Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
ভয়ঙ্কর সমুদ্রযাত্রা

সুস্থ হলেও ক্রিকেটাররা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে খেলা

প্রকাশিত: ২ জুলাই ২০২২, ১৯:৫০

ভয়ঙ্কর সমুদ্রযাত্রা

লাইভ ডেস্ক: সুস্থ হলেও ক্রিকেটাররা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে খেলা। তাদের অনেকেরই মন ভাল নেই। কয়েকদিন আগেই শেষ হয়েছে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। সাদা পোশাকে বিধ্বস্ত হওয়ার পর এবার রঙিন পোশাকে জেগে ওঠার পালা। তবে তার আগেই প্রমত্তা আটলান্টিকে ভয়ঙ্কর এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন টাইগাররা।

জানাগেছেন সেন্ট লুসিয়া থেকে মার্টিনিক হয়ে ডমিনিকা যাওয়ার পথে এমনই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে টাইগারদের। যাত্রাপথে আটলান্টিক মহাসাগরে শুরুতে ক্রিকেটাররা রোমাঞ্চিত থাকলেও পরে অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন ‘মোশন সিকনেসে’।
তবে ডমিনিকা আসার পথে যারা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, সবাই এখন ভালো আছেন।

দলের লজিস্টিক ম্যানেজার নাফিস ইকবাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সবাই এখন সুস্থ। কারও কোনো সমস্যা নেই। আমি স্থানীয় ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেছি। ওনারা বলেছেন, এ রকম সমস্যা অনেকের হতে পারে, তবে সেটা সাধারণত ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যে কেটে যায়।’
ডমিনিকায় বাংলাদেশ দল আছে রাজধানী রোসো থেকে সড়কপথে ঘণ্টাখানেক দূরত্বের ক্যাবরিটস রিসোর্টে।

আর টি-টোয়েন্টির ভেন্যু উইন্ডসর পার্ক রোসোতে। আজ দুপুরে সেখানেই অনুশীলন করার কথা বাংলাদেশ দলের। কিন্তু আটলান্টিকে সৃষ্ট সাইক্লোনের প্রভাবে এখানেও কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি। বৃষ্টি হয়েছে কাল রাত এবং আজ সকালেও। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী বৃষ্টি থাকার কথা কালও।

উইন্ডসর পার্কে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচটা তাই এই মুহূর্তে একটু অনিশ্চিতই বলা যায়। আর বৃষ্টি যদি শেষ পর্যন্ত বাধাই হয়ে দাঁড়ায়, সেটি হবে ডমিনিকাবাসীর জন্য চরম দুর্ভাগ্যের। ২০১৭ সালে প্রলয়ংকরী হারিকেন ‘মারিয়া’ লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল ডমিনিকার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু উইন্ডসর পার্ককেও।

এরপর গত পাঁচ বছরে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ হতে পারেনি এই মাঠে। প্রায় ৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে সংস্কার করা উইন্ডসর পার্কে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরার কথা বাংলাদেশ দলের দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়েই। ডমিনিকায় সে কারণেই রোমাঞ্চটা বেশি। উইন্ডসর পার্কে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়েছে ২০১৭ সালে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ-পাকিস্তান সিরিজে। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে এসে এ মাঠে দুটি ওয়ানডে খেলে দুটিতেই জিতেছিল বাংলাদেশ। তবে বর্তমান টি-টোয়েন্টি দলের শুধু দুজন ক্রিকেটারই ছিলেন সেবারের দলে, অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব আল হাসান। এই কান্ড নিয়ে রীতিমত তুলকালাম বেধেছে সর্বত্র।

কিছু কথা ও যে ব্যাখ্যা দিলো বিসিবি:

সমুদ্রভীতির কারণে তামিম ইকবাল বিসিবিকে আগেই জানিয়ে দেন যে, ফেরিতে চড়ে ডমিনিকা যাবেন না তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দলে না থাকায় ওয়ানডে অধিনায়কের ডমিনিকা যাওয়া জরুরি ছিলও না। তবে যারা স্কোয়াডে রয়েছেন, তাদের ফেরিতে চড়েই যেতে হয়েছে ডমিনিকায়। ভয়ঙ্কর এই সমুদ্রযাত্রায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ক্রিকেটাররা। সেন্ট লুসিয়া থেকে ডমিনিকা, ভায়া মার্টিনেক। ভয়ংকর এক সমুদ্রযাত্রা শেষে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুরে ডমিনিকায় এসে পৌঁছায় বাংলাদেশ দল। শনিবার ডমিনিকার উইন্ডসর পার্কে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগে গতকাল ছিলো বিরতি। তার মধ্যে ক্রিকেটাররা সমুদ্রযাত্রার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারে কি না, সেটাই এখন চিন্তার বিষয়। টেস্ট সিরিজ শেষে ক্যারিবিয়ানে টি-টোয়েন্টির লড়াইয়ে নামবে টাইগাররা।

ডমিনিকার উইন্ডসর পার্কে আজ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হবে দু’দল। সে উদ্দেশ্যেই সেন্ট লুসিয়া থেকে ফেরিতে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ডমিনিকায় পৌঁছায় বাংলাদেশ দল। তবে দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টার সমুদ্র যাত্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েন খেলোয়াড়রা। সমুদ্রপথে বিশাল ঢেউয়ের ধাক্কায় ফেরির দুলুনিতে একে একে ‘মোশন সিকনেসে’ আক্রান্ত হতে থাকেন ক্রিকেটাররা। এরইমধ্যে প্রকাশিত ভিডিওতে কয়েক দফা বমিও করতে দেখা গিয়েছে তাদের। প্রথমে সেন্ট লুসিয়া থেকে মার্টিনেকে পৌঁছায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে বহনকারী ফেরিটি। দেড় ঘণ্টার যাত্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন ক্রিকেটাররা। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ হয় পেসার শরিফুল ইসলাম, উইকেটকিপার-ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান ও ম্যানেজার নাফিস ইকবালের।

মার্টিনেকে ৪০ মিনিটের যাত্রা বিরতিতে নাফিস, সোহান কিছুটা সুস্থ হলেও ডমিনিকায় আসার পথে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন শরিফুল। পানিপথে না গিয়ে বিমানে যাওয়ার সুযোগও ছিল বাংলাদেশ দলের। ওয়েস্ট ইন্ডিজে টাইগার বাহিনীই প্রথম দল যারা সমুদ্র পথে এক দ্বীপদেশ থেকে আরেক দ্বীপে গিয়েছে। এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলও সমুদ্রযাত্রা করেনি এর আগে। সফরের পরিকল্পনা স্বাগতিক ক্রিকেট বোর্ডের অধিকারে থাকলেও সফরকারী দলের অনুমতি নিতে হয়। আর ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের (সিডব্লিউসি) আটলান্টিক মহাসাগর পার হয়ে ক্রিকেটারদের এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার প্রস্তাব মেনে নিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বিসিবির এমন অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্তে চটেছেন টাইগার ক্রিকেটাররা।

এক খেলোয়াড় এমনও বলেছেন, ‘এখানে অসুস্থ হয়ে মরলে তো আমরা মরবো, কারো তো কিছু হবে না।’ দলের এক সিনিয়র ক্রিকেটার বলেন, ‘এত দেশ সফর করলাম, জীবনে এই অভিজ্ঞতা প্রথম। আমরা কেউই এতে অভ্যস্ত নই। এখন যদি ফেরিতেই কেউ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে যায় তাহলে কী হবে, খেলা তো পরের কথা। আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে সফর এটি।’ সমুদ্রযাত্রার পর গতকাল বিশ্রামের সুযোগ পায় বাংলাদেশ দল। আজ বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। তবে ম্যাচের আগে খেলোয়াড়দের সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।

যা বললেন বিসিবি’র প্রধান নির্বাহী বাংলাদেশ দলের এই ভয়ঙ্কর সমুদ্রযাত্রা নিয়ে বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সুজন বলেন, ‘আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে এটা হয়েছে। আমাদের অনেক খেলোয়াড় এ ধরনের ভ্রমণে অভ্যস্ত নয়। ওদের খেলোয়াড়েরা অভ্যস্ত বলে তাদের তেমন সমস্যা হয়নি। আসলে রওনা দিতে হয়েছে ভোর রাতে। রাতের ঘুম না হওয়ায় একটু খারাপ লাগা কাজ করেই। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে খারাপ আবহাওয়া। তারপরেও আমরা চেষ্টা করেছিলাম সমুদ্রযাত্রাটা বাদ দেয়ার।

দ্রুতই ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাকে বলি, আমাদের খেলোয়াড়দের যেন (মধ্যবর্তী দ্বীপ) মার্টিনেকে নামিয়ে রাখা হয়। সে বলল, ওখানে রাখা যাবে না। ওটা ফ্রেঞ্চ উপনিবেশ। ওখানে নামতে হলে ফ্রান্সের ভিসা লাগবে। সেটা তোমাদের নেই। তখন বুঝলাম এ ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। দল পৌঁছানোর পর আমাকে সে ভিডিও পাঠিয়ে জানালো দল নিরাপদে পৌঁছেছে।

জেনেছি, যাত্রার পরের অংশে (মার্টিনেক থেকে ডমিনিকা) আর সমস্যা হয়নি। প্রথম অংশেই বেশি সমস্যা হয়েছে। এটার ভোগান্তি আমাদের জন্য একটু বেশি হয়ে গেছে।’ প্রশ্ন উঠেছে, বিসিবি কেন এ ধরনের ভ্রমণে রাজি হলো। ওখানে কি বিমানযাত্রার সুযোগ ছিল না? এ বিষয়ে সুজন বলেন, ‘ওরা ফেরিতে ভ্রমণ করার প্রস্তাব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে আমরা রাজি হয়েছি, তা নয়। ওরা যখন জানালো আর বিকল্প নেই, তখন তাদের (ব্যবস্থার) ওপর নির্ভর করতে হবে। এই ফেরিতে প্রায় ২৫০ জনের বহর গেছে। কোভিডের কারণে বড় ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে ওখানে। অনেক এয়ারলাইনস বন্ধ হয়ে গেছে। ফ্লাইট কমে গেছে। বড় বিমান ভাড়া করা যাচ্ছে না।

আর সব দ্বীপের ব্যবস্থাও এক নয়। ৩০-৩৫ জনের ছোট ছোট ফ্লাইট ছিল (সেন্ট লুসিয়া থেকে ডমিনিকা)। ওরা যখন আমাদের জানিয়েছিল যেহেতু দুই দল এক সঙ্গে যাবে, ম্যাচ অফিশিয়ালসহ সমপ্রচারের দায়িত্বে থাকা সবাই একসঙ্গে এভাবে ভ্রমণ করবে, তখন আমরা এটা নিয়ে আপত্তি করিনি।

ঢাকা, ০২ জুলাই (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এপিজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ