Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

করোনাকালে বাল্যবিয়ের হিরিক: নবম শ্রেণীর নার্গিস এখনও একা!

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বার ২০২১, ২১:৩৪

কুড়িগ্রাম লাইভ: বাল্য বিয়ের হিড়িক পড়েছে। গ্রামের পর গ্রামের কিশোরী স্কুল পড়ুয়াদের বিয়ে হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। কুড়িগ্রাম সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় ধুমধাম করে হচ্ছে কিশোরীদের আকদ ও বিয়ে। কেউ যেন দেখার নেই। এরই ধারাবাহিকতায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নার্গিস নাহারও ওই এলাকার স্কুল পড়ুয়াদের একজন। সে অস্টম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণীতে উঠেছে। কিন্তু তার সহপাঠিদের সকলেরই ধুমধাম করে বিয়ে হয়েগেছে। বাকী এখন নার্গিস নাহারের। সে একাই ক্লাসে যাচ্ছে। সে পড়াশনাতেও ভাল।

ওই এলাকার একজন স্কুল শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অষ্টম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় নার্গিসসহ তার আটজন সহপাঠী ছিলো। নার্গিস ও তার আট বান্ধবী অষ্টম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তিও হয়। কিন্তু লকডাউনের সময় স্কুল বন্ধ থাকা অবস্থায় একে একে নার্গিসের আটজন বান্ধবীর বিয়ে হয়ে যায়। এখন নবম শ্রেণিতে নার্গিস নাহারই একমাত্র ছাত্রী। সে একা একা ক্লাস পরীক্ষাও দিচ্ছে। পড়ছেও মনযোগ দিয়ে।

জানাগেছে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী নার্গিস। যার এখন কথা বলার কোনো সঙ্গী নেই। করোনা মহামারীতে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খুলেছে। স্কুল খোলার পর থেকে শুধু নার্গিস নাহারই ক্লাসে আসে। বান্ধবীদের ছাড়া মন খারাপের মধ্য দিয়েই স্কুলে সময় কাটছে তার।

Caption

 

এসব বিষয়ে সেই নার্গিস নাহার জানান, “এখন শুধু আমিই বাকি রয়েছি। আমি আমার পড়াশুনা চালিয়ে যেতে চাই। ক্লাসজুড়ে আমি শুধু একা। কারো সাথে কোনো কিছু শেয়ার করতে পারি না। তাই মন খারাপ করেই ক্লাস করতে হচ্ছে।” এটা আমার নিত্য দিনের কাহিনী। তবে এমন হবে এটা ভাবতেও পারিনি। আমার বান্ধবীরা সকলেই এখন স্বামীর সংসারে আছে।

একা একা ক্লাস প্রসঙ্গে নার্গিস আরও জানায়, বান্ধবীদের বিয়ে হয়ে গেছে। তাই আমার মধ্যেও অজানা শঙ্কা কাজ করছে। আমার শেষ পরিণতি কী হবে তাও অজানা। আমি আমার বাবা-মাকে অনুরোধ করেছি, আমাকে যেন হঠাৎ করে বিয়ে না দেয়। আমি পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করে নিজের অবস্থা তৈরি করেই বিয়ে করব। এর আগে নয়। অন্যের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না আমি। আমি পরিশ্রমি। আমার মেধার সর্ব্বোচ্চ ব্যবহার করতে চাই।

এদিকে সরেজমিন সারডোব উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় ৯ম শ্রেণির ছাত্রী নার্গিস নাহার ক্লাস করছেন। এক পাশে ছাত্ররা এবং অন্য পাশে নার্গিস একা বসে আছেন। সে কারো সাথে তেমন কোন শেয়ার করতে পারছে না। মন খারাপ থাকে হরহামেশা।

এ বিষয়ে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফজলে রহমান জানান, তার বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ২২৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৩ জন ছাত্রী। এদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ ছাত্রী এবং ৭০ শতাংশ ছাত্র বিদ্যালয়ে উপস্থিত হচ্ছে। বাকিদের খোঁজ খবর নিতে শিক্ষকদের নিয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। আমরা শিক্ষকদের মাধ্যমে সকলের সন্ধান শুরু করেছি। কারা কি করছে কেন আসছে না এ বষয়টি কয়েকদিনের মধ্যেই জানা যাবে।

প্রধান শিক্ষক আরো জানান, “তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিদ্যালয়ে না আসার প্রকৃত কারণ জানতে পারবেন। প্রাথমিক তথ্য মতে স্কুলের ১৮ জন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির চার জন ছাত্রীর মধ্যে জেসমিন ছাড়া বাকি তিন জনেরই বাল্যবিয়ে হয়েছে। ৯ম শ্রেণিতে নয় জনের মধ্যে নার্গিস ছাড়া আট জনের বিয়ে হয়েছে।” বিষয়টি নিয়ে এলাকায় নানান আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে।

তাছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণির একজন, সপ্তম শ্রেণির দুজন, অষ্টম শ্রেণির চার জনকে পরিবার থেকে গোপনে বিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ফজলে রহমান। তিনি বলে এই এলাকায় অল্প বয়সে অর্থাৎ বাল্য বিবাহের একটা প্রচলন আছে। তবে নানান প্রচার-প্রচারণার ফলে আগের তুলনায় এই সংখ্যা অনেক কমে আসছে। আমরা আশাকরি অদুর ভবিষ্যতে বাল্য বিয়ে বন্ধ হয়ে যাবে।

ঢাকা, ১৭ সেপ্টেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ