Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | সোমবার, ৬ই মে ২০২৪, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

মসজিদে নববীর খুতবা: ‘আল্লাহর সুন্দর নাম ও গুণাবলী’

প্রকাশিত: ১৭ মে ২০১৮, ০২:১৩

শাইখ হোসাইন বিন আলী আল শাইখ, মদীনা মুনাওয়ারা: সকল প্রশংসা সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী মহান আল্লাহর। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি শুরুতেও এক ও একক, শেষেও তিনি এক ও একক। হে মুসলিমগণ! আমি আমার নিজকে এবং আপনাদেরকে তাকওয়া তথা আল্লাহকে ভয় করে চলার পরামর্শ দিচ্ছে। যে আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তাকে তার ধারণার বাইরে জীবিকা দিবেন। আর যে তাঁর ওপর নির্ভরতা রাখবে, তিনি তার জন্য যথেষ্ট।

হে ইসলামী উম্মাহ! আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর ওপর ঈমান, তাওহীদের অন্যতম একটি বিভাগ। এটি ঈমানের দাবি। আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর জ্ঞান অর্জন, এগুলোর মাধ্যমে ইবাদাত ও দু‘আ অতি মর্যাদার বিষয় একজন মুমিন আল্লাহ তাঁর নিজের এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ব্যাপারে যেসব নাম ও গুণাবলীর উল্লেখ করেছেন, তা স্বীকার করে। কোনো প্রকার বিকৃতি, আকৃতি নির্ধারণ ছাড়া মূল অর্থে সেগুলোর ওপর ঈমান আনে। অনুরূপ সে আল্লাহর মর্যাদা পরিপন্থী সকল বিষয় অস্বীকার করে।

আল্লাহ নিজের ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ব্যাপারে যেসব বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেননি বা স্বীকৃতি দেননি, তা অস্বীকার করে।
একজন মুমিন আল্লাহর পরিপূর্ণ ক্ষমতা, জ্ঞানসহ সকল ধরনের গুণাবলীতে বিশ্বাস রাখে। সে
আল্লাহর কোনো নাম ও গুণকে অস্বীকার করে না, বিকৃত ব্যাখ্যা করে
২.
তিনি বলেন, ‘অধিষ্ঠিত’ শব্দটির অর্থ আমাদের জানা, তবে এর ধরন আমাদের কাছে অজ্ঞাত। এর ওপর আমাদের ঈমান আনতে হবে। ধরন সম্পর্কে প্রশ্ন করা বিদ‘আত।’
আল্লাহর নাম ও গুণাবলী তাঁর যথাযথ ইবাদাতের মূল ভিত্তি। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর জন্য রয়েছে

সুন্দরতম নামসমূহ, তোমরা তাঁকে সেসব নামে ডাকো’ এ ডাকার দুটি অর্থ, একটি হলো
ইবাদাত; আরেকটি হলো আল্লাহর কাছে চাওয়া। আল্লাহর কাছে চাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর এমন নামের উল্লেখ করতে হবে যেটি প্রার্থনার বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যেমন সে বলবে, হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা ও অনুগ্রহ করো, তুমি ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহশীল। আমার তাওবা গ্রহণ করো, তুমি তাওবাহ গ্রহণকারী। আমাকে জীবিকা দাও, তুমি জীবিকা দানকারী।

আল্লাহর একটি নাম হলো ‘সামাদ’ যার অর্থ অমুখাপেক্ষী, চিরস্থায়ী প্রয়োজন পূরণকারী। ‘বলো, তিনিই আল্লাহ, এক ও একক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রয়োজন পূরণকারী। তিনি জন্ম দেননি এবং জন্ম নেননি। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।’ (আল-ইখলাস)

হে মুসলিম! আপনি যখন বিপদ-সঙ্কটে জর্জরিত, দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনায় আক্রান্ত, তখন ঐ সত্তার আশ্রয় নিন, যিনি একক প্রয়োজন পূরণকারী। কি সচ্ছল অবস্থায়, আর কি দুঃসময়েÑ সকল অবস্থায় চাওয়ার জায়গা একটিই, আর তা হলো মহান আল্লাহ; তিনি এক ও একক। বিপদ-সঙ্কট ও দুঃসময়ে তাঁর কাছেই আশ্রয় চাইতে হবে।

হে ইসলামী উম্মাহ! প্রতিটি মহূর্তে আমাদেরকে ধর্না দিতে হবে আমাদের মহান রবের কাছে যিনি এক, মুখাপেক্ষীহীন। তাঁর কাছেই আমাদের আশ্রয় নিতে হবে ইবাদাতের মাধ্যমে, দু‘আর মাধ্যমে, বিনয়ী হয়ে, নিষ্ঠার সাথে। ভালবেসে, ভয় ও আশা নিয়ে। আমাদের জন্য কতই না প্রয়োজন আমরা তাঁকে ডাকবো সচ্ছল অবস্থায়, অনুরূপ আমাদের কঠিন অবস্থায়। ডাকবো আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুগ্রহের মধ্যে থাকা অবস্থায়, আবার সঙ্কটকালীন অবস্থায়।
আমরা তাঁর কাছে বিনয়ী হয়ে কাতর কণ্ঠে সকল অবস্থায় সাহায্য প্রার্থনা করবো। বিশেষ করে বর্তমান অবস্থায়, যখন মুসলিম উম্মাহ সকল দিক থেকে সঙ্কট ও বিপর্যয়ের শিকার। আমরা তাঁর কাছে চাইবো আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের সকল উত্তম প্রয়োজন, ব্যক্তিগতভাবে ও জাতিগতভাবে আমাদের দায়িত্ব হলো বিশুদ্ধ ও একনিষ্ঠ অন্তরে সুন্দর ও উত্তম নাম এবং গুণাবলীর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আশ্রয় নেয়া।

আল্লাহ বলেন, ‘তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। অতএব তোমরা দীনকে তাঁর জন্য একনিষ্ঠ করে তাঁকে ডাকো। সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি বিশ্বজাহানের রব।’
মানুষের জীবনে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। কখনো সে কঠিন সঙ্কটের সম্মুখীন হয়, যেমনটি বর্তমানে আমাদের অবস্থা। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ লাভের একমাত্র উপায় হলো মহান শক্তিশালী রক্ষক ও পরিত্রাণকারীর আশ্রয় নেয়া। আর তিনি হলেন একমাত্র আল্লাহ। তিনিই আমাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করবেন। তাঁর হাতেই বিপদ-মুসিবত দূর করার ক্ষমতা। তিনি তাঁর বন্ধুদের ধ্বংস থেকে রক্ষা করেন।


আল্লাহ তিনি এক, একক ও অমুখাপেক্ষী। তিনিই প্রয়োজন পূরণকারী, সকল সৃষ্টি নিজ নিজ
প্রয়োজন তাঁর কাছেই ন্যস্ত করে; কেননা তিনি তাঁর সত্তা, তাঁর নাম, গুণাবলী ও কর্মে পরিপূর্ণ। মুসলিম ও মুসলিম উম্মাহ কী করে সঙ্কটের মধ্যে অবস্থান করতে পারে, যার ‘রব’ হলেন মহান আল্লাহ যিনি এককভাবে প্রয়োজন পূরণকারী, সকল উত্তম গুণাবলীর অধিকারী! যিনি পরিপূর্ণ কর্তৃত্ব ও সার্বভৌমত্বের অধিকারী। মর্যাদা, কর্তৃত্ব, দানশীলতা, জ্ঞান-প্রজ্ঞা, শক্তি-ক্ষমতা, অনুগ্রহ ও কল্যাণসহ সকল বিষয়ে একক মর্যাদার অধিকারী।

হে আল্লাহর বান্দা! হে আল্লাহর বান্দী! আপনার রবের প্রতি মনযোগী হোন, ইবাদাত, দু‘আ,
নির্ভরতা, আশা, ভয়, ভালবাসা, বিনয়ে তাঁর প্রতি একাগ্র হোন। তিনি তাঁর রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘যখনি অবসর পাবে, তখনি একনিষ্ঠ হও, আর তোমার রবের প্রতি আগ্রহী হও।’

ওহে! যার জীবনের পথ সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে, উপায়-উপকরণ কঠিন ও জটিল হয়ে পড়েছে, তুমি তোমার রবের দরজায় যাও। তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়াও। কঠিন অবস্থা যখন তোমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে, তখন একমাত্র আল্লাহর উপর আস্থাশীল হও। তিনি সকল বিষয় জানেন। তোমাদের সামনে প্রকাশ্য বিষয় জানেন, তোমাদের থেকে গোপন হওয়া বিষয়ও জানেন। তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি খুবই অনুগ্রহশীল। যখন তিনি কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন, তখন সে বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট উপায়উপকরণকে সহজ করে দেন। ফলে এমন কিছু ঘটে যায়, যা স্বাভাবিকভাবে ঘটে না।

তিনি খুবই মেহেরবান ও করুণাময়। তোমাকে যখন চারদিক থেকে বিপদ ও সঙ্কট আচ্ছন্ন করে, তখন তুমি তোমার মুখাপেক্ষীহীন রবের আশ্রয় নাও। তিনি তোমাকে সঙ্কট থেকে মুক্তি দিবেন। কঠিন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিবেন।
তিনিই বিপদ দূরকারী, রোগ নিরাময়কারী, বালা-মুসিবত থেকে রক্ষাকারী। তিনি পরিপূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী। তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকারী। তিনি বলেন, ‘তিনি বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির ডাকে সাড়া দেন, যখন সে নিরুপায় হয়ে তাঁকেই ডাকতে থাকে।’ (নাম্ল: ৬২)
‘বলো, আল্লাহই তোমাদের সে অবস্থা থেকে এবং যাবতীয় বিপদ-সঙ্কট থেকে বাঁচিয়ে দেন। তার পরও তোমরা র্শিক করো।’ (আন‘আম: ৬৪)
হে মুসলিম! তোমার রবের শরণাপন্ন হও, যার ক্সনকট্য প্রাপ্তি তোমাকে আনন্দ দিবে। দিবে সফলতা, প্রশান্তি ও স্থিতিশীলতা। আবদুল্লাহ বিন বুরাইদা থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করে শুনলেন, এক লোক সালাতে দু‘আ করছে, ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে চাই। সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আমি তোমার কাছে চাই, তুমি এক, অমুখাপেক্ষী।

৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘ঐ সত্তার শপথ যার হাতে আমার জীবন, তুমি ইসমি আযম তথা আল্লাহর মহান নাম নিয়ে প্রার্থনা করছো। এই নামে চাইলে তাকে দেয়া হয়। ডাকা হলে তাতে সাড়া দেয়া হয়।’
হে মুসলিমগণ! প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো আল্লাহর নামসমূহের অন্তর্নিহিত অর্থ গভীর মনযোগ দিয়ে অনুধাবন করা। তাঁর প্রশংসাসূচক সকল শব্দ এবং তাঁর ক্সবশিষ্ট্য ও গুণাবলীর মর্ম উপলব্ধি করা। এ উপলব্ধি ও বোধ ঈমানের স্বাদ বাড়ায়। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের পূর্ণতা বৃদ্ধি করে।

যে তার প্রয়োজনকে আল্লাহর দায়িত্বে ন্যস্ত করবে, তার অন্তর আল্লাহর সাথে যুক্ত হয়ে যাবে। তাঁর প্রতি তার ভালবাসা ও মর্যাদাবোধ বাড়বে। তাঁর গোটা জীবন আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে। তার জীবনে প্রতিফলন ঘটবে তার এ ঘোষণার ‘নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার সকল ইবাদাত, আমার জীবন এবং আমার মরণ আল্লাহর জন্য, যিনি বিশ্বজাহানের রব।’
আল্লাহ আমাদেরকে মহান একটি বিষয়ে আদেশ করেছেন, যার মাধ্যমে আমাদের জীবন আলোকিত হবে, আর তা হলো তাঁর বান্দা ও রাসূলের ওপর সালাত ও সালাম।

আল্লাহুম্মা সাল্লি ওয়া সাল্লিম ‘আলা ‘আবদিকা ওয়া রাসূলিকা মুহাম্মাদ।
হে আল্লাহ! চার খলিফা আবূ বকর, উমার, উসমান ও আলীসহ সকল সাহাবী ও তাদের
অনুসারীগণের ওপর সন্তুষ্ট হও।

হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ, তুমি এক ও একক। তুমি
মুখাপেক্ষীহীন, তোমার সমকক্ষ কেউ নেই। হে চিরঞ্জীব, হে চির প্রতিষ্ঠিত! আমাদের উম্মাতকে সকল সঙ্কট থেকে রক্ষা করো।

হে আল্লাহ! মুসলিম উম্মাহকে সকল দেশ ও এলাকার মুসলিমদের দুঃখ-কষ্ট থেকে বাঁচাও।
হে আল্লাহ! তাদের সমস্যা ও সংকট দূর করে দাও। (২ বার)
হে আল্লাহ! যারা আমাদের অকল্যাণ চায়, তাদেরকে তাদের নিজেদের মধ্যে ব্যস্ত রাখো। তাদের সকল পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দাও।

হে আল্লাহ! সকল মুমিন পুরুষ ও নারী, সকল মুসলিম পুরুষ ও নারীকে ক্ষমা করে দাও। তাদের জীবিতদের ক্ষমা করে দাও। মৃতদের ক্ষমা করে দাও।
হে আল্লাহ! আমাদেরকে রামাদানে পৌঁছে দাও। রামাদানে দিনে রোযা পালন ও রাতে সালাত আদায় করার তাওফীক দাও।
হে আল্লাহ! আমাদেরকে তোমার যিক্র তথা স্মরণ করার বিষয়ে সাহায্য করো।
হে আল্লাহ! আমরা বিপদের ভয়াবহতা ও তোমার মন্দ সিদ্ধান্ত থেকে আশ্রয় চাই।


হে আল্লাহ! তোমার কাছে আশ্রয় চাই তোমার নেয়ামত বিলুপ্তি, তোমার দেয়া সুস্থতার পরিবর্তন, হঠাৎ করে আসা বিপদ ও তোমার অসন্তুষ্টি থেকে।

হে আল্লাহ! আমাদের নেতাকে তাওফীক দাও, এমন কিছু করার যা তুমি পছন্দ করো।
হে আল্লাহ! সকল মুসলিম দেশের শাসকদের তাদের প্রজাদের স্বার্থে কাজ করার তাওফীক দাও। মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করে দাও।
হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহশীল। তুমি ক্ষমা পছন্দ করো। অতএব তুমি আমাদের ক্ষমা করো।’ (২ বার)

শাইখ হোসাইন বিন আলী আল শাইখ
খতিব
মসজিদে নববী, মদীনা মুনাওয়ারা
অনুবাদ: অধ্যাপক আ.ন.ম. রশীদ আহমাদ

 

ঢাকা, ১৬ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিসিএস

 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ