Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৪, ১৭ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের মর্যাদা ও আমল

প্রকাশিত: ২৪ আগষ্ট ২০১৭, ০৬:০০


প্রফেসর আ.ন.ম. রশীদ আহমাদ: জিলহজ্জ মাস একটি সম্মানিত মাস। এ মাস হজ্জের মাস। এ মাসের প্রথম দশ দিন খুবই মর্যাদা সম্পন্ন। আল্লাহ বলেন, ‘শপথ ভোরের এবং শপথ দশ রাতের।’ (আল ফজর : ১-২)


আল্লাহ যে দশ রাতের শপথ নিয়েছেন, তা হলো জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ রাত ও দিন।


আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘এই দশ দিনের আমলের মত অন্য কোন দিনের নেক আমল আল্লাহর কাছে এত বেশি প্রিয় নয়।’

সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? ‘না আল্লাহর পথে জিহাদও নয়, তবে ঐ ব্যক্তি যে জীবন ও সম্পদ নিয়ে জিহাদের জন্য বের হয়ে আর কোন দিন ফিরে আসেনি।’ (সুনান আবূ দাউদ-২৪৩৮, সুনান ইবনু মাজাহ-১৭২৭)


যারা হজ্জে যায় তাদের জন্য এ দশ দিনে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো- হজ্জের সাথে সম্পৃক্ত সকল বিধান সহী সুন্নাহ অনুযায়ী যথাযথভাবে সম্পন্ন করা। যারা হজ্জে যায়নি তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো কুরবানী করা।


এখানে উল্লেখ্য যে, যারা কুরবানী দিবে তারা কুরবানীর আগ পর্যন্ত চুল, লোম ও নখ কাটবে না। উম্মু সালামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা যখন জিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখবে, তখন তোমাদের মধ্যে যে কুরবানী দিতে চায় সে যেন কুরবানী করার আগ পর্যন্ত চুল, পশম ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।’ (সহীহ মুসলিম-১৯৭৭)


এই দশ দিন ও রাতে একজন মুমিন বেশি বেশি করে যিকর করবে, কুরআন তিলাওয়াত করবে, দান সাদাকাহ করবে। ঈদের দিন বাদ দিয়ে বাকি নয় দিন রোযা রাখবে।


রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম জ্বিলহজ্জ মাসের নয় দিন, আশূরার দিন এবং প্রতি মাসের তিন দিন রোযা রাখতেন। (সুনান আবূ দাউদ-২৪৩৭) এ দিনগুলোতে বেশি বেশি তাকবীর তথা ‘আল্লাহু আকবার’ বলতে হবে।


ইমাম বুখারী (রাহি.) বর্ণনা করেন যে, আবদুল্লাহ বিন উমার (রা.) ও আবূ হুরাইরা (রা.) জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন যখন বাজারে যেতেন তখন তাকবীর বলতেন, আর লোকজন তাঁদের তাকবীরের সাথে তাকবীর বলতেন।
তিনি (ইমাম বুখারী রা.) আরো বলেন, উমার (রা.) মিনায় তাঁর তাঁবুতে তাকবীর দিতেন, মসজিদে অবস্থান করা লোকজন তা শুনে তাকবীর দিতেন, বাজারের লোকজন তাকবীর দিতেন। এসব তাকবীরে যেন মিনা প্রকম্পিত হয়ে উঠতো।


আরাফাহ দিবসের করণীয়
জিলহজ্জ মাসের নবম তারিখ হলো ‘ইয়াওমু আরাফাহ’ বা আরাফ দিবস। এ দিন হাজীগণ আরাফাত ময়দানে অবস্থান করেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ আরাফাহ দিবসের চেয়ে অন্য কোন দিন এত অধিক সংখ্যক বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন না। তিনি নিকটবর্তী হন অতঃপর তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাগণের সামনে গর্ব করেন এবং বলেন, এরা কী চায়?’ (সহীহ মুসলিম-১৩৪৮)


আরাফাহ দিবসে হাজীগণ সূর্য উঠার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাত ময়দানে অবস্থান করবেন। এ সময়ে তারা বিভিন্ন ধরনের যিক্্র করবেন। কুরআন তিলাওয়াত করবেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদ পড়বেন। বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে অতীতের অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইবেন। ভবিষ্যতে আরো বেশি ভাল কাজ করার জন্য আল্লাহর কাছে তাওফীক চাইবেন। এ দিনের সর্বোত্তম দু‘আ কোনটি এ প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সর্বশ্রেষ্ঠ দু‘আ হলো, আরাফাহ দিবসের দু‘আ। আমি ও আমার পূর্বেকার নবীগণ সর্বশ্রেষ্ঠ যে কথাটি বলতাম তা হলো-
আরাফাত ময়দানের বাইরে যারা আছেন অর্থাৎ যারা হজ্জ করছে না, এ দিন তাদের করণীয় হচ্ছে রোযা রাখা।


রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লামকে আরাফাহ দিবসের রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,
‘এ রোযা গত বছর ও আগামী বছরের গুনাহ মার্জনা করে দেয়।’ (সহীহ মুসলিম-১১৬২)
আরাফার রোযা রাখতে হবে কবে?


আরাফার রোযা নিয়ে একটি মতপার্থক্য লক্ষণীয়, আর তাহলো এ রোযাটি রাখতে হবে কবে? কেউ কেউ বলেন এ রোযাটি রাখতে হবে আমাদের দেশের চাঁদ দেখা অনুযায়ী ৯ই জিলহজ্জ। আবার অনেকে বলেনÑ আরাফার রোযা রাখতে হবে আরাফাহ দিবসে অর্থাৎ হজ্জের দিন। দু’টি মতের মধ্যে সঠিক কোনটি?


আরাফাহ দিবসের রোযার সম্পর্ক আরাফাত ময়দানে হাজীগণের অবস্থানের সাথে। তাই রোযা রাখতে হবে আরাফাহ দিবসে। নিজ নিজ দেশের ৯ই জিলহজ্জ নয়।


এ রোযার দর্শন হচ্ছে, হাজীগণ আরাফাত ময়দানে অবস্থান করে নানা ধরনের ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করছে। আরাফাত ময়দানের বাইরে যাদের অবস্থান তারা রোযার মাধ্যমে তাদের সাথে শরীক হবে। পাকভারত উপমহাদেশের বাইরে সকল দেশের মুসলিমগণ এ দর্শনের ভিত্তিতে আরাফাহ দিবস তথা আরাফাত ময়দানে হাজীগণের অবস্থানের দিন রোযা রাখে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিতর্ক নেই। আমাদের এ অঞ্চলে বিষয়টি নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়।


মনে রাখতে হবে যে, আমাদের দেশে যে দিন ৯ই যিলহজ্জ, সে দিন হাজীগণ আরাফাত ময়দানে থাকেন না। সেদিন আরাফাত ময়দান থাকে হাজীশূন্য। অতএব এটি আরাফাহ দিবসই নয়। তাই এ দিনের রোযা হাদিসে বর্ণিত আরাফাহ দিবসের রোজা নয়।


আইয়্যামে তাশ্রীকের আমল
আইয়্যামে তাশরীক হলো জিলহজ্জ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ। এ দিনগুলোও ঈদের দিন বলে বিবেচিত হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আরাফাহ দিবস (হাজীদের জন্য), কুরবানীর দিন এবং আইয়্যামে তাশরীক হলো আমাদের ইসলাম অনুসারীদের জন্য ঈদ।’ (সুনান তিরমিযী-৭৭৩ ও সুনান আবূ দাউদ-২৪১৯)


তিনি আরো বলেছেন, ‘আইয়্যামে তাশরীক হলো পানাহারের দিন।’ অপর বর্ণনায় রয়েছে ‘এবং আল্লাহর যিক্্রের দিন।’ (সহীহ মুসলিম-১১৪১) যেহেতু আইয়্যামে তাশরীকের তিন দিনও ঈদের দিন বলে বিবেচিত এবং এ তিন দিন পানাহারের দিন তাই এ তিন দিনেও দুই ঈদের দিনের মত রোযা রাখা যাবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘এ দিনগুলোতে তোমরা রোযা রাখবে না। কেননা এ দিনগুলো হলো পানাহার ও মহান আল্লাহর যিক্রের দিন।’ (মুসনাদে আহমাদ-১০৬৬৪)


আইয়্যামে তাশরীকে তাকবীর তথা আল্লাহু আকবার বলতে হয়। এ তাকবীর দু’ধরনের। সাধারণ তাকবীর ও বিশেষ তাকবীর। সাধারণ তাকবীর হলো জিলহজ্জ মাসের প্রথম দিন থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত যে কোন সময় তাকবীর বলা। ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আবদুল্লাহ বিন উমার (রা.) ও আবূ হুরাইরা (রা.) বাজারে গিয়েও সশব্দে তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলতেন, তাঁদের তাকবীর শুনে লোকজনও তাকবীর বলতেন।’


বিশেষ তাকবীর হলো- প্রতি ফরয সালাতের পর তাকবীর। এটি শুরু হবে আরাফা দিবসের ফজরের পর এবং শেষ হবে তের তারিখ আসরের পর।
এ তাকবীর হলো,
এ তাকবীর নারী ও পুরুষ সকলেই বলবে। জামাতে সালাত আদায় করলেও বলবে, একাকী সালাত আদায় করলেও বলবে।

এ তাকবীর কত বার বলতে হবে?
ফরয সালাতের পর পঠিত তাকবীরের নির্ধারিত সংখ্যা কোন হাদীসে উল্লেখ করা হয়নি। তাই বেশি বেশি তাকবীর বলাই উত্তম। তাকবীরের সংখ্যা তিনবার নির্ধারণ করার পক্ষে কোনো দলীল নেই।

 

ঢাকা, ২৩ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএইচ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ