Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
অভিবাবকরা আছেন সংকটে

আড়াই মাসেও নতুন বই পায়নি প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০২২, ০২:১২

এম বুরহান উদ্দীন, ঝিনাইদহ থেকে: এখনও বই পায়নি অনেকেই। দুই একটি করে বই পেলেও বছরের ৩য় মাসে এসে পড়েছে দুশ্চিন্তায়। অভিভাবকরা জানালেন এভাবে চলতে থাকলে আমাদের সন্তানেরা পড়বে বিপদে। নানান শঙ্কায় সময় কাটছে তাদের। যেন দেখার কেউ নেই। বছরের প্রথমদিনে নতুন বই হাতে পাওয়ার কথা থাকলেও নবীন শিক্ষাবর্ষের আড়াই মাস পার হয়ে গেছে। বহু শিক্ষার্থীর হাতে এখনো পৌঁছায়নি সিলেবাসের সবগুলো বই। করোনা পরবর্তী সময়ে নতুনভাবে প্রাথমিক ও প্রাক প্রাথমিকের ক্লাস কার্যক্রম পুরো দমে শুরু হয়েছে। অথচ বহু শিক্ষার্থীর হাতে আছে মাত্র একটি বা দুইটি বই। এমন চিত্র ঝিনাইদহ জেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে। শহরে এ সংকট কিছুটা কম হলেও গ্রাম অঞ্চলে এর সংকট প্রকট।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার অধিকাংশ স্কুলগুলোতে ৩য়,৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছায়নি সবগুলো বই। বিভিন্ন স্কুল ঘুরে জানা যায়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা দুটি করে নতুন বই পেয়েছে। আর ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পেয়েছে মাত্র একটি। অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী এরই মধ্যে পুরোনো বই জোগাড় করতে পেরেছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় প্রাথমিকে ১ হাজার ৪৫৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৪৫ জন। এর মধ্যে ১ম ও ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সব বিষয়ে নতুন বই পেয়েছে। কিন্তু ৩য় শ্রেণির ৪৩ হাজার ৮৪৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৪ হাজার ৬১৫ শিক্ষার্থী দুটি করে নতুন বই পেয়েছে। আর ৪র্থ শ্রেণির ৪১ হাজার ৯২৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৩ হাজার ৯৭২ জন পেয়েছে নতুন দুটি করে বই। ৫ম শ্রেণির ৩৫ হাজার ৭৬২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৫ হাজার ৯৭০ জন শিক্ষার্থী পেয়েছে মাত্র একটি করে নতুন বই। সেটি বাংলা।

জানা গেছে, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরোনো বই সংগ্রহ করে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসের ছয়টি বই জোগাড় করতে পেরেছে মাত্র ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী। প্রথম দিকে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণিতে চাহিদার তুলনায় অল্পসংখ্যক বই আসায় শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুটি করে বিভিন্ন বিষয়ের বই ভাগ করে দেন।

যদিও শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের দাবি, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা চারটি করেই নতুন বই পেয়েছে। আর ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তিনটি বিষয়ের নতুন বই পায়নি। আর জেলায় মোট বইয়ের চাহিদা ছিল ১০ লাখ ৮ হাজার ৫৩১ টি, বিপরীতে পাওয়া গেছে ৬ লাখ ৫৫ হাজার বই।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া রহমান বলে, ‘আমি স্কুল থেকে গিয়ে বাড়িতে বাংলা ছাড়া অন্য কোনো বই পড়তে পারি না। স্কুলে ম্যাডামেরা পড়ালেও বাড়িতে গিয়ে পড়তে না পারায় ইংরেজি, গণিতসহ অন্যান্য বিষয় ভালো মনে থাকে না।’

করোতিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল বলে, ‘স্কুল থেকে একটি বই দিয়েছেন স্যারেরা। তাই বাড়িতে অন্য বিষয় পড়তে পারি না। শুধু স্কুলে এসে সহপাঠীদের বই নিয়ে পড়তে হয়। বন্ধুরা অনেক সময় বই দিতে চায় না।’ ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী অনন্যা বিশ্বাস বলে, ‘নতুন ক্লাসে উঠেছি। নতুন বই পড়ব। কিন্তু এখন পুরোনো ছেঁড়া, দাগানো বই পড়তে ভালো লাগে না।’

বই না পাওয়ায় চিন্তিত অভিভাবকেরাও। সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাদিরা খাতুন বৃষ্টি ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘আমার মেয়ে সম্প্রতি দুইটা বই পেয়েছে। তারা বই না পাওয়ায় বাসায় ঠিকমতো পড়াতে পারি না। কারণ তারা লিখবে ও পড়বে। কিন্তু যদি পড়তেই না পারে তাহলে লিখবে কী করে!’

আরেক অভিভাবক তরিকুল ইসলাম ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘বছরের প্রথম দিনে বই দেওয়ার কথা। কিন্তু আজও পূর্ণ বই পেল না তারা। তাহলে বছরের প্রথম দিনে বই দেওয়ার কথা বলে ছাত্রছাত্রীদের আশ্বাস দেওয়ার কী দরকার?’

করোনার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এমনিতেই শিশুদের লেখাপড়ায় অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এখন আবার তারা বই পাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে প্রাথমিকের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। এমন মন্তব্য করেন লাউদিয়া এলাকার অভিভাবক নাসিমা খাতুন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঝিনাইদহ সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লক্ষ্মী রানী পোদ্দার ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিকের তিনটি শ্রেণি রয়েছে। এই শিক্ষার্থীরা নতুন বই না পাওয়ায় লেখাপড়ার তো অবশ্যই ক্ষতি হচ্ছে। আমরাও ঠিকমতো পাঠদান করতে পারি না। তাদের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। প্রায় প্রতিদিনই তারা বলতেই থাকে, বই দিবেন কবে, বই দিবেন কবে।’

বছরের শুরুর দিনে নতুন বই দেওয়ার কথা থাকলেও হাতে বই না আসেনি জানিয়ে লাউদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা পর্শিয়া খানম ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘কিছু পুরোনো বই ম্যানেজ করে পাঠদান চালাচ্ছি। পুরোনো বই এর আগে বেশ কয়েক বছর দরকার পড়েনি। আবার গ্রামের স্কুলের শিক্ষার্থীরা বই ঠিকমতো রাখেনি। তাই পুরোনো বইও সব ম্যানেজ করা যায়নি।’

বই সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দু-একটি করে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান করোতি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাবের হোসেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীর তুলনায় ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণিতে যে বই পেয়েছিলাম তা অনেক কম। তাই সবগুলো বই দুটি করে ভাগ ভাগ করে শিক্ষার্থীদের দিয়েছি।’

এতদিনেও বই না আসার বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘সব শিক্ষার্থীকে বই দেওয়া হয়েছে। দু-একটি বিষয়ে বই দিতে পারিনি।’ তবে স্কুল খুলে যাওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রমে কোনো সমস্যা হয়নি বলে মনে করেন তিনি।

কবে নাগাদ এ সংকট দূর হবে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম ক্যাম্পাসলাইভকেবলেন, ‘অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, প্রিন্টিং কার্যক্রমের দায়িত্বরতদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে প্রাথমিকে বই ছাপানোতে কিছু সমস্যা হয়েছে। অতি দ্রুতই বই পেয়ে যাব এবং শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।’

ঢাকা, ১৯ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ