Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শনিবার, ১৮ই মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

২৪ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে হাবিপ্রবি

প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বার ২০২২, ০৩:০৮

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)।

হাবিপ্রবি লাইভ: রংপুর বিভাগের দিনাজপুর জেলায় অবস্থিত দেশের উচ্চশিক্ষার ইতিহাসে এক বর্ণাঢ্য ও গর্বিত ঐতিহ্যের প্রতীক ও উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)।

১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে দিনাজপুরের গৌর-এ শহীদ ময়দানে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বিশাল জনসভায় হাজী মোহাম্মদ দানেশ কৃষি কলেজকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৯ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর হাবিপ্রবি’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়টির মূলত নামকরণ করা হয় তেভাগা আন্দোলনের নেতা হাজী মোহাম্মদ দানেশের নামানুসারে। রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২) বিশ্ববিদ্যালয়টি গৌরবের সাথে দুই যুগ অর্থ্যাৎ ২৪ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টি দিনাজপুর শহর হতে ১০ কি.মি দূরে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে প্রায় ৮৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। বর্তমানে হাবিপ্রবিতে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে ৯ টি অনুষদের আওতায় ৪৫ টি বিভাগ, ৩২৪ জন শিক্ষক, ২১৪ জন কর্মকর্তা। পোস্ট গ্রাজুয়েট অনুষদের অধীনে ৪০টি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং ১২টি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। হাবিপ্রবি’র রয়েছে একটি অধিভুক্ত কলেজ, একটি ইনস্টিটিউট ও হাবিপ্রবি স্কুল নামে একটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

গত ২৩ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ৫ টি একাডেমিক ভবন (নবনির্মিত ১০ তলা একাডেমিক ভবনসহ), একটি প্রশাসনিক ভবন, সুবিশাল প্রধান ফটক, ৪টি ছাত্র হল, ৪ টি ছাত্রী হল (নবনির্মিত ও সুসজ্জিত হলসহ), আধুনিক কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, আধুনিক সাজসজ্জা বিশিষ্ট ১০০ আসনের একটি ভিআইপি সেমিনার কক্ষ, ৬০০ আসন বিশিষ্ট এবং ২৫০ আসন বিশিষ্ট আলোকসজ্জায় সজ্জিত ও শীততাপনিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক দুইটি অডিটোরিয়াম।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ করতে রয়েছে দুইটি মসজিদ, একটি শিশুপার্ক, ইউটিলিটি ভবন, শিক্ষক- কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক কোয়াটার, পোষ্ট অফিস, রূপালী ব্যাংক শাখা, মেঘনা ব্যাংক শাখা, শ্রমিক ব্যারাক, নিজস্ব বৈদ্যুতিক লাইন, চারটি বৃহৎ খেলার মাঠ, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ এবং পরিবহনের জন্য রয়েছে ৪০ টি যানবাহন।

গবেষণা ও প্রশিক্ষণের সমন্বয় ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য রয়েছে ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং (আইআরটি) ও আইকিউএসি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬ টি ফসলের জাত উদ্ভাবিত হওয়ার পাশাপাশি কৃত্রিম পদ্ধতিতে শস্য শুকানোর মেশিন আবিষ্কার হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে একটি ভি. আই. পি গেস্ট হাউস, ৬ জন অভিজ্ঞ ডাক্তার ও এ্যাম্বুলেন্সসহ ১০ শয্যা বিশিষ্ট একটি মেডিক্যাল সেন্টার।

হাবিপ্রবিতে গবেষণালব্ধ থিসিস, রিপোর্ট, জার্নালের পাশাপাশি রয়েছে ৩৫ হাজার বইয়ের সমৃদ্ধ দ্বিতল বিশিষ্ট শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত একটি অত্যাধুনিক লাইব্রেরি। হাজারো গাছ-গাছালির আকর্ষণীয় সংগ্রহ নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি সমৃদ্ধ বোটানিক্যাল গার্ডেন, বিভিন্ন বিভাগের তত্ত্বাবধানে গবেষণার জন্য গড়ে উঠেছে জার্মপ্লাজম সেন্টার, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের জন্য রয়েছে নিজস্ব পুকুর ও হ্যাচারি ।

বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যায়নের দিক দিয়ে হাবিপ্রবি দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীরা নেপাল, ভুটান, ভারত, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া ও ইথিওপিয়া থেকে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য হাবিপ্রবিতে ভর্তি হয়েছেন। সুশিক্ষিত হয়ে এরই মধ্যে তারা নিজ নিজ দেশে গিয়ে সফলতাও অর্জন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী এই মুহুর্তে বিদেশী শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১৩০ জন, যার মধ্যে বিদেশি মেয়ে শিক্ষার্থী রয়েছেন ২০ জন।

হাবিপ্রবিতে ডিভিএম অনুষদের গবেষণার জন্য রয়েছে একটি মিনি চিড়িয়াখানা। যেখানে সমগ্র দেশের মধ্যে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে উট পাখি পালনের উপর গবেষণা চলমান রয়েছে। প্রত্যেক বছরই বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী উটপাখি দেখতে হাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসে। এছাড়াও চিড়িয়াখানাটিতে নানা প্রজাতির পশু পাখি রয়েছে। দেশের প্রথম ভ্রাম্যমান মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিকের যাত্রা শুরু হয় হাবিপ্রবি থেকে। যার মাধ্যমে দিনাজপুর জেলার গৃহপালিত পশু-পাখির সেবা বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে।

দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ হাবিপ্রবিতে রয়েছে লাল ইটের দৃষ্টিনন্দন সুবিশাল ভবন এবং রয়েছে ফোয়ারা চত্বর; যা পর্যটকদের সবসময় আকর্ষণ করে। হাবিপ্রবিতে প্রবেশের জন্য তিনটি প্রবেশ পথ রয়েছে। সবুজ গাছপালার সমারোহ আর পাখির কিচিরমিচির শব্দে সবারই মন ভরে যায়। ক্যাম্পাসে প্রবেশের আগ মুহূর্তেই মানুষের চোখে ধরা পড়ে যায় হাবিপ্রবি’র সৌন্দর্যের লীলাভূমির অপরুপ দৃশ্য। হাবিপ্রবিতে এসে ঘুরে গেছেন অথচ হাবিপ্রবির সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এখানে শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা বলে খ্যাত টিএসসিতে পড়ালেখা, সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামসহ আড্ডাবাজিতে সারাদিন মুখর হয়ে থাকে। এটি হাবিপ্রবি’র সৌন্দর্যকে যেন আরো বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একটি ক্যাফেটেরিয়া (খুব শীঘ্রই পুনরায় চালু হবে) ও জিমনেসিয়াম। হাবিপ্রবি’র ক্যাফেটেরিয়াতে ব্যাবস্থা থাকে নানান ধরনের মুখরোচক খাবার।

হাবিপ্রবিতে ছোট ছোট অনেকগুলো চত্বর রয়েছে। যেমন: রিমা চত্বর, এলিয়েন রোড, ডি বক্স, ও বক্স, ডিভিএম হাফ ওয়াল ও বাবুই চত্বর প্রভৃতি। এছাড়াও রয়েছে সুবিশাল লিচু বাগান। হাবিপ্রবির ডি-বক্স চত্বরে যেন সর্বদা ব্যস্ততা লেগেই থাকে। হাবিপ্রবির প্রশাসনিক ভবনের সৌন্দর্য যেন বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। হাবিপ্রবি লাইব্রেরী চত্বরের পাশে চলে বিভিন্ন ক্লাবের প্রাত্যহিক ও সাপ্তাহিক কার্যক্রম এবং শিক্ষার্থীদের আড্ডা।

হাবিপ্রবিতে রয়েছে উত্তরবঙ্গের সময়ের সেরা মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার। এর প্রবেশ পথেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের মানচিত্র। এদিকে হাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে হাবিপ্রবিতে দেশের প্রথম ক্যারিয়ার অ্যাডভাইজারি সার্ভিস সেন্টার গড়ে তোলা হয়। পাশাপাশি দিনাজপুরের প্রান্তিক কৃষকদের বিনামূল্যে সেবা দিতে গড়ে তোলা হয়েছে কৃষক সেবা কেন্দ্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর সার্ভিস (বিএনসিসি), যেখানে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি দেশ-জাতি তথা মানব সেবা ও সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচীতেও অংশগ্রহণ করছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে গণমাধ্যম কর্মীদের একমাত্র সংগঠন ‘হাবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি’, যেখানে গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতিনিয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব সাফল্য দেশ তথা বিশ্বের কাছে তুলে ধরছে এবং শিক্ষার্থীদের সমসাময়িক বিভিন্ন ভোগান্তি ও সমস্যা সমাধানে লেখনীর মাধ্যমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

উল্লেখ্য যে, বৃটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে (৯ -১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) রাষ্ট্রীয় শোক পালন করায় আগামী রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) হাবিপ্রবি’র ২৪ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে ঘোষিত কর্মসূচীসমূহ ১১ তারিখের পরিবর্তে আগামী সোমবার ( ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২) অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকা, ১০ সেপ্টেম্বর(ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//জেডআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ