বেরোবি লাইভ: গোবিন্দগঞ্জের বাগদাফার্মে হামলা চালিয়ে আদিবাসী হত্যা, উচ্ছেদ, ঘরবাড়ি ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতনের প্রতিবাদ এবং জড়িতদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন আদিবাসী ছাত্র পরিষদ।
জানা যায় যে, আজ বৃহ:বার আদিবাসী ছাত্র পরিষদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির উদ্যোগে “লাশ নয়, বাপ-দাদার সম্পত্তি ফেরত চাই” দাবিতে রংপুর প্রেস ক্লাবের সামনে সকাল ১১.০০ টায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী ছাত্র পরিষদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সভাপতি পরিমল মাহাতো।
বক্তব্য রাখেন আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বিভূতি ভূষণ মাহাতো, সাধারণ সম্পাদক মিঠুন কুমার উরাও, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক ও রাবি কমিটির সাধারণ সম্পাদক নকুল পাহান। মানববন্ধনে এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, বেরোবি কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব মাহাতো। মানববন্ধন সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বেরোবি কমিটির সদস্য যুগেশ ত্রিপুরা।
সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রংপুর জেলা কমিটির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য অশোক সরকার, বাসদ রংপুর জেলা সমন্বয়কারী আবুল কৃদ্দুস, জাসদ, রংপুর মহানগর সভাপতি গৌতম রায়, প্রজন্ম ৭১, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পাটিংর রংপুর মহানগর সভাপতি দেবদাস ঘোষ দেবু, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, রংপুর জেলা সভাপতি এস এম শহীদুল্লাহ কায়সার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট রংপুর জেলা সংগঠক প্রহল্লাদ রায়, আদিবাসী নারী নেত্রী পুতুল কুজুর।
বক্তারা বলেন, গত ৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় পুড়িয়ে দেওয়া হয় বাগদার্ফামে বসবাসরত আদিবাসী গ্রাম। আদিবাসী পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত শ্যামল হেমব্রম মঙ্গল মার্ডি, আহত হন আরও অনেকে এবং এখনো তিন জন নিখোঁজ রয়েছেন।
আদিবাসীদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে, উচ্ছেদ করেই থেমে থাকেনি ভূমিদস্যূরা। পরদিন সকালে অর্থাৎ ৭ নভেম্বরেও চালিয়েছে লুটপাট। আবাসীদের ঘরের চালের টিন, হাঁড়ি-পাতিল, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, জামাকাপড় কিছুই বাদ যায়নি। আদিবাসীরা আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন , কিন্তু হাতে তাদের হাতকড়া লাগানো।
উল্লেখ্য যে, তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান সরকার রংপুর (মহিমাগঞ্জ) সুগার মিলের ইক্ষু ফার্ম করার জন্য ১৮৪২.৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করে। এর ফলে উক্ত মৌজার ১৫ টি আদিবাসী গ্রাম ও পাঁচটি বাঙ্গালি গ্রামের বাসিন্দারা উচ্ছেদ হয়। উচ্ছেদের ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হয়। সবচেয়ে বিপদের সম্মূখীন হয় আদিবাসীরা।
উক্ত সম্পত্তিতে ইক্ষু চাষের পরিবর্তে যদি কখনো অন্য ফসল উৎপাদিত হয় তাহলে অধিগ্রহণকৃত ১৮৪২.৩০ একর সম্পত্তি পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন সরকার বরাবর ফেরৎ (সারেন্ডার) প্রদান করবেন। সরকার উক্ত সম্পত্তি গ্রহণ করে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে পারবেন।
মহিমাগঞ্জ সুগার মিল কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি, অব্যস্থাপনা ও মিলের ক্ষতিসাধন হওয়ায় ৩১ মার্চ ২০০৪ সালে সুগার মিলটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে সমস্ত সম্পত্তিতে ইক্ষু চাষের পরিবর্তে ধান, গম, ভূট্টা, তামাক, সরিষা আলু, ইত্যাদি ফসল চাষাবাদ করছে এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি ও দালাল চক্রের কাছে মহিমাগঞ্জ সুগার মিল কর্তৃপক্ষ উক্ত সম্পত্তি লীজ প্রদান করেছেন।
এমতাবস্থায় ভূমিহারা আদিবাসী ও প্রান্তিক কৃষকগণ অধিগ্রহণকৃত ১৮৪২.৩০ একর সম্পত্তি ফেরত পাওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় সরকারের নিকট আবেদন জানাই।
সমাবেশে বক্তারা গোবিন্দগঞ্জের বাগদাফার্মে হামলা চালিয়ে আদিবাসী হত্যা, উচ্ছেদ, ঘরবাড়ি ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি, গৃহহীন আদিবাস দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আদিবাসীদের বাপ-দাদার পৈতিৃক সম্পত্তি ফেরতের দাবি জানান।
ঢাকা, ১০, নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//আইএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: