Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | মঙ্গলবার, ২১শে মে ২০২৪, ৭ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

ইমোতে প্রেম, টাকা নিয়ে উধাও বর

প্রকাশিত: ৭ জানুয়ারী ২০২১, ০৩:১৮

লাইভ প্রতিবেদকঃ শরীয়তপুরের সাথী আক্তার বাণীর (২২) সঙ্গে বছরখানেক আগে মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় রাজশাহীর তরুণ সোহাগ হোসেনের (২৬)। এরপর বন্ধুত্ব, সাক্ষাৎ থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে।

একপর্যায়ে বিষয়টি পরিবারকে জানালে মেয়েকে ওই যুবকের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হন অভিভাবকরা। সে অনুযায়ী গত ৩ জানুয়ারি বিয়ের দিন ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু সোহাগ কিংবা তার পরিবারের কেউই সেদিন মেয়ের বাড়িতে আসেনি।

রোববার (৩ জানুয়ারি) এ ঘটনা ঘটেছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নে পাচুখার কান্দি গ্রামে।

জানা যায়, জেলার জাজিরা উপজেলার পাচুখারকান্দি গ্রামের দরিদ্র ভাঙারি ব্যবসায়ী মালেক চৌকিদারের মেয়ে সাথী আক্তার। বছরখানেক আগে মোবাইল অ্যাপস ইমোর মাধ্যমে ওই যুবকের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। নিজেকে পুলিশ সদস্য পরিচয় দিয়ে সোহাগ জানান, তার বাড়ি রাজশাহী শহরে। পুলিশ সদস্য হিসেবে কর্মরত আছেন শরীয়তপুরের নড়িয়া থানায়।

এক পর্যায়ে ওই যুবক তরুণীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি বিষয়টি তার পরিবারকে জানায়। পরে ওই তরুণীর পরিবার প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিয়ে সোহাগের সাথে ও তার চাচা পরিচয়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে আলাপ আলোচনার পর বিয়েতে মত দেন এবং বিয়ের দিন তারিখ নির্ধারণ করেন। জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখ বিয়ের দিন ধার্য করা হয়। বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হওয়ায় বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়া হয় আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের।

এরই মধ্যে সোহাগ ওই তরুণীকে জানান, তার নাকি আইডি কার্ড হারিয়ে গেছে। বেতনের টাকা তুলতে পারছেন না। তাই বিয়ের খরচের জন্য দুদিন আগে ওই তরুণীর পরিবারের কাছে এক লাখ টাকা ধার চান ঐ যুবক। বিয়ের আগে টাকা না পেলে তার বিয়ে করা সম্ভব হবে না।

ওই তরুণীর বাবা তার মেয়ের বিয়ের জন্য তার দুই কড়া জমি বিক্রি করেছিলেন এবং আরও এক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। বিয়ের এক সপ্তাহ আগে তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সোহাগকে ৭০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। বাকি টাকা দিয়ে বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন করেন। বিয়ের আগের রাত পর্যন্ত ওই তরুণী ও তার পরিবারের সঙ্গে সোহাগের ফোনে যোগাযোগ ছিল। বিয়ের দিন সকাল থেকে বাড়িতে বিয়ের আয়োজন চলতে থাকে এবং আত্মীয় স্বজনরা আসতে থাকেন। চলে খাওয়া দাওয়া।

বরযাত্রী কতদূর, তা জানার জন্য ওই তরুণীর পরিবার সোহাগের মোবাইল ফোনে কল করলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর একাধিক নম্বর দিয়ে বার বার কল করেও কোনও কাজ হয়নি। বরের মোবাইল ফোন বন্ধ জানতে পেয়ে বাড়ির সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েন। লোকজনের মধ্যে সন্দেহ বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে বিয়ে বাড়ির আনন্দ বিষাদে পরিণত হতে থাকে। থেমে যেতে থাকে বিয়ের আয়োজন ও কোলাহল। দিশেহারা হয়ে পড়ে ওই তরুণীর পরিবার।

দিন শেষ হয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে কিন্তু নেই বরের দেখা। গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকেন তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বরবেশে ওই যুবক আসেননি। এ ঘটনার পর থেকে প্রতারণার শিকার মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী তরুণী বলেন, ‘আমার পরিবার গরিব তাই বেশি পড়ালেখার সুযোগ হয়নি। ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। সোহাগের সঙ্গে প্রথম পরিচয় ইমো গ্রুপের মাধ্যমে। তারপর মোবাইল ফোনে কথা হতো, পরে আমার সঙ্গে সম্পর্ক হয়। ও আমাকে বলেছে, ওর বাড়ি রাজশাহী শহরে এবং সে নাকি নড়িয়া থানায় পুলিশে চাকরি করে। নড়িয়াতে আমি তার সঙ্গে দুইবার দেখা করেছি। সে আমাকে বিয়ে করবে বলেছিল। তাকে বিশ্বাস করে আমার পরিবার ৭০ হাজার টাকা পাঠিয়েছে এবং বিয়ের আয়োজন করে। কিন্তু সে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

তিনি বলেন, ‘আমার মোবাইলে সোহাগের একটি ছবি আছে। ছবিতে তিনি সিকিউরিটি গার্ডের ইউনিফর্ম পড়ে আছেন। তিনটি মোবাইল নম্বরে তার সঙ্গে আমার কথা হতো।’

বাণীর বাবা মালেক চৌকিদার বলেন, ‘ওই যুবকের সঠিক পরিচয়ও কেউ জানেন না। আমি গরিব মানুষ। লেখাপড়া জানি না। সহায়-সম্পত্তি তেমন কিছুই নাই। দিন আনি, দিন খাই। চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে বাণীই সবার বড়। দুই কড়া জমি ছিলো, তাও মেয়ের বিয়ের জন্য বিক্রি করে দিছি। টাকা-পয়সা খুইয়ে শেষ পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে দিতে পারলাম না। আমাদের মানসম্মান সব গেছে। এখন আমার মেয়ের কী হবে?’

এ ব্যপারে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবার এখনও কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ যোগাযোগ করা হলে নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ওই ঘটনার বিষয় আমার জানা নেই। নড়িয়া থানায় গত তিন বছরে সোহাগ নামের কোন পুলিশ সদস্য ছিল না। এখনও নাই।’

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আশ্রাফুজ্জামান ভূইয়া বলেন, ‘ভুক্তভোগী পরিবার যদি লিখিত অভিযোগ করে, তাহলে মোবাইল ট্র্যাকিং করে ওই যুবকের তথ্য জানা যেতে পারে। এটা একটা দুঃখজনক ঘটনা।’ সৌজন্যে: জাগোনিউজ২৪ডটকম

ঢাকা, ০৬ জানুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ