লাইভ প্রতিবেদক: বাঁশের খুঁটি ও চাচের বেড়া এবং জং ধরা টিনের চালের ছাপড়া মতো দোচালা ঘরটি বেশ দূর থেকেই চোখে পড়ে। পথিক মাত্রই ঘরটিকে ঘেরের শ্রমিকদের ঘর ভেবে নেন। কিন্তু কাছাকাছি গিয়ে টিনের সাইনবোর্ড আর জাতীয় পতাকাটা স্পষ্ট হলেই দূর হয় ভ্রম।
ভাঙাচোরা ও জরাজীর্ণ এ ঘরটি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। একটি মাত্র ঘরেই চলে সবগুলো শ্রেণির ক্লাস। সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেলো সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের বাগডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দৈন্যদশা।
ঘরের একপাশে ক্লাস নিচ্ছেন আনোয়ারা খাতুন, ঘরের আরেক কোনায় ক্লাস নিচ্ছেন নুরুজ্জামান। কিন্তু একই ঘরে দুই শিক্ষকের পৃথক ক্লাসের কারণে মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ফলে শ্রেণি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
১৯৯০ সালে স্থাপিত এ স্কুলটি জাতীয়করণ হয় ২০১৩ সালে। কিন্তু সরকারি হলেও পড়েনি তার কোনো প্রভাব। বর্তমানে স্কুল ঘরের বাঁশের খুঁটি গুলো নষ্ট হয়ে গেছে, ভেঙে পড়ছে চাচের বেড়া। সেই সঙ্গে টিনের চাল ভরে গেছে ফুটোতে। বৃষ্টি হলেই ভেতরে কাকভেজা ছাড়া উপায় নেই ছাত্রদের, ঘরের মেঝে ভরে যায় কাঁদায়। আর অধিকাংশ সময়ে স্কুলের মাঠ জলাবদ্ধ থাকে।
জানা গেলো, ১১৮ জন শিক্ষার্থীর এই স্কুলে শিক্ষক রয়েছেন চারজন। কিন্তু সংকট ও সমস্যার ভিড়েও স্কুলটি নজর কেড়েছে সবার। শিক্ষকদের আপ্রাণ চেষ্টায় ২০১২ সাল থেকেই পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় শতভাগ সাফল্য অর্জন করে আসছে জীর্ণ-শীর্ণ স্কুলটি।
স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারিয়া জানায়, তাদের পৃথক শ্রেণিকক্ষ না থাকায় শিক্ষকদের কথা শোনা কষ্ট হয়। তাদের অন্তত একটি পাকা ভবন দরকার। চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মুহিদ জানায়, ক্লাসে বসে অন্য ক্লাসের ছেলে-মেয়েদের দেখা যায়। চোখাচোখি হলে হাসাহাসি শুরু হয়। তাই পড়ায় মন বসে না।
স্থানীয় বাসিন্দা আজিজুর রহমান জানান, প্রতিষ্ঠার ২৬ বছর পরও আধুনিকতার কোনো ছোয়া পড়েনি স্কুলটিতে। এলাকার গরিব মানুষদের সন্তানেরা পড়ে বলে স্কুলটির দিকে কেউ তাকায় না বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
তিনি স্কুলটির অবকাঠামোগত উন্নয়নে স্থানীয় সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ে ভবন না থাকায় নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। বিদ্যমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ জানেন। তবে তারা শিক্ষাদানে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন বলে জানান।
জানতে চাইলে সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ জানান, স্কুলটি জাতীয়করণের পর সম্প্রতি শিক্ষক গেজেট হয়েছে। আগামী অর্থবছরের দিকে ভবন হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
ঢাকা, ১৩, নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)// আইএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: