Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

শাস্তি পেলেন সাকিব, আম্পায়ারের ভুলে!

প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০১৮, ১৯:১৯

স্পোর্টস লাইভ: খেলার শুরু এবং শেষটা ছিল টানটান উত্তেজনা। প্রতিপক্ষের প্রতিটি বাঁধ পেরিয়ে ম্যাচের একেবারে শেষ ওভারে ঘটনার সূত্রপাত। মাহমুদউল্লাহ ছুটে গিয়ে আম্পায়ারের কাছে জানতে চাইলেন, কেন পরপর দুই বাউন্সারে নো বল ডাকা হলো না?

দুই দুলের খেলোয়াড়দের মধ্যে শুরু হয়ে গেল বাগবিতণ্ডা। এতে যোগ দিলেন সাইড বেঞ্চের খেলোয়াড়েরাও। উত্তেজনা আরও বেড়ে গেলো মাঠ পেরিয়ে পুরু গেলারিতে। ৩৫ হাজার দর্শকের গগনবিদারী চিৎকারের চেয়ে বেশি জোরালো হয়ে উঠল সাকিব আল হাসানের চিৎকার, কেন নো বল দেওয়া হলো না, কেন?

যথার্থ উত্তর না পেয়ে কঠিন এক সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়েই ফেলেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, দুই ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ আর রুবেল হোসেনকে ড্রেসিংরুমে ফিরে আসার ইঙ্গিত করেছিলেন। পরিস্থিতি ঠান্ডা করলেন বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ। দুই ব্যাটসম্যানকে ম্যাচ শেষ করে আসার নির্দেশ দিলেন। সেনা পাহারায় ডাগ আউট থেকে সাকিবকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো ড্রেসিংরুমে।

পরে যা হলো তা ইতিহাস! ১ বল বাকি থাকতে উদানাকে কবজির মোচড়ে ফ্লিক করে স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে গ্যালারিতে পাঠালেন। মাহমুদউল্লাহ মিলিয়ে দিলেন সব সমীকরণ। শুরু হলো বাংলাদেশের দলীয় নাগিন নৃত্য! তাতে যোগ দিল কোচিং স্টাফ, টিম ম্যানেজমেন্টও! সাকিব মাঠে ঢুকলেন গায়ের জার্সি খুলে সব উত্তেজনা, তেজ যেন তাতে বাষ্প হয়ে বেরোল! ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে আবার কুশল মেন্ডিসের সঙ্গে লেগে গেল সাব্বির রহমানের। পরিস্থিতি সামাল দিলেন তামিম ইকবাল-মাহমুদউল্লাহ।

স্বাভাবিকভাবে সংবাদ সম্মেলনে ঘুরেফিরে এ ঘটনাই এল। শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা কুশল পেরেরা বললেন, এটা নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না। সাকিবও তা-ই। বারবার একই বিষয়ে প্রশ্ন হচ্ছে বলে বাংলাদেশ অধিনায়ক একবার বললেন, ‘এত ভালো একটা ম্যাচ হয়েছে, সেটা নিয়েই কথা বলি। ৪০ ওভারের একটা ওভার নিয়েই বেশি কথা বলছি। বাকি ৩৯ ওভার নিয়ে কথা বলি।’

চাইলেই কি এড়ানো যায়? সাকিবকে বলতে হলো, কেন, কীভাবে এ ঘটনার সূত্রপাত, ‘যেটা হয়েছে যে ওখানে স্কয়ার লেগে আম্পায়ার কল (নো বল) করেছিল। তারা আলোচনা করে সেটা আবার বাতিলও করেছে। এটা আমার কাছে মনে হয় না সঠিক সিদ্ধান্ত। জানি না প্রথমটায় বাউন্সার কল করেছিল কি করেনি। দ্বিতীয়টি যখন হয়েছে, আম্পায়ার নো বল কল করেছে। সবারই ভুল হতে পারে। আমাদের উচিত দল হিসেবে খেলা। আমাদের উচিত এগিয়ে যাওয়া।’

তবে শ্রীলঙ্কা দলের সঙ্গে এমন উত্তেজনার মুহূর্ত তৈরি হবে ভাবতেও পারেননি সাকিব, ‘মাঠের ভেতরের জিনিস মাঠে থাকা উচিত। আমরা খুবই ভালো বন্ধু। শুধু মাঠেই নয়, দুই ক্রিকেট বোর্ডের সম্পর্কটা অনেক ভালো। বিপদে-আপদে সবাই সবাইকে সহায়তা করে। শ্রীলঙ্কার অনেক খেলোয়াড় আমাদের লিগে খেলে, বিপিএলে খেলে। ওদের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক। তবে মাঠে চাইব আমার দল জিতুক। দলের জয়ের জন্য আমি যেকোনো কিছুই করতে পারি। আশা করি, দুই দল এভাবেই বিষয়টা নেবে। এটা মাঠের ভেতরই থাকবে।’

শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মাঠে অনেক লড়াই হয়েছে, এমন উত্তেজনা সাধারণত কমই দেখা যায়। কিন্তু আজ কেন অমন অগ্নি বিস্ফোরণ হলো? অনেক কারণ আছে। দেশের মাঠে শ্রীলঙ্কার কাছে টানা তিন সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। চন্ডিকা হাথুরুসিংহে চলে যাওয়ায় বাংলাদেশ জিততে ভুলে গেছে, এমন নেতিবাচক কথাও হজম করতে হয়েছে খেলোয়াড়দের। শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কাকে টানা দুবার হারিয়ে, নিদাহাস ট্রফিতে দর্শক বানিয়ে ফাইনালে উঠে মনের সব যন্ত্রণাই হয়তো লাঘব করেছেন সাকিবরা! আর তাতে একটু আগুনের হলকা বেরিয়েছে, এই যা!

টাইগারা যার যার জায়গা থেকে শতভাগ দিলেন। তাতে শুরুতেই শ্রীলঙ্কাকে খুব করে চেপে ধরে বাংলাদেশ। কুশাল পেরেরা ও থিসারা পেরেরার ব্যাটে সেখানে থেকে শ্রীলঙ্কা ঘুরে দাঁড়ালেও ১৫৯ রানের বেশি করতে পারেনি। এই লক্ষ্য তারা করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারের আগে ২ উইকেটে জয় পায় টাইগাররা।

বাংলাদেশ ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলটি ওয়ান বাউন্স সিগন্যাল দেন আম্পায়ার। দ্বিতীয় বলটি প্রথম বলের চেয়ে আরও উপর দিয়ে চলে যায়। কিন্তু আম্পায়ার বলটি নো বল দেননি। এ নিয়ে শুরু হয় হট্টগোল। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা আম্পায়ারের কাছে নো বলের আবেদন জানান। এ নিয়ে আম্পায়ার ও শ্রীলঙ্কা দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের কথা কাটাকাটি হয়। তারপরও আম্পায়ার বলটিকে ‘নো বল’ দেননি।

তাই দুই ব্যাটসম্যানকে ফিরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তবে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নটা শেষ হতে দিলেন না সাকিব, ‘ওটা তো ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিতও হতে পারে! দুইটাই বোঝায়।’ ম্যাচের শেষ ওভারে যে উত্তাপ ছড়িয়েছে, যে কথার লড়াই, সেটির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাঠে ছেড়ে চলে আসার পরিস্থিতি তৈরি হওয়া সাকিবের সামনে নিষেধাজ্ঞার হুমকিই ছিল।

কিন্তু স্বস্তির খবর, তেমনটা হয়নি টাইগার এই দলপতির। শুক্রবার রাতে দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড সাকিবকে ২৫ শতাংশ ম্যাচ ফি জরিমানা আর একটি ডিমেরিট পয়েন্ট দিয়েছেন। ডিমেরিট পয়েন্ট পেয়েছেন একাদশের বাইরে থাকা নুরুল হাসান সোহানও।

উত্তেজনার মুহূর্তে নুরুলের সঙ্গে কথার লড়াই হয়েছিল লঙ্কান খেলোয়াড়দের। টিম ম্যানেজমেন্টের এক সদস্য জানালেন, ম্যাচ রেফারি বুঝতে পেরেছেন ঘটনার উৎপত্তি আসলে আম্পায়ারের ভুলে! যেহেতু আম্পায়ারদের ভুলের কারণেই এত কিছু, তাই সাকিব-নুরুলকে বেশি জরিমানা গুনতে হয়নি।


ঢাকা, ১৭ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ