Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

হাবিপ্রবিতে একের পর এক যৌন নির্যাতন, বিচার ‘আইওয়াশ’

প্রকাশিত: ১৯ মে ২০১৮, ১৯:০১

দিনাজপুর লাইভ : হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) একের পর এক যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এসব ঘটনার সত্যতা মিললেও দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ২ বছরে বেশ কয়েকজন ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন যেসব ঘটনার কার্যত কোন বিচার হয়নি। এবার যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা। এক অনুষদের ডীনের মাধ্যমেই তিনি ওই নিপীড়ণের শিকার হয়েছেন। এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। গত ১৪ মে যৌন হয়রানির জন্য দায়ি শিক্ষকের বিচার দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের ব্যানারে ওই কর্মসূচি পালন করা হয়।

এ সময় শিক্ষকরা বলেন, একের পর এক শিক্ষার্থীর যৌন হয়রানীর মত বর্বরচিত ঘটনা ঘটছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এসব অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষকদের আড়াল করছেন প্রশাসন এবং তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। যার ফলে একের পর এক ঘটনার অবতারনা ঘটছে, যাতে করে শিক্ষকদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ণ হচ্ছে। প্রয়োজনীয় তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষকরা।

জানা গেছে, গত ২৫ এপ্রিল যৌন হয়রানির শিকার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে জানানো হয়েছে, দীর্ঘদিন যাবত বিশ্ববিদ্যালয়ের সোস্যাল সাইন্স এ­ হিউম্যানেটিস অনুষদের ডীন এটিএম রেজাউল হক তার সঙ্গে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণ করে আসছেন। কুরুচিপূর্ণ প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় তাকে মানষিকভাবে হয়রানী ও চাকরি স্থায়ী না করার হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। ২০১৪ সালে ওই নারী শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এক বছর ধরে ডীন এটিএম রেজাউল হক তার সঙ্গে যৌন ইঙ্গিতপুর্ণ আচরণ করছেন। এক পর্যায়ে ওই তিনি বিষয়টি তার মা ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক স্বামীকে অবহিত করেন। যৌন ইঙ্গিতপুর্ণ আচরণে সাড়া না দেয়ায় বিভিন্ন হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন ওই শিক্ষিকা। ২০১৫ সালেও একই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। কিন্তু এবিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এর আগে গত ২০১৬ সালে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক দীপক কুমার সরকারের বিরুদ্ধে একই বিভাগের এক ছাত্রীর সঙ্গে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে। ঘটনাটি ব্যাপক আলোচিত হয়। শিক্ষার্থীদের দু’টি অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষক দীপক কুমার সরকারের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি একই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ করা হয়। তবে এনিয়ে কোন কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

গত ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বায়োকেমিষ্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ছাত্রী একই বিভাগের এমএস প্রোগ্রামের তত্ত্ববধায়ক ও এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডা. রমজান আলীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। পরে এঘটনায় তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। কিন্তু শুধুমাত্র সতর্ক করে দিয়ে ওই শিক্ষককে এক বছর তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হয়। এছাড়া কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

নির্যাতনের শিকার একজন জানান, অভিযোগ দায়েরের পর যে হিসেবে শাস্তি পাওয়া দরকার সেই হিসেবে শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে না। প্রশাসন কিংবা তদন্ত কমিটিকে হাত করে নিয়ে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছেন। যার কারণে যৌন হয়রানীর ঘটনা বাড়ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এদিকে শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির বিষয়ে ডীন এটিএম রেজাউল হক জানান, তার বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগ শতভাগ মিথ্যা। পরীক্ষার হলে স্বামী-স্ত্রী বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছিল। পরে এই বিষয়টি নিয়ে রেজিষ্ট্রার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে মানসিকভাবে নির্যাতন করতে এমন অভিযোগ করছে। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী নির্যাতন নিপীড়ন সেলের আহবায়ক প্রফেসর ড. ফাহিমা খানম জানান, শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানীর একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি এখনও তদন্তনাধীন, তাই এ ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার প্রফেসর ড. সফিউল আলম জানান, সম্প্রতি শিক্ষিকা কর্তৃক একটি অভিযোগ পেয়েছেন তিনি। এই বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানীর ঘটনা ঘটছে এ ব্যাপারে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এ যাবত যতগুলো ঘটনা ঘটেছে সবগুলোই মানসিক নির্যাতন। কোনটাই যৌন হয়রানি নয়। তবে এসব ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও সুপারিশ অনুযায়ীই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ঢাকা, ১৯ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ