Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

আইএইচটির ছাত্রীদের যে ভাবে গণধর্ষনের হুমকি দেয়া হতো

প্রকাশিত: ৮ ডিসেম্বার ২০১৭, ০২:০৩

 

নাজমুস সাকিব: রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে তোলপাড় চলছে। তাদের নানা ধরনের অপকর্মের ব্যাপারে অনেকেই এখন মুখ খুলছেন। গণধর্ষনের মতো জঘন্য হুমকি দিয়েও তারা এলাকায় দাবড়ে বেড়াত। আইএইচটি কিংবা পুলিশ প্রশাসন তাদের দেখেও না দেখার ভান করতো। তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হতো না কোন ধরনের অ্যাকশন।

 

বলছেন আগে এদের ভয়ে কেউ কোন কিছু বলতো না। কিন্তু ছাত্রীদের গণধর্ষনের হুমকির পর অভিবাবক ও এলাকাবাসী সতর্ক অবস্থানে আছেন। তারা বলছেন ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ ও সাধারণ সম্পাদক তুহীন নানান ধরনের খারাপ কাজ এলাকায় করতো।

এরা একটি সিন্ডিকেট তৈরী করে আইএইচটির ছাত্রীদের নানানভাবে উত্যক্ত করতো। চেহারা সুন্দর ছাত্রীদের দেখে আজে-বাজে মন্তব্য ছুড়ে মারতো। শিশ দিত। কিন্তু তাদের ভয়ে কেউ কোন কিছু বলার সাহস পেত না।

আইএইচটির ছাত্রী

আইএইচটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, তাদের কথা না শুনলে ছাত্রীদের প্রকাশে চিৎকার করে কখনও তাদের কর্মীদের মাধ্যমে গণধর্ষনের হুমকি দিত। তাদের ভয়ে ছাত্রীরা অনেকদিন ক্লাসও করতো না। আবার একথা বলাবলি করতেও ভয় পেত ছাত্রীরা।

আইএইচটির একটি ঘনিষ্ট সূত্র জানিয়েছে রাজশাহী আইএইচটি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হাসান ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের ছাত্রত্ব নেই। ২০১২ সালে গঠিত কমিটির মেয়াদও ২০১৩ সালেই শেষ হয়ে গেছে।

কিন্তু এখনো অছাত্র এই দুই নেতা আইএইচটিতে রাজত্ব করে চলেছেন। ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের নিয়ে তাঁদের চলাচল বলেও অভিযোগ উঠেছে। এরা ক্যাম্পাসে থেকে চাঁদাবাজি, রংবাজি ও মাস্তানি করে বেড়াত। বিভিন্ন সময় ছাত্র-ছাত্রীদরে কাছ থেকে জোড় করে নানান ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা-পয়সা নিয়ে যেত। কিন্তু নিরবে সবই সহ্য করতো শিক্ষার্থীরা।

জানাগেছে জাহিদ ও তুহীনের সিন্ডিকেটে ছিল ছাত্রলীগ নামধারী সাইদ হাসান, মাহমুদ হাসান, জাকির হোসেন, কাইউম, নাহিদসহ বহিরাগত আরো কয়েকজন। এরাই ওই এলাকাকে তাদের দখলে রেখেছে।

সেদিন যা ঘটেছিল:

আইএইচটির অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শেষে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হোস্টেলের সব ছাত্রী ও তাদের সহপাঠী কয়েকজন ছাত্র মিলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে যায় অধ্যক্ষের কাছে। সেখানে তারা ধর্ষণের হুমকি প্রদানকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের শাস্তি, ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হোস্টেলের সামনে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ বিভিন্ন দাবি জানায়।

অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে ফেরার পথে ছাত্রীদের পেছন থেকে ধাওয়া করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় আইএইচটি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন তুহিনকে সামনে থেকে ছাত্রীদের ধাওয়া করতে দেখা যায়। তিনি কয়েকজন ছাত্রীর পরনের কাপড় ধরে হাত দিয়ে পেটাতে থাকেন। তাঁর সঙ্গে যোগ দেয় ছাত্রলীগের আরো অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী। তারাও ছাত্রীদের ধরে ধরে পেটাতে থাকে।


ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের এই হামলায় কমপক্ষে পাঁচজন ছাত্রী আহত হন। হোস্টেলের প্রধান ফটকের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এমন ঘটনা ঘটালেও উপস্থিত পুলিশ ছিল নীরব দর্শকের ভূমিকায়। পরে পুলিশ এগিয়ে যায়। এ সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করতেও দেখা যায়। অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

মারধরের শিকার শিক্ষার্থীরা জানায়, গণধর্ষণের হুমকির প্রতিবাদে গতকাল সকালে ছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করলে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন তুহিন, কর্মী সাইদ হাসান, মাহমুদ হাসান, জাকির হোসেন, কাইউম, নাহিদসহ বহিরাগত আরো কয়েকজন মিলে তাদের উদ্দেশ করে গালাগাল করতে থাকে।

এ সময় উভয় পক্ষে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকেই ক্যাম্পাসে পুলিশ উপস্থিত ছিল। কিন্তু ছাত্রীদের মারধরের সময় পুলিশ তেমন কোনো ভূমিকা পালন করেনি। পুলিশের উপস্থিতিতেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ধাওয়া দিয়ে ছাত্রীদের পিটিয়ে আহত করে। সাধারণ কয়েকজন ছাত্র এ সময় ছাত্রীদের উদ্ধার করতে গেলে তাদেরও পেটানো হয়।

আহত নাবিলা, রূপাসহ অন্যরা জানান, ২০১৪ সালের ৩ ডিসেম্বর বরিশালে আইএইচটির শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার পর থেকে ওই দিনটিকে কালো দিবস পালন করে আসছেন তাঁরা।

এরই অংশ হিসেবে গত ৩ ডিসেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করে রাজশাহী আইএইচটির শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগ চাচ্ছিল ক্যাম্পাসের ভেতরেই কর্মসূচি পালন করা হোক। আর সাধারণ শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি পালন করতে চায় ক্যাম্পাসের বাইরে।

এর জের ধরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। এমনকি কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ায় ছাত্রীদের নেতৃত্বদানকারী দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে হোস্টেলে ঢুকে প্রকাশ্যে গণর্ধষণের হুমকি দেয় তারা। অন্য ছাত্রীদেরও এমন হুমকি দেওয়া হয়। এ ছাড়া হোস্টেলের বাইরে অবস্থান নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছাত্রীদের অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করতে থাকে।

ফার্মেসি বিভাগের এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, গত ৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে যোগ দিতে রাজি না হওয়ায় সংগঠনটির নেতারা ছাত্রীদের ডেকে পাঠান। কিন্তু যে ছাত্রীরা তাঁদের সঙ্গে দেখা করেনি তাদের হোস্টেলে ঢুকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়।

সেই বৈঠকে ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। এই ঘটনার বিচার চাইতেই বুধবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ছাত্রীরা। শেষে অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে ফেরার পথে তাদের ওপর পেছন থেকে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

হামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ রাজশাহী আইএইচটি শাখার বহিস্কৃত সভাপতি জাহিদ হাসান জাহিদ ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, 'ছাত্রলীগ চাইছিল গত ৩ ডিসেম্বর মানববন্ধন কর্মসূচি আইএইচটির ভেতরেই করা হোক।

কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রীরা নগরীর জিরো পয়েন্টে ওই কর্মসূচি করতে চায়। এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে ছাত্রীরাই আগে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে গালাগাল করে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কোনো ছাত্রীকে গণধর্ষণের হুমকি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। '

বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন তুহিন ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, 'আতঙ্কে দৌড় দিতে গিয়ে হোস্টেলের প্রধান ফটকের সামনে ধাক্কা খেয়ে কয়েকজন ছাত্রী সামান্য আহত হয়েছে। আমরা কেউ তাদের মারধর করিনি। '

আইএইচটির অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, 'শুনেছি কয়েকজন ছাত্রীকে পেটানো হয়েছে। তাদের ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ পেয়েছি। এসব বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হবে। এরপর জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। '

রাজপাড়া থানার ওসি হাফিজুর রহমান ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ অথবা ছাত্রীদের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। অভিযোগ পাওয়া গেলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে ছাত্রীদের উপর হামলায় জড়িত থাকায় আইএইচটি ছাত্রলীগের চার নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের দল থেকে বহিষ্কার করেন।

আইএইচটির প্রিন্সিপাল ডা. সিরাজুল ইসলাম ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, আইএইচটির সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলামকে সভাপতি করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন সহকারী অধ্যাপক সেলিম খান ও দুরুল হুদা। কমিটিকে শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আর এ ঘটনায় ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়ের করা হবে কিনা তা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান প্রিন্সিপাল সিরাজুল ইসলাম।

ঢাকা, ০৭ ডিসেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এআই


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ