Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বুধবার, ১৫ই মে ২০২৪, ১লা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

রিকশা চালিয়েও নিয়মিত স্কুলে শিশু রাকিব!

প্রকাশিত: ২৮ আগষ্ট ২০১৮, ২০:৪০

লাইভ প্রতিবেদক: ৮ম শ্রেণীর ছাত্র মো: রাকিব। দরিদ্র পরিবারে জন্ম হয়েছে বলেই কি লেখা পড়া বাদ যাবে তার। এমনটা মানতে রাজি না সে। আর তাই তো লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে রিকশা চালিয়ে দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে।

রিকশার চালিয়েও সে যাচ্ছে নিয়মিত স্কুলে। এক বেলা স্কুল আর এক বেলা আমতলী পৌর-শহরে রিকশা চালিয়ে পড়াশুনার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে বরগুনার আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মো. রাকিব নামের এক এতিম শিশু।

রাকিব লোচা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র। নিজের খাতা-কলম, বই-পুস্তক ও জামা-কাপড়সহ অন্যান্য খরচ জোগান দিতে খণ্ডকালীন রিকশা চালিয়ে অর্থ উপার্জন করছে এই ছাত্র।

জানা গেছে, বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বুড়িরচর গ্রামের বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের পুত্র সে। জন্মের সময় রাকিবের মা হেলেনা মারা যায়। জাহাঙ্গীর অসহায় দরিদ্র হওয়ায় জাহাঙ্গীরের বোন আফরোজা এই অসহায় এতিম বাচ্চাটিকে লালনপালন করতে নিয়ে আসেন তার স্বামীর বাড়ি আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের লোচা গ্রামে।

রাকিবের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আফরোজা জানান, জন্মের পরই ওর মা মারা যায়। তারপর আমি তাকে লালনপালন করে বড় করেছি। এবং বাড়ির পার্শ্ববর্তী লোচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করি। স্কুলে রাকিব ১ম থেকে ৫ম শ্রেণিতে প্রতি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করায় রাকিবকে লোচা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করে দিয়েছি। ও এখন ৮ম শ্রেণিতে পড়ছে।

রাকিবের পালক বাবা মো. ফোরকান খান বলেন, আমি গরিব মানুষ। নুন আনতে পান্তা ফুরায়। কোনো বেলা খেতে পারি কোনো বেলা খেতে পারি না। আমি রিকশা চালিয়ে রাকিবের পড়ালেখা চালাই। আমি অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে রয়েছি। এখন রাকিব স্কুল থেকে এসে বিকাল বেলা রিকশা চালিয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ যোগাড় করে।

সহায়-সম্বলহীন রাকিবের ফুপু পালক মা আফরোজা ও পালক বাবা ফোরকান খান আরো বলেন রিকশা চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার ঠিকমতো চলে না। এতে রাকিবের লেখাপড়া করানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে আমার পুত্র রবিউলের পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছি। রাকিব নিজে রিকশা চালিয়ে পড়ালেখার খরচ যোগাড় করে পড়ছে।


রিকশা চালানো অবস্থায় কথা হলে, মো. রাকিব (১৫) বলে- মাকে জন্মের পর দেখি নাই। ফুপু আমাকে বড় করেছে। আমার স্কুলে কাগজপত্রে আমার পিতার নাম আমার পালক বাবা ফোরকান খান ও মাতা আফরোজা বেগম লেখাইছি। আমার পড়ালেখা করতে যতটুকু শ্রম দেয়ার তা দিয়ে যামু। এসব কথা নির্বিঘ্নে ছলছল চোখে বলে মিষ্টি হাসি দিলো মো. রাকিব (১৫)।

এসময় রাকিব আরো জানান, লেখাপড়া শিখে ভবিষ্যতে মানুষ হবো। এ স্বপ্ন নিয়েই রিকশা চালিয়ে হলেও পড়ালেখা করে নিজের (পালক) বাবার ও মা’র সকল দু:খ দূর করবো। সে আরো জানায়, প্রতিদিন ঠিকমতো রিকশা চালাতে পারলে ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা আয় হয়। সে টাকা দিয়ে স্কুলের খরচ বহন করে যা থাকে সে টাকা সংসারে দিয়ে দেন।

লোচা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মান্নান মাসুদ বলেন, রাকিব মেধাবী ছাত্র। সে নিয়মিত স্কুলে আসে। পড়ালেখায়ও সে ভালো।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, রাকিব রিকশা চালিয়ে নিজে পড়ালেখার খরচের জন্য অর্থ উপার্জন করে। এতে আমি অভিভূত। তাকে সরকারি ভাবে সহযোগিতা করা হবে।

 


ঢাকা, ২৮ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ