বেরোবি লাইভ: হিমঘরে চলে গেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির তথ্যানুসন্ধান। ৪ মাসেও জমা পড়েনি চূড়ান্ত প্রতিবেদন, ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে জালিয়াতির সাথে জড়িত চক্রটি। ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে জালিয়াতির আসল ঘটনা।
জানা যায়, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ১ম বর্ষের ভর্তি সাক্ষাৎকারে জালিয়াতির অভিযোগে ৬ শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড.আবু কালাম মো. ফরিদ উল ইসলাম কোতোয়ালি থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
আটককৃত ছয় শিক্ষার্থীর মধ্যে লালমনিরহাট জেলার মিশনমোড় এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে শামস বিন শাহরিয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদে ভর্তি জালিয়াতি সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য বেড়িয়ে আসে।
তার দেয়া তথ্যে ভর্তি জালিয়াতির সাথে জড়িত রংপুর নগরীর খামার মোড় এলাকার কথিত এক আন্টি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারীর নাম বেড়িয়ে আসে। এর কয়েকদিন পর জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারোল কর্মচারী রায়হান চৌধুরী পিন্টুকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।তবে ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছেন সেলিমা বেগম (৫০) নামের সেই আন্টি।
পিন্টুকে গ্রেফতারের পর রংপুর কোতোয়ালী থানার উপ পরিদর্শক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মহিব্বুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, ‘ভর্তি পরিক্ষায় জালিয়াতির ঘটনায় পিন্টুর জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। ভর্তি জালিয়াতির সাথে জড়িত সেই আন্টির সাথে পিন্টুর যোগসাজশ ছিল। পরিকল্পিতভাবে পিন্টু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নাম ভাঙ্গিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে অনেক কিছু স্বীকার করেছে।’
পরবর্তীতে এঘটনায় জড়িত আরও তিন ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। এঘটনায় সর্বমোট ১০ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হলেও ধরাছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে প্রভাবশালী সেই আন্টিসহ মূল হোতারা।
এদিকে, ভর্তি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। চাকুরিতে এখনও বহাল রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই কর্মচারী রায়হান চৌধুরী। উল্টো ভর্তি কার্যক্রম থেকে বাদ দেয়া হয়েছে জালিয়াতির ঘটনা উন্মোচনকারী দুই শিক্ষককে।
এদিকে জালিয়াতির ঘটানায় গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর আজিজুর রহমানকে তথ্যানুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক এবং সহকারী প্রক্টর মুহাম্মদ শামসুজ্জামানকে কমিটির সদস্যসচিব করা হয়।
কমিটির অন্য সদস্য হলেন সহকারী প্রক্টর এবং ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. আতিউর রহমান। ওই কমিটিকে অতি শ্রীঘই প্রতিবেদন জমা দিতে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু জালিয়াতি তদন্তে গঠিত তথ্যানুসন্ধান কমিটি ৪ মাসেও তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। যথাসময়ে তথ্যানুসন্ধান শেষ না হওয়ায় চাপা পড়ে যাচ্ছে ভর্তি জালিয়াতির বিষয়টি। আর দীর্ঘদিন পরও এঘটনায় জড়িতরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় বিভিন্ন মহলে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর আজিজুর রহমান বলেন, ‘তথ্যানুসন্ধান কাজ প্রায় শেষের দিকে। আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই আমরা চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারবো। তবে কবে নাগাদ চূরান্ত রির্পোট জমা দেওয়া হবে হবে সে বিষয়ে পরিস্কার কিছু বলেননি তিনি।
এ মামলার তদন্ত করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বে নিয়োজিত উপ-পরিদর্শক মহিব্বুল ইসমলাম। মামলার সার্বিকবিষয়ে জানতে তার সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করলে তাকে না পাওয়ায় মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়নি।
ঢাকা, ২২ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: