রাবি লাইভ: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ‘দি ডেইলী স্টারের’ সাংবাদিক আরফাত রহমানকে ছাত্রলীগ কর্তৃক মারধরে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আহত সাংবাদিক আরাফাত রহমান বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
মঙ্গলবার সকালে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির।
তিনি জানান, আহত সাংবাদিক বাদী হয়ে ৪ জনের নামউল্লেখ্য সহ অজ্ঞাত ৮-১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।
এছাড়া পেশাগত দায়িত্ব পালনে তথ্য সংগ্রহে গেলে ছাত্রলীগ নেতা কানন, সজীব, বিজয়, লাবন তাকে নির্যাতন করেছে উল্লেখ্য করে মারধর কারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর অভিযোগ পত্র দিয়েছে সে। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর প্রফেসর মজিবুল হক আজাদ খান বরাবর এই অভিযোগ পত্র প্রদান করা হয়।
এর আগে সহকর্মী আরাফাতের উপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দের ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন তারা।
এসময় বক্তারা বলেন, ঘটনার পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। কোথাও পুলিশ হামলা চালিয়েছে এবং কোথাও সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন কারা হামলা চালিয়েছে। প্রত্যাশা করেছিলাম যারা অপরাধ করেছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদানে ছাত্রলীগ সহযোগিতা করবে। স্পষ্ট কয়েকজনের পরিচয় মিললেও দু’জনকে বহিষ্কারের নাটক করা হয়েছে।
তারা আরও বলেন, বহিষ্কার মানে আমরা বুঝি এটা বহিষ্কার নয় ছাত্রলীগের বহিষ্কার মানেই পুরস্কৃত করা। বহিষ্কৃত ছাত্রলীগের নেতারাই পরবর্তিতে নেতৃত্ব দিয়েছে। এই বহিষ্কার নাটকের মাধ্যমে সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার হতে পারে না।
বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজ রনির সঞ্চালনা এবং রাবি রিপোর্টাস ইউনিটির সভাপতি কায়কোবাদ আল মামুনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি তাসলিমুল আলম তৌহিদ, সাধারণ সম্পাদক ইমাদাদুল হক সোহাগ, রাবিসাসের সভাপতি দৈনিক যুগান্তর প্রতিনিধি হাসান আদিব, সহ-সভাপতি মোস্তাফিজ মিশু, রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক হোসাইন মিঠু, ডিবিসি টেলিভিশন ও দৈনিক সমকালের রাজশাহী প্রতিনিধি সৌরভ হাবিব, বিএফইউজের সদস্য জাভেদ অপু প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আরাফাতের ওপর হামলা মানেই গণমাধ্যমের ওপর হামলা। হামলায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতা মো. কানন, সাইফুল ইসলাম বিজয়, আহমেদ সজিব, আবির হাসান লাবনসহ নেতাকর্মীর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবিলম্বে বহিষ্কার করতে হবে।
ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে দুই ছাত্রলীগ নেতার বহিষ্কারের কথা উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, শুধু দুই নেতাকে বহিষ্কারের নাটক করলেই আপনাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। জড়িতদের স্থায়ী বহিষ্কার করে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। যতদিন পর্যন্ত আপনারা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিবেন ততদিন আমরা রাবি ছাত্রলীগের কোনো পজিটিভ নিউজ করব না।
বক্তারা আরো বলেন, মারধরের ঘটনায় আরাফাত রহমান বাদী হয়ে যে মামলা করেছেন পুলিশ প্রশাসন যেন আসামীদের গ্রেফতার করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা সাংবাদিকের উপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী রাবি শাখার সভাপতি প্রদীপ মার্ডি।
উল্লেখ্য, গত সোমবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে দেশ ট্রাভেলস-এর বাস ভাঙচুর করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আহমেদ সজীব, সাংগঠনিক সম্পাদক আবিদ আল হাসান লাবন, আইন বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিজয়, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কাননসহ ১০/১২ জন নেতাকর্মী।
ওই ঘটনার ছবি তোলায় সাংবাদিক আরাফাতের ওপর চড়াও হয়ে তাকে মারধর করে ছাত্রলীগ নেতারা। পরে গুরুত্বর আহত অবস্থায় আরাফাতকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
ঢাকা, ১১ জুলাই (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএইচ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: