বেরোবি লাইভ: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ছাত্রলীগ-ব্যবসায়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আতণ্ঙ ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও অঘ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। এতে আহত হয়েছে অন্ত ২৫ জন। চাঁদা দাবি করে না পাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্কের মোড় এলাকায় ব্যবসায়ী ও ছাত্রলীগের মধ্যে দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এদিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করেছে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি। শনিবার সকাল ও সন্ধ্যায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দফায় দফায় সংঘর্ষ জড়িলে পড়লে দলটি এ সিদ্ধান্ত নেয়। কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন কমিটি স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করে ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এ কমিটির সকল কার্যক্রম স্থতিগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়াও তিনি বলেন, দায়ীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শনিবার সকালে ওই এলাকার লিফা ফাস্ট ফুড অ্যান্ড কনফেকশনারিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করার পর থানায় মামলা দায়ের হলে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এরপর বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এ নিয়ে দু’গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বেরোবি ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শিশির শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্কের মোড় এলাকার লিফা ফাস্ট ফুড অ্যান্ড কনফেকশনারির মালিক এবং পার্কের মোড় দোকান মালিক সমিতির আহ্বায়ক মাজেদুল ইসলাম লাবলুর কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
এতে দোকান মালিক রাজি না হওয়ায় শিশির ক্ষিপ্ত হয়ে তার অনুসারীদের নিয়ে শনিবার সকাল ১০টার দিকে দোকানে গিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এতে দোকানে রাখা চারটি ফ্রিজসহ বিভিন্ন মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে পার্কের মোড়ের ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষুব্ধ দোকান মালিকরা। তবে অবরোধ তুলে নিলেও পার্কের মোড় এলাকার সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তর্মূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন তারা।
এ ঘটনায় বেরোবি ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শিশিরের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে শনিবার দুপুরে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন মাজেদুল ইসলাম লাবলু।
এদিকে মামলা দায়েরের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিকেল থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিতে থাকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে সাড়ে ৫টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ব্যবসায়ীদের উপর হামলা চালায়। এসময় ব্যবসায়ীরাও পাল্টা আক্রমণ করলে উভয়পক্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
একপর্যায়ে ব্যবসায়ীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে আগুন ধরিয়ে দেয়। অপরদিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পার্কের মোড়ের ৭/৮ টি দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এসময় রংপুর-কুড়িগ্রাম-লালমিনরহাট সড়কে সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ থাকে। রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
এ বিষয়ে বেরোবি ছাত্রলীগের সভাপতি শিশিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হচ্ছে। ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম। উক্ত ব্যবসায়ীর সঙ্গে একজন সাধারণ ছাত্রের কথা কাটাকাটি হয়েছে। এর জের ধরে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এখানে ছাত্রলীগের কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা নেই।
একপর্যায়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে স্থানীয়রা যোগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টাব্যাপি দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় সাইফুর রহমান নামে পুলিশের এক এসআই, স্থানীয় পত্রিকার ফটো সাংবাদিক রনজিৎ দাস, যুগান্তরের উদয় চন্দ্রসহ উভয়পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।
কোতোয়ালি থানার ওসি এবিএম জাহিদুল ইসলাম দোকান ভাঙচুরের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, থানায় মামলা হয়েছে। তদন্ত করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সন্ধ্যার পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে।
ঢাকা, ০৪ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: