বগুড়া লাইভ: হায়রে শিক্ষক। হায়রে শিক্ষার হাল-চাল! প্রধান শিক্ষকের কক্ষেই বসে নিয়মিত জুয়ার আসর। আর সভাপতি তার কক্ষে মাদক সেবন করেন। শুধু তারাই নন তাদের একটি সিন্ডিকেট নিয়মিত এই অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ মিলেছে। ওই জুয়ার আসরের ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে রাজি হতো না। ভয়েও কেউ আশ- পাশে যেত না বলেও এলাকাবাসীর দাবী। এনিয়ে গোটা এলাকায় তোলপাড় চলছে।
এলাকাবাসী জানান, বগুড়া পৌর প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক অফিসকক্ষে বসে খেলেন জুয়া। এমন অভিযোগ পরস্পরের বিরুদ্ধে বেশ জোরালোভাবে উঠেছে। প্রধান শিক্ষক জহুরুল আলম তার অফিসকক্ষে বসে সহকারী কয়েকজন শিক্ষক এবং তার বন্ধুদের নিয়ে জুয়া খেলার একটি ছবি প্রকাশ হওয়ার পর অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্রপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
বগুড়া সদর থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামান ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ফেনসিডিল সভাপতির কক্ষে তার সহকারী লিখনের টেবিলে পাওয়া যায়। সেজন্য সভাপতিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তার টেবিলে পাওয়া গেলে তাকেও গ্রেপ্তার করা হতো।
অপরদিকে ওই স্কুলের সভাপতি স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নাসিমুল বারি নাসিম স্কুলের একটি কক্ষ দখল করে আলিশান অফিস তৈরি করেছেন। সেই অফিসে বসে তিনি ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। সেই সঙ্গে স্কুল ছুটির পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে তিনি মদ, ফেনসিডিল খাওয়ার আসর বসাতেন।
এমন অভিযোগের ভিক্তিতে মঙ্গলবার বগুড়া সদর থানা পুলিশ তার কক্ষে অভিযান চালিয়ে ফেনসিডিলের বোতল উদ্ধার করেছে। সেই সঙ্গে রড, একটি দা এবং কিছু পাথর পাওয়া যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নাসিমের সহকারী লিখন নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। সভাপতি নাসিম সেসময় ওই কক্ষেই ছিলেন।
পুলিশ তাকেও গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে হাতকড়া পরালেও শেষ পর্যন্ত তাকে ছেড়ে দিয়েছে। এমন কি মঙ্গলবার রাতে ওই ঘটনায় বগুড়া সদর থানায় একটি মাদক মামলা হলেও নাসিমকে আসামি পর্যন্ত করা হয়নি। এদিকে সভাপতির সঙ্গে শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে স্কুলের প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থীর পড়াশোনায় চরম ব্যাঘাত ঘটছে।
শিক্ষকরা আন্দোলনে গেলে কয়েক দিন ওই স্কুলে ঠিকমতো ক্লাস হয়নি। সভাপতি নাসিমের অবৈধ অফিস কক্ষ: স্কুল ভবনের কক্ষে কোনোভাবেই সভাপতির চেম্বার থাকার কোনো নিয়ম না থাকলেও ক্ষমতার জোরে নাসিম ওই স্কুল ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি আলিশান অফিস কক্ষ তৈরি করেছেন। সেই অফিসে উন্নতমানের ডেকোরেশন, এসি এবং পাশে তার পিএস-এর জন্য আরো একটি চেম্বার তৈরি করেছেন।
সেখানে বসে তিনি ব্যবসায়ী কার্যক্রমের পাশাপাশি রাতের আঁধারে মদের আসর বসান। এমন অভিযোগ তুলছেন প্রধান শিক্ষক নিজেই। মদের আসরের সঙ্গে সেখানে অনৈতিক কার্যকলাপের কথাও বলেছেন শিক্ষকরা। সেই সঙ্গে স্কুলের সামনের অংশের বাণিজ্যিক ভবনে কয়েকটি কোম্পানির শো-রুম রয়েছে। সেই শো-রুমগুলো থেকে মাসিক যে ভাড়া ওঠে তা সভাপতি নিজেই নিয়মিত তুলে নেন।
ওই স্কুলের শিক্ষক মাহবুবর রহমান জানান, গত ১৫ মাসে নাসিম ওই বাণিজ্যিক ভবনের ভাড়ার টাকার কোনো প্রকার হিসাব স্কুলকে দেননি। তিনি সব টাকাই আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করেন। এমন কী ওই ভবন থেকে কত টাকা মাসিক উত্তোলন করা হয় সেই হিসাবও শিক্ষকরা কেউ জানেন না।
প্রধান শিক্ষক জহুরুল আলমের বিরুদ্ধেও অনিয়মের অভিযোগ: একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক জহুরুল আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ১ কোটি ৬ লাখ ৮১ হাজার ৩৯৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা হয়েছে। সম্প্রতি ১৯শে জুন ম্যানেজিং কমিটির একটি বৈঠকে তাকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই মোতাবেক তাকে পত্র প্রেরণ করা হয়। এদিকে প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কারের পর এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা গতকাল রোববার ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন।
বুধবার দুপুরে তার বিরুদ্ধে আবারো বিভিন্ন অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে নাসিম প্রধান শিক্ষক জহুরুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন খাতের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ওই শিক্ষক ২০১৪ সালের ৪ঠা জুলাই স্কুল ফান্ড থেকে ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। সেখান থেকে তিনি পরে ৩ লাখ টাকা ফেরত দেন। বাকি টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন।
এছাড়া স্কুলের পুরাতন টেস্ট খাতা বিক্রির টাকাও স্কুলে জমা দেননি। তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে এফডি আরের ১৫ লাখ টাকার আত্মসাতের অভিযোগও করেন সভাপতি নাসিম। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে মহাপরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পাঠানো একটি নোটিশে তার এমপিও স্থগিত করা হয়েছিল।
এদিকে অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক জহুরুল আলম বলেন, ওই সব বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলবেন না। জুয়া খেলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি জুয়া খেলিনি তবে ব্রিজ খেলেছি। (ব্রিজ টাকা ছাড়া তাস খেলার একটি নাম)।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নাসিমুল বারী নাসিম ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, মঙ্গলবারে তার কক্ষে পুলিশি অভিযান ছিল উদ্দেশ্যমূলক। সেখান থেকে যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেই লিখন তার কেউ নয়। যদিও তিনি লিখনকে গ্রেপ্তারের সময় বলেছিলেন সে তার গাড়িচালক এবং ব্যক্তিগত সহকারী।
ঢাকা, ২৯ জুন (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এইউবি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: