। শুধু রিকশায় ঘুরতে পেরেছি। এর বেশি কিছু করতে পারিনি।

ঢাকা শহরের মেসে থাকতাম। ছন্নছাড়া জীবন। ঈদে বাড়িতে যাওয়া হতো না। থাকতাম মেসেই। এই সময় পরিচিত হয়েছিলাম পাশের বিল্ডিং এর এক মহিলার সাথে। মহিলার স্বামী রোড এক্সিডেন্টে প্যারালাইজড হয়ে গেছে। ঘরে আছে ৩ বছরের ছেলে। মহিলা একটা এনজিওতে চাকরি করে। পরিচয় সেই সুবাদেই।

সম্পর্কটা ছিল প্রায় দেড় বছর। রাঙ্গামাটি আর জাফলং তার সঙ্গে ট্যুর করেছি। ফুর্তি করে সময় কেটেছে। সম্পর্কটা কিভাবে দেড় বছর হয়ে গেলো বুঝতে পারিনি। আর কতো? একসময় এখানেও অরুচি ধরলো। সরে এলাম আমি।

ইতোমধ্যে ব্যাংকের চাকরিটা কনফার্ম হয়ে গেছে। আমার এখন আর বিসিএস দিতে ইচ্ছে করে না। একটা জায়গায় থিতু হবো ভেবেই ব্যাংকের চাকরিটা ধরলাম। গ্রাহকদের নিয়ে কাজ করতে করতে চোখ আটকে গেলো ৩৫ বছর বয়সী এক মহিলার দিকে। যথারীতি আমার প্রেমলীলা শুরু। পটাতে সময় লেগেছে। মহিলা খুব ভীতু। শুনেছি তাদের বিয়ে নাকি ভালোবাসার। মহিলার স্বামী সামরিক বাহিনীতে আছেন।

প্রথম যেদিন তার বাসায় গেলাম সেদিন সে বলেছিল, আমি এবং তার স্বামী দুই জনকেই সে সমানভাবে ভালোবাসে। এসবে আমার কিছু যায় আসে না। ভালবাসলেই কী আর না বাসলেই কী? আমার যা পাওয়ার ইচ্ছা সেটা পেলেই হয়। সম্পর্কটা চালিয়ে নিয়েছিলাম ৩ মাস। এরপর একদিন মহিলার স্বামী ব্যাপারটা টের পেয়ে যায়। আমি সরে আসি।
ভালোই কাটছিল দিন।

আজকে একজনতো অন্যদিন নতুন কেউ। টাকা আর মেয়ে সবই আছে আমার। এক কর্মব্যাস্ত দিনে আমার ডেস্কে আবিস্কার করলাম খুব পরিচিত একটা মুখ। এই চেহারা আমার থেকে ভালো কেউ চেনে না। তিশা! আমার প্রাক্তন প্রেমিকা। আমার চোখ ঠাণ্ডা। সেখানে উষ্ণতর অভ্যার্থনা নেই। ব্যাপারটা বোধহয় বুঝতে পারলো তিশা। আমি কিছু বলার আগেই জানালো, দেখ ওই দিনের কথাটা ভুলে যাও। আসলে বাবা বিয়ে ঠিক না করলে আমি যেতাম না।

মাথার ভেতরের আগুনটা গলা পর্যন্ত নেমে এলো। সেই আগুনটা সামাল দিয়ে খুব নরমভাবে বললাম, বাদ দাওতো। ওসব কেউ মনে রাখে নাকি? এখন বলো তুমি কেমন আছো? ব্যাংকে কি মনে করে? কোন সাহায্য করতে পারি?

জানলাম তিশার স্বামী ব্যাবসায় লস খেয়েছে। এখন ধার দেনা করে চলে। সেই লোনের টাকা নিতেই সে ব্যাংকে এসেছে। অন্যদিন হলে তাকে কয়েকঘন্টা বসে থাকতে হতো। আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে তার লোনের টাকা আগে পাইয়ে দিলাম। গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে দেয়ার ব্যাবস্থা করলাম।

সেই থেকে আমাদের যোগাযোগটা আবার শুরু। তিশা নিকেতনে থাকে। আমার বাসা থেকে খুব বেশি দূরে নয়। অথচ এতোদিন তার সঙ্গে দেখা হয়নি। আমিতো ভেবেছিলাম ব্যাবসায়ী ছেলেটাকে নিয়ে বিদেশেই স্যাটেল হবে সে। কিন্তু বিধিবাম। তেমন কিছু হয়নি। দুই বছরের একটা মেয়ে আছে তার। টাকার অভাবটা না থাকলে বলা যেতো ছিমছাম সংসার।

কথা হতো প্রায়ই। তিশাই আমাকে কল দিতো। একদিন রেস্টুরেন্টে বসে খেয়েছি তার সঙ্গে। সঙ্গে ছিল তার দুই বছরের মেয়েটা। রিলেশনে থাকার সময় তিশার খুব কেয়ার নিতাম আমি। এখনও নিই। হয়তো সেই কারণেই একদিন তিশা বলল আমাদের সম্পর্কটা আবারও শুরু করতে চায় সে। আকারে ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করলো সে আমাকে এখনো ভালোবাসে।

সুযোগটা নিলাম আমি। প্রেম নাকি অন্ধ হয়। কিন্তু আমাদের প্রেম আগুনের মতো। সপ্তাহান্তেই আমার ডাক পড়তো ওর বাসায়। সেখানেই প্রেম করতাম আমরা। ৬ মাস পর কক্সবাজার ট্যুরে গিয়েছিলাম তিশার সাথে। ওর মধ্যে কোন সংকোচ দেখিনি আমি। ভাবেসাবে বুঝিয়ে দিতো আমরাতো একজন আরেকজনকে ভালোইবাসি... তাই না?
কক্সবাজারের হোটেল রুমেই জেনেছি তিশা আগের থেকে মোটা হয়ে গেছে। শরীরে পুরু মাংশের আস্তর এসেছে। সেই মাংসের পরতে পরতে আমি প্রেম বিলিয়েছি। সুযোগ যেহেতু পেয়েছি উসুল করে নিতে সমস্যা কোথায়? নাহ কোন সমস্যা নেই।

এক বছর পর্যন্ত সম্পর্কটা চালালাম। একদিন তিশাকে ডেকে নিলাম ক্যাম্পাসে। সেই পুরোনো জায়গায় যেখানে আমার সাথে ওর শেষ দেখা হয়েছিল। কথায় কথায় ওকে বললাম, দেখ তুমি অনেক ভালো একটা মেয়ে। স্বামীর সাথে চিট করা তোমার মানায় না।ঘরে ৩ বছরের মেয়েও আছে তোমার। আমাদের কথা জেনে গেলে তারা কি ভাববে বলো দেখি? সম্পর্কটা এখানেই শেষ করে ফেলা উচিত। তুমি নিজের সংসারের দিকে মন দাও। কথাগুলো বলেই বাকা একটা হাসি দিলাম।

তিশা নির্বাক। আমাকে বোঝাতে চাইলো কতোটা ভালোবাসে ও আমাকে। আমি নির্লিপ্ত। ইতোমধ্যে আমাদের দুজনের অনেকগুলো ঘনিষ্ঠ ছবি তিশার হাজব্যান্ডের বেনামে পাঠিয়ে দিয়েছি আমি। ওর কপালে আর সংসার নেই।

আমারতো ভালোবাসা দরকার নেই। ভালোবাসা মরে গেছে সেই কবেই!
ফিরে আসছি আমি। তিশা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখে জল। ভালোতো আমিও বেসেছিলাম। তাহলে আমাকেই কেন বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হবে?
নাহ... আমি আর বোকা নই ।
একদম নই

[গল্প – ক্রিমিনাল]

Arafat Abdullah (মধ্যরাতের অশ্বারোহী)
University Of Chittagong

ঢাকা, ১৯ জুন (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেকে


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ