Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

যেভাবে রক্তের বিনিময়ে আর্জেন্টিনার জয়

প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০১৮, ২০:৫৯

স্পোর্টস লাইভ: সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে মাঠে নামার আগে জটিল সমীকরণের ক্যালকুলেটর নিয়ে বসেছিল সবাই। অন্যদিকে সবার এক চোখ নিবদ্ধ ছিল রোস্তভ এরেনায়ও। নানা আশা-আশঙ্কার দোলাচলে দুলতে দুলতে সেন্ট পিটার্সবার্গের গ্যালারিতে আসন নেয় দর্শকরা।

অদৃশ্যভাবে সবার মাথায় ক্যালকুলেটর তখনও কাজ করছিল। কিন্তু ১৪ মিনিটে এভার বানেগার লফটেড শট, নিয়ন্ত্রণে নেন মেসি। কয়েক ধাপ এগিয়ে এসে প্রায় বিরল হয়ে পড়া ডান পায়ের ব্যবহার করলেন। বাম পায়ের মতই শক্তিশালী সেই শট। কেঁপে উঠলো সুপার ঈগল নাইজেরিয়ার জাল।

খেলায় হার-জিত থাকেই। কেউ জিতবে, কাউকে বিদায় নিতে হবে-এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নাইজেরিয়া তাদের বিদায়টাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছে না। বরং বড় দল বলে আর্জেন্টিনার হয়ে রেফারি কাজ করেছেন বলেই অভিযোগ তাদের তারকা ফরোয়ার্ড ভিক্টর মোসেসের। রোহো অনিচ্ছাকৃতভাবে বলটি হাতে লাগানোয় সিদ্ধান্ত হয়, পেনাল্টি না দেয়ার।

নাইজেরিয়া আর্জেন্টিনার মতো বড় দল নয় বলেই এমন পক্ষপাতিত্ব হয়েছে, অভিযোগ মোসেসের। চেলসির সাবেক মিডফিল্ডার বলেন, 'বড় দেশগুলোর পক্ষেই সিদ্ধান্ত হয়, ছোট দলগুলোর বেলায়? আমি এটা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। আপনারা নিজেরাই নিজেদের মতামত দিন, আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি।'

রাশিয়া বিশ্বকাপ যেভাবে একের পর নাটকীয়তা জন্ম দিচ্ছে, তাতে আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচ বাদ যাবে কেন? ম্যাচের ৫১ মিনিটে পেনাল্টি দিলেন রেফারি। স্পট কিক নিলেন মোসেস। গোল করলেন। তাতে সমতা। আর সমতা মানেই তো আর্জেন্টিনার বিদায়।

ম্যাচের ৮৬ মিনিট পর্যন্ত ১-১ সমতাও ছিল। এমন মুহূর্তে দুর্দান্ত এক গোল করে আফ্রিকান জায়ান্ট কিলারদের স্বপ্ন ভেঙে দেন মার্কাস রোহো।

রক্তাক্ত মাচেরানোকে দেখে মনে হচ্ছিল মাঠে যেন যুদ্ধ করছেন তিনি। আহত হয়েছেন, রক্তাক্ত হয়েছেন; তবুও দেশের জন্য হার মানতে নারাজ। হ্যাঁ, আজকের আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচের দৃশ্যই এটি।

বিশ্বকাপে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে সেন্ট পিটার্সবার্গে খেলতে নেমে ম্যাচের শুরুতেই মেসির দুর্দান্ত ডান পায়ের শটে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। তবে এই মাচেরানোর ভুলেই নাইজেরিয়ার পক্ষে পেনাল্টি উপহার দেন রেফারি।

যখন নাইজেরিয়ার ভিক্টর মোসেস গোল দিয়ে নাইজেরিয়াকে সমতায় ফেরালো, ক্যামেরায় বারবার ধরা পরছিল মাচেরানোর অশ্রু ভেজা চোখ দুটি। মনে মনে হয়ত ভাবছিলেন, যদি এই ভুলের কারণেই দল বাদ পড়ে যায়, তবে হয়ত নিজেকে আর কখনোই ক্ষমা করতেন পারবেন না তিনি।

তবে ম্যাচের ৬০ মিনিটের দিকে নাইজেরিয়ার খেলোয়াড়দের আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে মুখ কিছুটা থেঁতলে যায় মাচেরানোর। ডান চোখের ওপর, কপালে বড় একটা অংশ কেটে যায়। গলগলিয়ে রক্ত চোখের পাশ বেয়ে পড়তে থাকে থুতুনি হেয়।

তারপর সেই যে মাঝমাঠ থেকে রক্ষণভাগ-সব যেন একাই সামলাচ্ছিলেন একজন সত্যিকারের যোদ্ধার মত। কি ট্যাকল, কি ইন্টারসেপ- সবই নিখুঁতভাবে করে যাচ্ছিলেন। দলকে গোল থেকে বাঁচাচ্ছেন। আবার গোলের জন্য মেসি-হিগুয়াইন-আগুয়েরোদের বল তৈরি করে দিচ্ছিলেন।

আর্জেন্টিনা তো আর গোল দিতে পারছে না। পূর্ণ হতাশা ঘিরে ধরে আর্জেন্টাইনদের। শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টাইনদের ত্রাতা হয়ে এলেন মার্কোস রোহো। ম্যানইউর এই ডিফেন্ডার ৮৬ মিনিটে ডান উইং থেকে বল পেলেন গ্যাব্রিয়েল মার্কাদোর কাছ থেকে। দারুণ শট নিলেন। জিতে গেলো আর্জেন্টিনা। নিশ্চিত হলো দ্বিতীয় রাউন্ড।

তবুও নিজের ইনজুরির কারণে এক ফোঁটা সময়ও নষ্ট করলেন না মাচেরানো। কারণ দলের পরের রাউন্ডের টিকিট পেতে যে চাই আরও এক গোল! রক্ত পড়া অবস্থাতেই চালিয়ে গেলেন খেলা। একজন সত্যিকারের যোদ্ধা তো কখনও মাঠে হেরে আসতে পারে না।

রক্ত মাখা মুখেই নাইজেরিয়ায় পাওয়ার ফুটবলকে মোকাবেলা করে জয় ছিনিয়ে নিয়ে ফিরলেন দ্য ট্যাকেল মাস্টার। আর্জেন্টিনার এই জয়ে সবার পরিশ্রমের ঘামের সঙ্গে মিশে রইলো মাচেরানোর রক্তও।

এরপরই হিসাব শুরু, দ্বিতীয় রাউন্ডে কার মুখোমুখি হচ্ছেন লিওনেল মেসিরা। আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল, ডি গ্রুপের রানারআপ দ্বিতীয় রাউন্ডে মুখোমুখি সি গ্রুপের চ্যাম্পিয়নের। সে হিসেবে দ্বিতীয় রাউন্ডেই আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হচ্ছে সি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের। ৩০ জুন, দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম ম্যাচেই কাজান এরেনায় ফরাসিদের বিপক্ষে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হবে ম্যাচটি।

এরপরই হিসাব শুরু, দ্বিতীয় রাউন্ডে কার মুখোমুখি হচ্ছেন লিওনেল মেসিরা। আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল, ডি গ্রুপের রানারআপ দ্বিতীয় রাউন্ডে মুখোমুখি সি গ্রুপের চ্যাম্পিয়নের। সে হিসেবে দ্বিতীয় রাউন্ডেই আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হচ্ছে সি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের। ৩০ জুন, দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম ম্যাচেই কাজান এরেনায় ফরাসিদের বিপক্ষে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হবে ম্যাচটি।

নাইজেরিয়ার বিপক্ষে সেন্ট পিটার্সবার্গে মাঠে যখন নেমেছে লিওনেল মেসিরা, তখন গ্যারারিতে অবশ্যম্ভাবীভাবে উপস্থিত ছিলেন ম্যারাডোনা। শুরু থেকেই মেসিদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সারা বিশ্বের কোটি কোটি আর্জেন্টিনা সমর্থকের মত ম্যারাডোনাও ছিলেন উদ্বিগ্ন। শ্বাসরুদ্ধকর একটা পরিস্থিতি যেন।

লিওনেল মেসিদের বাঁচা-মরার ম্যাচ। মেসির নিজেকে প্রমাণ করারও ম্যাচ। এমন এক ম্যাচে পুরো ঢেলে সাজানো হলো আর্জেন্টিনার একাদশ। বসিয়ে রাখা হলো আগুয়েরো, মেজাকে। নামানো হলো হিগুয়াইন, ডি মারিয়াকে। মেসিকে দেয়া হলো স্বাধীনতা। তারই সুবাধে এভার বানেগার তুলে দেয়া বলকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডান পায়ের অসাধারণ শটে নাইজেরিয়ার জাল কাঁপিয়ে দেন লিওনেল মেসি।

হাফ ছেড়ে বাঁচা বুঝি একেই বলে। গোল পাচ্ছিলেন না। অনেক চেষ্টা করেও গ্রুপের প্রথম দুই ম্যাচে অধরা গোল যেন তার কাছে ধরা দিচ্ছিল না। ক্লাব লেভেলে যিনি গোলের পর গোল করে আসছেন সেই লিওনেল মেসি বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচে গোল পাননি।

বিশ্বকাপের হট টপিকসের ভেতর সবার উপরে বোধহয় এটাই। সেই মেসি বিশ্বকাপে গোলখরা কাটালেন। দীর্ঘ ৬৬২ মিনিট পর বিশ্বকাপে গোলের দেখা পেলেন লিওনেল মেসি।

২০১৪ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে এই নাইজেরিয়ার বিপক্ষেই জোড়া গোল করেছিলেন ক্ষুদে যাদুকর। সেই শেষ। এরপর দ্বিতীয় রাউন্ড, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমি ফাইনাল, ফাইনাল গেলেও গোল ধরা দিচ্ছিল না তার পায়ে। আসলো ২০১৮ বিশ্বকাপ। এবার যেন মেসি আরও মলিন।

সব সমালোচনার জবাব দিতে সেই নাইজেরিয়াকেই বেছে নিলেন। দীর্ঘ ৬৬২ মিনিট পর বিশ্বকাপে আবারও গোল পেলেন তিনি। এই গোলের ফলে তৃতীয় আর্জেন্টাইন ফুটবলার হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপে গোল করার রেকর্ড গড়লেন বার্সেলোনার এই তারকা।

 

ঢাকা, ২৭ জুন (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ