সাইয়্যেদা রহমান : বাসে যাতায়াতের সময় যতটা পারি কানে হেডফোন দিয়ে রাখি। পাশের কারো সঙ্গে যেন গালগল্প জুড়তে না হয় সেই ভয়ে। তো যাই হোক, আজ পাশে এক সুন্দরী, ভদ্র মহিলা ছিলেন, সঙ্গে বাচ্চা সাত বছরের। জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় যাচ্ছি? কোথায় পড়ি। তো যখনই শুনলেন ভার্সিটি! ওনার মাথায় বাজ পড়লো। তিনি ভার্সিটি উত্তর শোনার সাথে সাথেই আমাকে যা বললেনন এর জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
তিনি বলে বসলেন, "ভার্সিটি! ভার্সিটির মেয়েরা নাকি খুব খারাপ হয়।" আমি কথা বলার রুচিসহ ভাষা হারিয়ে ফেলার পরেও বললাম, দেখুন আমি এমনিতে অনার্সে পড়লেও খারাপ হতে পারি যদি আমি চাই। আর কেউ ভালো না খারাপ হবে তার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন দায়ী থাকবে? তিনি তারপরেও বললেন, যে হ্যাঁ কিন্তু আমিও দেখছি ভার্সিটির ৮০ পারসেন্ট মেয়েই খারাপ। আমি আর কথা বাড়াইনি। এরপর নিজে থেকে আবারও শুরু করলেন, "স্কুলের মেয়েদের আজকাল অনেক ঢং হইছে ক্লাসে টাচ ফোন নিয়ে আসে, পড়াশোনার কোন নামগন্ধই নাই। তারা খালি ভার্সিটির মেয়েদের মত রংঢং করে বেড়ায়!" আই রিপিট, ভার্সিটির মেয়েদের মত "রংঢং"
তো এবার আসি আসল কথায়, কথা হচ্ছে, ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েরা ভালো না, হলের মেয়েরা ভালো না, ডাক্তার মেয়েরা ভালো না, নার্স ভালো না (ওয়াক থু এই দুই প্রজাতি আবার রাতে ডিউটি দেয়) জাহাঙ্গীরনগরের মেয়েরা ভালো না এন্ড ফাইনালি ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড মেয়ে ভালো না। আর এই ভালো না মানে আমি আপনি সবাই জানি। এই ভালো না মানে চরিত্র ভালো না। কিন্তু কেউ ভাবে না চরিত্র কখনও একা খারাপ হতে পারে না এটা দুইজনে মিলে খারাপ করতে হয়।
আজ থাক সেসব টপিক, এখন যেটা পয়েন্ট সেটা হলো এই যে বিশেষ বিশেষ জায়গার মেয়েদের খারাপ বলছেনতো আপনি আগে সেখানে যান তারপর তাদের দিকে আঙ্গুল তুলুন। হ্যাঁ, ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে রিজেক্ট করেন তারপর বলেন, ভার্সিটির মেয়েরা খারাপ। হলে সিট পেয়ে রিজেক্ট করেন, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার চান্স থাকলেও চুপচাপ বসে থাকেন তারপর বলুন তারা খারাপ, জাহাঙ্গীরনগরে চান্স পেয়ে রিজেক্ট করুন তারপর বলুন জানবিবির মেয়েরা খারাপ। আর হ্যাঁ ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড হতেও না ট্যালেন্ট লাগে নিজে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যান, যেয়ে ক্যারিয়ারের ইস্তফা টানুন তারপর বলুন যে হ্যাঁ ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড মেয়েরা ভালো না।
আমরা জাতি হিসেবে প্রচন্ড ভন্ড প্রচন্ড। নিজেরা যেটা পারি না, অন্যরা সেটা পারলে কোনভাবেই আমাদের সহ্য হয় না। কোনভাবেই না। যোগ্যতা না থাকা স্বত্বেও আমাদের বিন্দুমাত্র লজ্জাও করে না এভাবে বলতে, ওমুক তমুকেরা ভালো হয় না... আমরা এতটাই নির্লজ্জভাবে ভন্ডামি করতে পারি।
তো ফাইনালি ফিরে যাই বাসের ওই মহিলার কাছে... টুইস্ট এখনও বাকি! তো বাস থেকে নামার আগে জিজ্ঞেস করলাম, এসএসসি কত ব্যাচ আপনার? এরপর সে তিনি যা বললেনতার জন্যও আমি প্রস্তুত ছিলাম না। তার উত্তর, ওই যে জেএসসি ফাস্ট ব্যাচটা ওটা ছিলাম আমরা। আমি বললাম, ও তারপর... তার উত্তর ওই ব্যাচটাই ছিলাম... হু তো এসএসসি কত, দেননি পরীক্ষা? তার উত্তর, না দেই নি! জাতি হিসেবে কতটা ভন্ড আমরা তা আবারও প্রমাণিত!
অতঃপর, আবারও ভাষা হারিয়ে বাস থেকে নেমে তাকে কয়েকটা গালি দিলাম মনে মনে। আর মনে মনে বলেই ফেললাম, ভার্সিটির মেয়েরা শুধু খারাপ হয় না এরা সময়ে অসময়ে মুখটাও খারাপ করতে পারে। আসলে, মা নিরক্ষর হোক, মা অশিক্ষিত হোক কিন্তু কোন মা যেন মূর্খ না হয়। একজন মূর্খ মা জাতির জন্য হুমকি স্বরূপ।
সাইয়্যেদা রহমান
শিক্ষার্থী, বেগম রোকয়া বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা, ১৭ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//সিএস
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: