লাইভ প্রতিবেদক: কোন ছাড় নেই। যেভাবেই হোক ঠেকাতেই হবে ওদের। কারণ এরা অনেক কিছুই হাইট করে। হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ ৫০ নেতা এবং তাদের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনায় যুক্ত ১৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরিচালক আকতার হোসেন আজাদের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের বিশেষ টিম গঠন করে গত ১৭ মে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে। অনুসন্ধান টিমের অন্য সদস্যরা হলেন উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, মোহাম্মদ নুরুল হুদা, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী, মো. সাইদুজ্জামান ও উপসহকারী পরিচালক সহিদুর রহমান প্রমুখ।
ওই আদেশে বলা হয়েছে, হেফাজতে ইসলামের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে সংগঠনের তহবিল, বিভিন্ন মাদ্রাসা, এতিমখানা, ইসলামী প্রতিষ্ঠানের অর্থ এবং ধর্মীয় কাজে বিদেশি সহায়তার অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জন, মানি লন্ডারিং এবং অবৈধ অর্থ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে ওইসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, 'আমরা একটা কমিটি করে দিয়েছি।
কমিটি অনুসন্ধান শুরু করছে। অনুসন্ধানে যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' অভিযোগের বিষয়ে হেফাজতের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'অনুসন্ধানের সময় যা যা করা দরকার, তা করবে টিমের সদস্যরা। যাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যাকে প্রয়োজন নেই, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না।'
দুদক কমিশনার বলেন, 'আইন অনুযায়ী ১২০ দিনের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ না হলে আরও সাত দিন সময় বাড়িয়ে নেওয়া যাবে। দুদক কাউকে ছাড় (কনসিডার) দেবে না। দুদক আইন অনুযায়ী কাজ করবে। আইনে যা যা আছে, তার ব্যত্যয় ঘটবে না।'
দুদক সূত্র জানায়, হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, মহাসচিব নূর হুসাইন কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মুহাম্মদ মামুনুল হক ও হেফাজতের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট ৫০ জনের অনিয়ম দুর্নীতির ব্যাপারে দুদক ইতোমধ্যে আমলযোগ্য তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে। এর আগে দুদক হেফাজত ও তাদের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট ৫৪ নেতার ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) চিঠি দিয়েছে।
বিলুপ্ত হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের ব্যাংক হিসাবে ৬ কোটি টাকার লেনদেন, মানি লন্ডারিং ও নানা সম্পদের অনুসন্ধানের কথাও জানা গেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি মুহাম্মদ মাহফুজুল হক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, মহাসচিব সৈয়দ ফয়জুল করীম, আল-হাইয়্যাতুল উলওয়া বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ প্রমুখ। জানা গেছে, হেফাজতে ইসলামের ওইসব নেতার অর্থসম্পদ এবং এর উৎসের খোঁজ করছে দুদক। দেশে-বিদেশে তাদের অর্থের জোগানদাতা কারা, সেগুলোও খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে হেফাজতে ইসলামের অর্থের জোগানদাতা হিসেবে ৩১৩ জনকে চিহ্নিত করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা আগমনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতাসহ বিভিন্ন মামলায় গত ১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই মধ্যে তাকে কয়েক দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে নানা অপরাধের খবর মিলেছে।
ঢাকা, ২১ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এআইটি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: