লাইভ প্রতিবেদক: লাজ-লজ্জা আর সম্মানের তিনি কলেজ ছাড়লেন। কিভাবে সমাজে ও কলেজে মুখ দেখাবেন তা নিয়ে অস্থির ওই ছাত্রী। কোন কুল কিনারা ভেবে পাচ্ছেন না। একেত বংশের মুখে কালি মেখেছেন, আর অন্যদিকে এমন ঘটনা এখন ছড়িয়ে পড়েছে সব খানে। তিনি নাম করা ও ঢাকার অভিজাত কলেজের ছাত্রী। একেবারে জাত-কুলের মুখে চুন-কালি মেখে ঘরে আটকা পড়েছেন ওই ছাত্রীটি। না কইতে পারছেন না সইতে পারছেন।
তিনি রাজধানীর নামকরা কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী। দেখতে সুন্দরী স্মার্ট ও পুরো আধুনিকতার ছোয়ায় সমৃদ্ধ। লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। প্রেসিডেন্ট স্কাউট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। স্কাউটের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে তিনি প্রায়ই কথা বলতেন ছামিউল আজম নামের অন্য কলেজের শিক্ষার্থীর সঙ্গে। একপর্যায়ে স্কাউট সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই ছামিউলের সঙ্গে ঝামেলা হয়। প্রতিশোধ নিতে ছামিউল ওই তরুণী শিক্ষার্থীর ছবি পর্নো ছবির সঙ্গে যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে। এই ছবিই তার কাল হলো।
জানাগেছে এ ছাড়া তরুণীর পর্নো ভিডিও তৈরি করে বিভিন্ন পর্নো সাইটে আপলোড করে। পরে পর্নো ভিডিও লিংক তরুণীর কলেজের মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠায়। শিক্ষক থেকে শুরু করে অন্য শিক্ষার্থী ও তার বন্ধুরা এসব বিষয় জানতে পারে। অনেকের মোবাইলে চলে যায় মেধাবী এই শিক্ষার্থীর আপত্তিকর ভিডিও। ক্রমেই সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। শুরু হয় চারদিকে তোলপাড়। এখবর জানাজানি হয় পরিবার ও পরিজনের মাঝে।
সূত্র আরো জানায় এভাবেই ওই ভিডিও তার পাড়া মহল্লা ও তার আত্মীয়স্বজনদের কাছেও পৌঁছায়। জানাজানির পর লোক-লজ্জায় কলেজ ছাড়তে বাধ্য হন তরুণী। এখন আর তিনি কলেজে যান না। পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে উন্মাদের মতো হয়ে গেছেন। সংশ্লিস্টরা আরো জানান তিনি কিভাবে সমাজে মুখ দেখাবেন সেই চিন্তায় বিভোর। অস্থির।
এ বিষয়ে উপায়ন্তর না পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন ওই তরুণী। আদাবর থানায় করা পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম ছামিউল আজম ও তার সহযোগী তাহছিন আহমেদকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
পুলিশ জানায়, ওই ছামিউল ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী এবং তাহছিন অন্য একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে দু’টি ল্যাপটপ, ৩টি মোবাইল ফোন, ৩টি সিম কার্ড ও ১টি পেনড্রাইভ উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়।
এ জাতীয় জঘন্য অপরাধের ব্যাপারে জানাতে চাইলে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আশরাফউল্লাহ বলেন, গত বছরের ১২ই জুন তরুণীর স্কাউটের এক বন্ধু ‘এম ছামিউল আজম’ নামের ফেসবুক আইডি থেকে একটি লিংক পাঠিয়ে জানায়, সাইবার ক্রাইম সলিউশন নামক ফেসবুক গ্রুপে তার বিষয়ে খারাপ কথা লিখে এবং কয়েকটি পর্নো ছবির চেহারা মুছে তার পরিচয় উল্লেখ করে পোস্ট করেছে।
একইভাবে জানা যায়, তরুণীর আপত্তিকর ভিডিও পর্নো সাইটে আপলোড করা হয়েছে। এখানেই ছামিউল থামেনি। ভিডিও, ছবি তরুণীর কলেজের বিভিন্ন গ্রুপে পাঠায়। আপত্তিকর এসব ভিডিও বন্ধুবান্ধবসহ অনেকের মোবাইলে চলে যায়। এসব কারণে কলেজে যাওয়া বন্ধ করে ঘরবন্দি জীবন কাটানো শুরু করে ওই কলেজ শিক্ষার্থী। পরে স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে ছাত্রীর বাবা মামলা করেন।
আশরাফউল্লাহ বলেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে তরুণীকে সামাজিক ও মানসিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে এসব ভিডিও সংগ্রহ ও ছড়িয়ে দিয়েছে ছামিউল ও তার সহযোগী। তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তবে জানাগেছে ওই দুই ছাত্র আপত্তিকর নানান ধরনের কনটেইন তৈরী করে আসছে বেশ কিছুদিন ধরে।
এরা সুন্দরী মেয়েদের ফাঁদে ফেলে তাদের ছবি ও আপত্তিকর দৃশ্য ধারণ করে ভিডিও তৈরী করে তা আপলোড করে টাকা রোজগার করে। তাদের ছাড় দেয়া হবে না। আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
বাদীর অভিযোগ, তার মেয়ে বর্তমানে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের একজন ছাত্রী। পড়াশোনার পাশাপাশি স্কাউটিংসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ও সে একজন প্রেসিডেন্টস স্কাউট অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত।
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএম
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: