লাইভ প্রতিবেদক: বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে শিক্ষার্থী নিপীড়নের ঘটনাগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঠিক প্রশিক্ষণ এবং দোষীদের কঠোর সাংগঠনিক শাস্তি দেওয়া হবে। গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এ কথা বলেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিং, শিক্ষার্থী নিপীড়নে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের জড়িয়ে পড়ার প্রসঙ্গে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে—সেটা বিশ্ববিদ্যালয় হোক বা কলেজ-মাদরাসা হোক—সামাজিক-মানসিক নিপীড়নকে র্যাগিংয়ের নামে অনেকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। অপরাধকে নমনীয় করে দেখার প্রবণতা রয়েছে। আমরা দায় অস্বীকারের রাজনীতি করব না। আমরা আমাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডকে নতুনভাবে মূল্যায়নের চেষ্টা করছি। আমাদের নেতা-কর্মীদের স্কুলিং, তাদের ঠিকঠাক ওরিয়েন্টশন হচ্ছে কি না, তাদের নেতৃত্বের দক্ষতা, তাদের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং আধুনিক শিক্ষা সম্পর্কে ধারণা কতটুকু রয়েছে-এগুলো যাচাই-বাছাই করছি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস পেয়েছি এবং র্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও ছাত্রলীগ নেতৃত্ব প্রদান করবে।’
র্যাগিং প্রসঙ্গে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘এটা শুধু ছাত্ররাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো বিষয় নয়। কারণ র্যাগিং ক্যাম্পাস কালচারের অংশে পরিণত হয়েছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে। র্যাগিংয়ের ঘটনা ক্রিমিনাল অফেন্স। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কিন্তু দায়বদ্ধতা রয়েছে সক্রিয় থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার। আমরা চাই, এটাকে দলীয় রাজনীতির বিষয় হিসেবে না দেখে অপরাধ এবং শিক্ষার পরিবেশবিরোধী একটি ঘটনা হিসেবে দেখা হবে। ক্যাম্পাসে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের অনুপস্থিতি রয়েছে। ছাত্ররাজনীতি যখন জবাবদিহিবিহীন থাকে, তখন কিন্তু এ ধরনের নেতিবাচক ঘটনাগুলো ঘটে থাকে। ছাত্রসংসদ নির্বাচন করার মধ্য দিয়েও ছাত্ররাজনীতিকে ইতিবাচক দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগটি অবারিত হয়।’
ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে অস্থিরতার প্রসঙ্গে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমরা সাংগঠনিক শৃঙ্খলার প্রশ্নে শূন্য সহনশীল নীতি নিয়েছি। যেখানেই কোনো ঘটনা ঘটছে, আমরা সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। অর্থনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে সংগঠনকে কেউ ব্যবহার করবে, সেটির সুযোগ আমরা একেবারেই দিতে চাই না।’
বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বেপরোয়া, নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ার কারণ প্রসঙ্গে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমাদের সাংগঠনিক জায়গায় কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। আমরা যখন দেখি যে সম্মেলন সময়মতো হয় না, মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির পাঁচ থেকে ছয় বছর সম্মেলন হচ্ছে না, সেখানেই অধিকতর সমস্যাগুলো হয়। অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখি যে শিক্ষকরাজনীতির সঙ্গে ছাত্ররাজনীতি অভিন্নভাবে সম্পৃক্ত হয়ে যায়, যার ফলে পেশাগত স্বার্থ হাসিল করার বা ব্যক্তিগত কার্য উদ্ধার করতে অনেকে তৎপর থাকে। আমরা চাচ্ছি শিক্ষক ও ছাত্র রাজনীতির মধ্যে সুস্পষ্ট ফারাক নিশ্চিত করতে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসন যেন ছাত্রদের ব্যবহার না করতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আগামীকাল (রবিবার) আমাদের অ্যান্টি র্যাগিং ক্যাম্পেইন শুরু হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে আমরা শুদ্ধি অভিযান শুরু করছি। লিফলেট বিলি করব, সমাবেশ করব, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলব তারা যেন র্যাগিং ও যৌন নিপীড়নকে ‘না’ বলে। এসব অপরাধে আইনে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেটি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানাব।’
তিনি বলেন, ‘কিছু দাবিদাওয়া প্রশাসনের কাছে নিয়ে আসতে চাই। সেগুলো হচ্ছে যে ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি যখন দেয়, তখন যেন র্যাগিং ও যৌন হয়রানিবিরোধী প্রচারণা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ভর্তির পর পরিচিতি ক্লাসে র্যাগিং ও যৌন হয়রানিবিরোধী সেশন যেন বাধ্যতামূলক করা হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে—হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে। সেখানে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এটি যেন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মেনে চলে।’
ঢাকা, ২৬ ফেব্রুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএফ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: