Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

তারাবীহ: একটি পর্যালোচনা

প্রকাশিত: ২১ আগষ্ট ২০১৭, ০৪:৩৮

রশীদ বিন মুজিব আল-মাদানী: রামাদান মাসে বিশেষ এক ধরনের সালাত পড়া হয়, যাকে সালাতুত তারাবীহ— তারাবীহর সালাত বলা হয়। এ সালাত খুবই গুরুত্বের সাথে আদায় করা হয়। এমনকি যারা ফরয সালাত নিয়মিত আদায় করে না, তারাও তারাবীহর সালাত আদায় করে। অনেকে সারা বছর ফরয সালাত আদায় করে না। কিন্তু রামাদান মাসে কোনো সালাত বাদ দেয় না।

মুসলিম হিসাবে আমরা যেসব ইবাদত সম্পন্ন করবো, তার দুটি নীতিগত ভিত্তি থাকতে হবে। একটি হলো, কাজটি হতে হবে সঠিক পদ্ধতিতে; আর অপরটি হলো, তা হবে নিছক আল্লাহর জন্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘যে তার রবের সাক্ষাৎ চায়, সে যেন সঠিক কাজ করে এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না বানায়।’ (১৯০: আলকাহ্ফ)

কোনো ইবাদত পদ্ধতিগত দিক থেকে সঠিক হলেও তা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য না হয়ে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে হয় তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আবার ইবাদাতটি যদি আল্লাহর উদ্দেশ্যেই হয়, অথচ পদ্ধতিগতভাবে সঠিক নয়, তাও ইবাদাত হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবে না।

রামাদানে দিনের বেলা কষ্ট করে সাওম  (রোযা) পালন করে, রাতে দীর্ঘ তারাবীহর সালাত আদায় আল্লাহর উদ্দেশ্যেই হয়ে থাকে। এটি আল্লাহর কাছে কবুলযোগ্য হবার জন্য অবশ্যই সঠিক পদ্ধতিতে হতে হবে।

সালাতুত তারাবীহ বা তারাবীহর সালাত যেহেতু একটি ইবাদাত সেহেতু সহীহ সুন্নাহর আলোকে এর গুরুত্ব, মর্যাদা, রাকাত সংখ্যা, আদায়ের সময় ও পদ্ধতি যথাযথভাবে জানা প্রয়োজন।

তারাবীহ সালাতের মর্যাদা

হাদীসে সালাতুত-তারাবীহ- তারাবীহর সালাত এ নামটি নেই। হাদীসে বলা হয়েছে ‘কিয়ামে রামাদান’। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে রামাদানে ঈমানের সাথে এবং সাওয়াবের আশায় রামাদানে কিয়াম করবে, তার অতীতের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ওপর রামাদানের সিয়াম (রোযা) ফরয করেছেন আর আমি তোমাদের জন্য তার কিয়ামকে সুন্নাত করেছি। অতএব যে ঈমানের সাথে এবং সাওয়াবের আশায় কিয়াম করবে তার পূর্বের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (সুনান তিরমিযী)

হাদীসে উল্লেখিত ‘কিয়াম’ অর্থ হলো সালাত আদায়। এ সালাত হলো ফরয সালাতের বাইরের সালাত। এ হদীস থেকে প্রমাণিত হলো যে, রামাদানে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও বিত্রের সালাতের বাইরে বিশেষ সালাত আছে, আর সে সালাতই তারাবীহর সালাত হিসাবে পরিচিত।

তারবীহর সালাতের সূচনা

রামাদান মাসের এ বিশেষসালাতের সূচনা সম্পর্কে ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহার সূত্রে বর্ণনা করেন,‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গভীর রাতে ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদে এসে সালাত শুরু করলেন। (মসজিদে উপস্থিত) লোকজন তাঁর সাথে সালাত আদায় করলো। পরে লোকজন এ সালাত নিয়ে বলাবলি শুরু করলো। দ্বিতীয় রাতে আরো বেশি লোকজন উপস্থিত হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রাতেও বের হলেন। লোকজন এ সালাত নিয়ে আলোচনা করলো। তৃতীয় রাতে মসজিদে লোকজনের উপস্থিতি আরো বেড়ে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন। লোকজন তাঁর সাথে সালাত আদায় করলো। চতুর্থ রাতে লোকজনে মসজিদ ভরে গেল। এ রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন না। লোকজন বলতে লাগলো ‘সালাত’ ’সালাত’ (নামায, নামায)। কিন্তু তিনি বের হলেন না। তিনি ফজরের সালাত আদায় করে লোকদের দিকে মুখ করে আল্লাহর উলুহিয়্যাত ও রিসালাতের সাক্ষ্য দেয়ার পর বললেন, ‘তোমাদের রাতের বিষয়টি আমার কাছে অস্পষ্ট নয়। তবে আমার ভয় হচ্ছিল যে, রাতের এ সালাতটি তোমাদের ওপর ফরয হয়ে গেলে তোমরা তা আদায়ে অপারগ হয়ে পড়বে।’

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু পর্যন্ত আর কখনো কিয়ামে রমাদান বা তারাবীহর সালাত জামাতে পড়েননি। আবুবকর রাদিআল্লাহু আনহুর সময়ও এ সালাত জামাতে পড়া হতো না। ইমাম সুয়ূতী (রাহি.) বলেন, ‘আমীরুল মুমিনীন উমার রাদিআল্লাহু আনহু সর্বপ্রথম জামাতের সাথে কিয়ামে রামাদান (তারাবীহর সালাত) শুরু করেন।’ (তারীখুল খুলাফা-খলীফাগণের ইতিহাস)

মুহাম্মাদ বিন সা‘দ বলেন, ‘উমার রাদিআল্লাহু আনহু ১৪ হিজরী সনের রামাদান মাসে জামাতে তারাবীহ চালু করেন।।’ (তাবাকাত)

ইমাম বুখারী (রাহি.) আবদুর রাহমান বিন আবদুল কারীর সূত্রে বর্ণনা করেন, ‘আমি রামাদানের এক রাতে উমার বিন আল-খাত্তাবের (রা.) সাথে মাসজিদের উদ্দেশ্যে বের হলাম। দেখলাম, লোকজন বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। কেউ একাকী সালাত আদায় করছে, আবার কেউ কয়েকজনকে নিয়ে জামাতে সালাত আদায় করছে। উমার (রা.) বললেন, ‘আমি ভাবছি যদি লোকজনকে এক ইমামের সাথে একত্রিত করে দিতে পারতাম, তাহলে এটি উত্তম হতো।’ তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে উবাই বিন কা‘বের ইমামতিতে সবাইকে একত্রিত করে দিলেন।

তারপর তাঁর সাথে আরেক রাতে বের হলাম; তখন লোকজন তাদের ইমামের সাথে সালাত আদায় করছে। উমার (রা.) বললেন, এটি কতই না সুন্দর ব্যবস্থা।

তবে, যারা এখন (সালাত আদায় না করে) ঘুমায়, তারা (এখন যারা) সালাত আদায় করছে, তাদের চেয়ে উত্তম।

এর দ্বারা তিনি বুঝাতে চেয়েছেন শেষ রাত, আর লোকেরা প্রথম রাতে সালাত আদায় করতো।’ (সহীহুল বুখারী)

তারাবীহর সালাতের মর্যাদা ও তারাবীহর সালাতের সূচনায় বর্ণিত হাদীসসমূহ থেকে যে বিষয়গুলো জানা গেল, তা হলো-

১. সালাতুত-তারাবীহ- তারাবীহর সালাত- এ নামটি হাদীসে নেই। হাদীসের পরিভাষা হলো- ‘কিয়ামে রামাদান’ অর্থাৎ রামাদনের রাতের সালাত।

২. সালাতুত-তারাবীহ একটি সুন্নাত সালাত; যেটি প্রবর্তন করেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো এক রামাদানে তিন রাত মাসজিদে এ সালাত আদায় করেছেন, উপস্থিত সাহাবীগণ তাঁর সাথে এ সালাতে শরীক হয়েছেন।

৪. এ তিন রাত ছাড়া তিনি তাঁর জীবদ্দশায় আর কখনো এ সালাত মাসজিদে জামাতে আদায় করেননি।

৫. তিনি এ সালাত আদায় করেছেন গভীর রাতে। হাদীসে ‘জাউফুল-লাইল’ বলা হয়েছে। এর অর্থ গভীর রাত।

 ৬. তিনি এ সালাত কত রাকাত পড়েছেন, তা এখানে সুস্পষ্ট নয়। যে হাদীসে এ সালাতের মর্যাদা বলা হয়েছে যে, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াবের আশায় রামাদানের কিয়াম করবে, তার আগের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে’- তাতেও রাকাত সংখ্যা উল্লেখ নেই।

৭. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় তিন রাত ছাড়া বাকী জীবনে, আবু বকর রাদিআল্লাহু আনহুর সময় এবং উমার রাদিআল্লাহু আনহুর সময়ের প্রথম দিক পর্যন্ত দীর্ঘ সময় তারাবীহর সালাত জামাতে হতো না।

৮. উমার (রা.) সর্বপ্রথম একজনের ইমামতিতে জামাতে এ সালাত আদায় চালু করেন।

৯. উমার (রা.) নিজে জামাতে এ সালাত নিয়মিত আদায় করেননি। এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনু হাজার বলেন, ‘এতে বুঝা যায় উমার (রা.) তাদের সাথে (জামাতে) নিয়মিত এ সালাত আদায় করতেন না। বরং তিনি মনে করতেন, এ সালাত তাঁর ঘরে এবং বিশেষ করে শেষ রাতে পড়া উত্তম।’ (ফতহুল বারী, চতুর্থ খ-)

১০. তারাবীহর সালাত প্রথম রাতে পড়ার চেয়ে শেষ রাতে পড়া উত্তম। উমার রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, ‘যারা এখন (সালাত আদায় না করে) ঘুমায় তারা, এখন যারা সালাত আদায় করছে তাদের চেয়ে উত্তম।’

এ সালাতকে কেন তারাবীহ সালাত বলা হয়

হাদীসে এ সালাতকে বলা হয়েছে- কিয়ামে রামাদান- রামাদানের রাতের সালাত। পরবর্তীতে এটি তারাবীহর সালাত হিসাবে পরিচিত হয়।

তারাবীহশব্দটির একবচন তারবীহাহ। এর অর্থ প্রশান্ত করা।

এ সালাত দীর্ঘ সালাত। মুসল্লীগণ প্রতি চার রাকাতের পর একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার সালাত আদায় করেন, এজন্য এটিকে তারাবীহর সালাত বলা হয়।

ইবনু মানজুর বলেন, ‘তারাবীহ-তারাবীহাহ শব্দের বহুবচন। তারাবীহাহ অর্থ: একবার বিশ্রাম নেয়া। রামাদানের তারাবীহার নাম এজন্য হয়েছে যে, যারা এ সালাত আদায় করে, তারা প্রতি চার রাকাত পর বিশ্রাম নেয়।’ (লিসানুল আরব)

তারাবীহ সালাতের রাকাত সংখ্যা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাত মাসজিদে কিয়ামে রামাদান তথা রামাদানের রাতের সালাত আদায় করেছেন। মাসজিদে উপস্থিত লোকজন তাঁর সাথে এ সালাতে শরীক হয়েছেন।

এ বিষয়টি যেসব বর্ণনায় এসেছে তাতে রাকাত সংখ্যার উল্লেখ নেই। উমার (রা.) উবাই বিন কা‘ব (রা.)-কে ইমাম বানিয়ে জামাতে এ সালাত আদায়ের প্রচলন শুরু করেছেনন, তাতেও রাকাত সংখ্যার উল্লেখ নেই। তারাবীহর সালাতের রাকাত সংখ্যায় প্রধানত দুটি মত দেখা যায়।

১. তারাবীহ আট রাকাত।

২. তারাবীহ বিশ রাকাত।

তারাবীহ আট রাকাত

যারা তারাবীহ আট রাকাত- এ মতটি পোষণ করেন, তারা আবার দু’ভাগে বিভক্ত। কেউ মনে করেন আট রাকাতের বেশিও পড়া যাবে, তবে আট রাকাত পড়া উত্তম। আবার কারো মত হলো, আট রাকাতের বেশি পড়া যাবে না। আট রাকাতের বেশি পড়া বিদআহ।

আট রাকাত তারাবীহর পক্ষে দলীল

আবু সালমান বিন আবদুর রহমান আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহাকে রামাদানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামাদানে এবং রামাদানের বাইরে এগারো রাকাতের বেশি সালাত পড়তেন না। তিনি চার রাকাত পড়তেন; তুমি আমাকে তার সৌন্দর্য্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে প্রশ্ন করো না। অতঃপর তিনি চার রাকাত পড়তেন; তার সৌন্দর্য্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে প্রশ্ন করো না। অতঃপর তিনি তিন রাকাত পড়তেন।’ (সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)

যারা আট রাকাত তারাবীহর পক্ষে, তারা তাদের সমর্থনে এ হাদীসটি পেশ করেন। তাদের যুক্তি হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামাদান ও রামাদান ছাড়া অন্য মাসেও রাতে বিত্রসহ এগারো রাকাত সালাত আদায় করতেন।

আট রাকাত তারাবীহর সমর্থনে এ হাদীসকে দলীল হিসাবে পেশ করা কতটা যুক্তি সঙ্গত তা পর্যালোচনা প্রয়োজন।

আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদীসটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সারা বছরের কিয়ামুল লাইল তথা রাতের সালাতের দলীল হতে পারে। তবে কিয়ামে রামাদান (তারাবীহ সালাতের) দলীল হতে পারে না। কারণ ‘কিয়ামে রামাদান’ রামাদান মাসের রাতে বিশেষ সালাত। তার প্রমাণ হলো-

১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের ওপর রামাদানের সিয়াম ফরয করেছেন আর আমি তোমাদের জন্য তার কিয়ামকে (রাতের সালাতকে) সুন্নাত করেছি।’ (সুনান তিরমিযী)

২. তিনি আরো বলেছেন, ‘যে ঈমানের সাথে ও সাওয়াবের আশায় রামাদানে কিয়াম (রাতের সালাত আদায়) করবে, তার অতীতের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’

৩. তিনি একাধারে তিন রাত মাসজিদে এসে উপস্থিত সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত আদায় করেছেন। ফরয হওয়ার আশঙ্কায় চতুর্থ রাত থেকে মাসজিদে আসেননি। কিন্তু তিনি সাহাবীগণকে তা আদায়ে নিষেধ করেননি।

এটিও প্রমাণ করে- কিয়ামে রামাদান সারা বছরের কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ নয়, বরং এটি বিশেষ সালাত।

৪. উমার (রা.) ১৪ হিজরী সনের রামাদানে জামাতে ‘কিয়ামে রামাদান’ (তারাবীহর সালাত) চালু করেন। অথচ কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় থেকেই চালু ছিল। এটিও প্রমাণ করে- কিয়ামে রামাদান তথা তারাবীহ বিশেষ সালাত।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসটিকে তারাবীহ আট রাকাতের পক্ষে দলীল হিসাবে পেশ করা যুক্তিযুক্ত নয়।

যারা এ হাদীসের ভিত্তিতে তারাবীহ আট রাকাত পড়েন এবং এবং বলেন যে, তারাবীহ আট রাকাতই পড়তে হবে এবং এটিই সুন্নাহসম¥ত আমল- তাদেরকে কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। তা হলো-

১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাত মাসজিদে এ সালাত জামাতে আদায় করেছেন। তাঁর সুন্নাহ যথাযথ অনুসরণ করতে হলে পুরো রামাদান মাসজিদে জামাতে তারাবীহর সালাত আদায় করা যাবে না। কারণ এটি তিনি করেননি। পুরো রামাদান মাসজিদে জামাতে তারাবীহর প্রবর্তন উমার (রা.) করেছেন।

২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ অনুসরণ করতে হলে, রামাদান ও রামাদান ছাড়া অন্য মাসেও এগার রাকাত সালাত আদায় করা প্রয়োজন।

৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই এগার রাকাত এশার পরপর পড়তেন না, বরং তিনি শেষ রাতে পড়তেন। তার প্রমাণ হলো, ফজরের আযানের আগে এ সালাত শেষ করতেন। ফজরের আযান হলে ফজরের দু’রাকাত সুন্নাত পড়ে, ডান কাত হয়ে কিছুটা সময় শুতেন; তারপর মসজিদে গিয়ে ফজরের ফরয আদায় করতেন।

৪. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ সময় নিয়ে এ সালাত আদায় করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার রাকাত সালাত আদায় করতেন, আমাকে তার সৌন্দর্য্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে প্রশ্ন করো না। আবার চার রাকাত পড়তেন, তার সৌন্দর্য্য ও দীর্ঘতা নিয়ে প্রশ্ন করো না।’

এ এগার রাকাত সালাত আদায়ে কত সময় লাগতো তা হাদীসে উল্লেখ করা হয়নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে কতটা সময় জাগতেন, তা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে।

আল্লাহ বলেন, ‘তোমার রব জানে তুমি ও তোমার সাথের একদল লোক রাতের দুই তৃতীয়াংশের চেয়ে একটু কম, (কখনো) অর্ধেকাংশ আবার (কখনো) এক তৃতীয়াংশ দাঁড়িয়ে থাকো।’ (২০: মুয্্যাম্মিল)

এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কম পক্ষে রাতের এক তৃতীয়াংশ জেগে ‘কিয়ামুল লাইল’ বা তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন।

যারা আয়েশা (রা.) বর্ণিত এগার রাকাতের হাদীসকে আট রাকাত তারাবীহর দলীল হিসাবে পেশ করে আট রাকাত তারাবীহ পড়েন এবং বলেন যে, তারাবীহর রাকাত সংখ্যা আটই, এর বেশি নয়- তারা শুধু আট সংখ্যাটিকেই গুরুত্ব দেন। বাকী বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখেন না। রাখলে অবশ্যই তাদের আমল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মতোই হতো।

এ হাদীসের ওপর যারা যথাযথ আমল করতে চান, তারা কখনো রাতের দুই তৃতীয়াংশ, কখনো আধা রাত আবার কখনো এক তৃতীয়াংশ রাত জেগে এগার রাকাত সালাত আদায় করবেন।

শুধু রামাদানে নয়, বরং সারা বছর এ নিয়ম মেনে চলবেন। মাসজিদে নয়, বাসায় এ নিয়মে সালাত আদায় করবেন। মাসজিদে আদায় করতে চাইলে শুধুমাত্র তিন রাত জামাতে আদায় করবেন।

তাঁরা ‘আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদীস- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগার রাকাতের বেশি সালাত পড়তেন না, রামাদানেও না, রামাদানের বাইরেও না’- এর ভিত্তিতে তারাবীহ আট রাকাত পড়েন এবং আট রাকাতই পড়তে হবে, এর বেশি নয়- এমন দাবী করেন। অথচ তারা হাদীস থেকে শুধু রামাদান মাস আর সংখ্যাটাই গ্রহণ করেছেন, আর কিছু গ্রহণ করেননি। যেমন, রমাদান ছাড়া অন্য মাস, রাতে কম পক্ষে এক তৃতীয়াংশ জেগে এ সালাত আদায়, দীর্ঘসময় নিয়ে সুন্দরভাবে আদায় ইত্যাদি।

মনে রাখতে হবে যে, তারাবীহর সালাত চালু হওয়ার পর থেকে সহ¯্রাধিক বছরে কেউ এমন দাবী করেননি যে, তারাবীহ আট রাকাতই পড়া সুন্নাহ, এর বেশি পড়া যাবে না।

এছাড়াও আয়েশা (রা.) বর্ণিত এগার রাকাতের হাদীস তারাবীহ আট রাকাতের প্রমাণ হতে পারে না কেননা  তাঁর থেকে তের রাকাতের বর্ণনা আছে। যেমন তিনি বলেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তের রাকাত সালাত পড়তেন। তন্মধ্যে বিত্র ছিল পাঁচ রাকাত, যাতে তিনি মাঝে না বসে একবারে শেষে বসে সালাম ফিরাতেন।’ (সহীহ মুসলিম)

আরেক বর্ণনায় এসছে, তিনি বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নয় রাকাত সালাত পড়তেন। (সুনান আবু দাউদ)

অপর বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের সালাত ছিল তের রাকাত যার মধ্যে বিত্র ছিল পাঁচ রাকাত, যাতে তিনি মাঝে না বসে সর্বশেষ রাকাতে বসতেন। মুআয্যিন আযান দিলে দাঁড়িয়ে সংক্ষেপে ফজরের দু’রাকাত সুন্নাত পড়তেন।’ (সুনান আবু দাউদ)

তারাবীহ বিশ রাকাত

তারাবীহর রাকাত সংখ্যায় প্রসিদ্ধ মত হলো- তারাবীহ বিশ রাকাত। দলীল হলো, সায়িব বিন ইয়াযীদ বলেছেন, ‘উমার বিন আল খাত্তাব রাদিআল্লাহু আনহুর সময় লোকজন রামাদান মাসে বিশ রাকাত সালাত আদায় করতেন।’ (বায়হাকী) ইমাম নববীসহ অনেক হাদীস বিশারদ হাদীসটিকে সহীহ তথা বিশুদ্ধ বলেছেন।

অন্য বর্ণনায় এসছে, তিনি বলেছেন, উমার (রা.) যখন উবাই ইবন কা‘বের ইমামতিতে লোকজনকে একত্রিত করে দিলেন তখন তিনি বিশ রাকাত সালাত পড়তেন। (আল ইনসাফ- শাইখ মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওয়াহ্হাব)

ইমাম আবু হানীফা (রাহি.), ইমাম শাফিয়ী (রাহি.) ও ইমাম আহমাদ (রাহি.)- তারাবীহ বিশ রাকাত- এ মতটি গ্রহণ করেছেন।

ইমাম মালিক (রাহি.)-এর মতে, তারাবীহ ছত্রিশ রাকাত।

 

হারামাইন শরীফাইনে তারাবীহ

হারামাইন শরীফাইন (মক্কার মাসজিদে হারাম এবং মদীনার মাসজিদে নববীতে) বিশ রাকাত তারাবীহ ও তিন রাকাত বিত্র পড়া হয়। এ দু’ মাসজিদের তারাবীহ্তে নির্দিষ্ট কোনো মাযহাবের আলেমগণ ইমামতি করেন না। বরং ইমামতি করেন সহীহ সুন্নাহর অনুসারী বিশেষজ্ঞ আলেমগণ। তাঁদের ইমামতিতে এখানে সালাত আদায় করেন হাজার হাজার সহীহ হাদীসের অনুসারী হকপন্থী আলেমগণ। সুস্থ বিবেক এবং প্রচ্ছন্ন ও প্রশস্ত হৃদয় এটি মেনে নিতে পারেনা যে, এসব যুগশ্রেষ্ঠ সত্যপন্থী আলেমগণ যুগ যুগ ধরে সহীহ সুন্নাহর বিপরীতে বিশ রাকাত তারাবীহ আদায় করছেন।

আট রাকাতের পক্ষের লোকজন বলবেন, হারামাইন শরীফাইন দলীল নয়। দলীল হলো কুরআন ও সুন্নাহ। তারাই আবার ফরয সালাতের পর সমবেত মুনাজাত না দেয়ার পক্ষে হারামাইন শরীফাইনকে দলীল হিসাবে পেশ করেন।

যেমন বিশ রাকাতের পক্ষের লোকজন এ ক্ষেত্রে হারামাইন শরীফাইনের দলীল দেন। কিন্তু সালাতের পর সমবেত মুনাজাতসহ অনেক বিষয়ে তারা এ দুটোকে দলীল হিসাবে মানেন না। দুটিই সংকীর্ণতা। আমরা দলীল হিসাবে কুরআন ও সহীহ সুন্নাকেই মানবো। তবে শত শত বছর ধরে চলে আসা হারামাইন শরীফাইনে প্রতিষ্ঠিত আমলকে উপেক্ষা করতে পারবোনা। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হারামাইন তথা মক্কা ও মদীনা যেসব বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছে, তা মানার জন্য উৎসাহিত করেছেন। (সহীহুল বুখারী-কিতাবুল ই‘তিসাম)

তারাবীহর রাকাত সংখ্যা সুনির্দিষ্ট নয়

তারাবীহর রাকাত সংখ্যা নিয়ে আরেকটি মত হলো- তারাবীহর রাকাত সংখ্যা সুনির্দিষ্ট নয়। যে যত রাকাত পারবে, পড়বে। তাদের দলীল হলো- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘রাতের সালাত হলো দু’রাকাত, দু’রাকাত। তোমাদের কেউ যখন সকাল হওয়ার আশঙ্কা করবে, সে এক রাকাত পড়ে নিবে যা তার পূর্ববর্তী সালাতকে বিজোড় করে দিবে।’ (সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)

এ মতটি যারা পোষণ করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (রাহি.)। তিনি বলেছেন, ‘যে চাইবে বিশ রাকাত পড়বে, যে চাইবে ছত্রিশ রাকাত পড়বে, যে চাইবে এগার রাকাত পড়বে, যে চাইবে তের রাকাত পড়বে, সবটাই ভাল। ইমাম আহমাদ (রাহি.) বলেছেন, কিয়ামে রমাদানের রাকাত সংখ্যা ঠিক করা যাবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাকাত সংখ্যা ঠিক করেননি।’ (মাজমুউল ফাতাওয়া)

ইমাম ইবনু হাজার আল আসকালানী (রাহি.) ফাতহুল বারীতে তারাবীহর রাকাত সংখ্য বিত্রসহ এগার থেকে উনপঞ্চাশ পর্যন্ত উল্লেখ করেছেন। ইমাম বদরুদ্দীন আইনী (রাহি.) উমদাতুল কারীতে বলেছেন, আলিমগণ কিয়ামে রামাদান (তারাবীহর) রাকাত সংখ্যায় বিভিন্ন  মত দিয়েছেন। কেউ বলেছেন একচল্লিশ রাকাত, কেউ বলেছেন চল্লিশ রাকাত আর বিত্র নয় রাকাত, কেউ বলেছেন আটত্রিশ রাকাত আর বিত্র এক রাকাত। ইমাম মালিক (রাহি.) থেকে প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে ছত্রিশ রাকাত আর বিত্র তিন রাকাত।

এ যুগের বিশেষজ্ঞ আলিমগণের মতামত

সউদী আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতী শাইখ আবদুল আযীয বিন বায (রাহি.) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে রাতের সালাতে রয়েছে প্রশস্ততা। দু’রাকাত-দু’রাকাত করে যে যত পড়তে চাইবে পড়বে। তবে এগার বা তের রাকাত (বিত্রসহ) পড়া উত্তম। এ সংখ্যাটি মানুষের জন্য সহনশীল এবং ইমামের জন্য রুকু ও সিজদায় এবং কুরআন তিলাওয়াতে অধিকতর মনোযোগী হতে সহায়ক। তবে উমার (রা.) ও সাহাবীগণ কোনো কোনো রাতে তেইশ রাকাত পড়েছেন- তাও পড়া যাবে। (ফাতাওয়া, শাইখ বিন বায রাহি.)

উল্লেখ্য যে, শাইখ বিন বায (রাহি.) বিত্রসহ এগার রাকাতকে উত্তম বলেছেন। আট রাকাতই পড়তে হবে, এমনটি বলেননি।

উমার (রা.) ও সাহাবীগণ যে বিত্রসহ তেইশ রাকাত (তথা তারাবীহ বিশ রাকাত) পড়েছেন তারও স্বীকৃতি দিয়েছেন।

সউদী আরবের আরেক বিশেষজ্ঞ আলিম শাইখ সালেহ আল-উসাইমীন (রাহি.) বলেন, তারাবীহ (বিত্রসহ) এগার বা তের রাকাত পড়া উত্তম। তবে কেউ যদি তেইশ রাকাত (বিত্রসহ) পড়ে, আপত্তি করা যাবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট করেননি। বরং তিনি বলেছেন, ‘রাতের সালাত দুই রাকাত দুই রাকাত করে।’ (ফাতাওয়া শাইখ আল-উসাইমীন, খ- -১৪)

শাইখ সালেহ আল ফাওযান বলেছেন, তারাবীহ সালাতের রাকাত সংখ্যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নির্দিষ্ট করা হয়নি, এতে রয়েছে প্রশস্ততা। (ইতহাফু আহলিল ঈমান)

শাইখ আতিয়্যাহ মুহাম্মাদ সালিম বলেছেন, আলী (রা.)-এর সময় তারাবীহ ছিল তেইশ রাকাত। এভাবেই ছিল উসমান (রা.) ও উমার (রা.)-এর সময়। (তারাবীহ- সহস্রাধিক বছরে)

উপরের আলোচনা থেকে যে বিষয়গুলো স্পষ্ট হলো তা হচ্ছে-

১. তারাবীহর রাকাত সংখ্যা আট বা বিশে সীমাবদ্ধ করা যাবে না। যে যত রাকাত চাইবে পড়তে পারবে।

তারাবীহ আট রাকাত, এর বেশি পড়া যাবে না- এটি জঘন্য ভ্রান্তি। আবার বিশ রাকাতই পড়তে হবে, কম পড়া যাবে না- এটিও ভ্রান্তি।

২. সংখ্যার চেয়ে মানের গুরুত্ব বেশি দিতে হবে। দ্রুত তিলাওয়াত এবং সংক্ষিপ্ত রুকু-সিজদায় বেশি রাকাত পড়ার চেয়ে বুঝেশুনে দীর্ঘ তিলাওয়াত এবং দীর্ঘ রুকু ও সিজদার মাধ্যমে কম রাকাত পড়া উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধীরে ধীরে তিলওয়াত এবং দীর্ঘ রুকু ও সিজদা দিয়ে রাতের সালাত আদায় করতেন।

৩. সহ¯্রাধিক বছর ধরে চলে আসা তারাবীহর সালাতের রাকাত সংখ্যায় মতপার্থক্য ছিল। কিন্তু বিরোধ ছিল না। একে অপরের মত ও আমলকে ভুল বলেননি।

তারাবীহ দ্রুত পড়া

তারাবীহর রাকাত সংখ্যা যাই হোক না কেন, তারাবীহ পড়তে হবে ধীরস্থিরভাবে। কুরআন তিলাওয়াত হবে সুস্পষ্টভাবে, থেমে থেমে। রুকু ও সিজদা হবে দীর্ঘ। তারাবীহর মূল শব্দ ‘রাহাহ্’ -অর্থ: প্রশান্তি, বিশ্রাম। এ সালাত দ্রুত পড়া যাবেনা। যারা বিশ রাকাত তারাবীহর পক্ষে, তাদের অনেক মাসজিদে এশার সালাত হয় একভাবে আর তারাবীহর সালাত হয় অন্যভাবে। তারাবীহতে এতো দ্রুত কুরআন পড়া হয় যে, আয়াতসমূহের উচ্চারণ বুঝা যায়না, রুকু ও সিজদা দেয়া হয় খুবই দ্রুত। এভাবে তারাবীহর সালাত আদায় আনুষ্ঠানিকতা বৈ কিছু নয়।

বিশ রাকাতপন্থীগণ হারামাইন শরীফাইনকে বিশ রাকাতের পক্ষে দলীল হিসাবে পেশ করেন। সেখানে তো এশার সালাত স্বাভাবিকভাবে এবং তারাবীহ দ্রুত পড়া হয়না। বরং এশার চেয়ে তারাবীহ আরো বেশি ধীরস্থিরভাবে পড়া হয়। ইমামগণ কখনো কখনো একই আয়াত একাধিকবার পড়েন।মৃত্যু, জাহান্নাম, পরকালের বিষয় সম্পর্কিত আয়াত পড়ার সময় তাঁরা কাঁদেন।

বিশ রাকাতপন্থীগণের মাসজিদে ২৬শে রামাদান রাতে কুরআন খতম করা হয়। তার পরের রাতগুলোতে মাসজিদে মুসল্লী খুব একটা থাকেনা। আবার কোথাও দেখা যায়, দশম রাতে কুরআন খতম করা হয়। বাকি বিশ রাতে বিশ রাকাত কেন অনেকে তারাবীহই পড়েনা। এগুলো তারাবীহর সাথে তামাশা ছাড়া কিছু নয়।

আট রাকাতপন্থীগণের সহীহ হাদীস লঙ্ঘন

আট রাকাতপন্থীগণ আট সংখ্যাটি ঠিক রাখতে গিয়ে কয়েকটি সহীহ হাদীস লঙ্ঘন করেন। সেগুলো হলো:

১. ‘রাতের সালাত দুই রাকাত, দুই রাকাত। কেউ সকাল হওয়ার আশংকা করলে এক রাকাত পড়ে নিবে, যা তার পূর্ববর্তী সালাতকে বিজোড় করে দিবে।’ (সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম)

২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তের রাকাত সালাত পড়তেন। ফজরের আযান শুনলে তিনি সংক্ষেপে দু’রাকাত সালাত পড়তেন। (সহীহুল বুখারী, মুয়াত্তা মালিক)

এ দু’রাকাত হলো ফজরের দু’রাকাত সুন্নাত।

৩. আট রাকাতপন্থীগণ যেসব মাসজিদে বিশ রাকাত তারাবীহ হয়, সেসব মাসজিদে এমনকি মক্কার মাসজিদে হারাম ও মাদিনার মাসজিদে নববীতেও আট রাকাত পড়ে মাসজিদ থেকে বের হয়ে যায়। এটি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মর্যাদা পরিপন্থী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘ইমাম সালাত শেষ না করা পর্যন্ত যে ইমামের সাথে সালাত আদায় করবে, তার জন্য পুরো রাতের কিয়াম (সালাত আদায়ের সাওয়াব) লিখে দেয়া হবে।’ (সুনান তিরমিযী)

শাইখ আলবানী (রাহ.) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

পরিশেষ একটি বিষয়ের প্রতি পাঠকগণের দৃষ্টি আকর্ষণ প্রয়োজন বলে মনে করছি। আর তা হলো- যারা ফরয সালাত আদায় করে না, তাদের তারাবীহ পড়ার প্রয়োজন নেই। ফরয সালাত হচ্ছে ঈমানের পরিচয় বহনকারী ইবাদাত। এটি ইসলামের রুকন তথা স্তম্ভ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘একজন ব্যক্তি এবং র্শ্কি ও  কুফরের মধ্যকার বিষয় হলো সালাত পরিত্যাগ।’ (সহীহ মুসলিম)

আবু বকর (রা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নফল কবুল করবেননা, যতক্ষণ না ফরয আদায় করা হয়।’ (আযযুহদ- ইবনুল মুবারক, মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ)

আল্লাহ আমাদের সত্য বুঝা, গ্রহণ করা ও সে অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দিন।

 

ঢাকা, ২০ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএইচ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ