Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০
teletalk.com.bd
thecitybank.com
রাবিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত

‘বাঙালিকে মেধাশূন্য করতে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়’

প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বার ২০২২, ০৪:০৭

স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভা

রাবি লাইভ: আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দিবসটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) যথাযোগ্য মর্যাদায় এ দিবসটি পালন করা হয়েছে। এদিন ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে প্রশাসন ভবনসহ অন্যান্য ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত উত্তোলন করা হয়।

সকাল ৮টায় ভিসি প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকে এবং সকাল সাড়ে ৮ টায় শহীদ মিনার ও বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এসময় প্রো ভিসি প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলাম, প্রো ভিসি প্রফেসর মো. হুমায়ুন কবীর, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক, রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. আবদুস সালাম, অনুষদ অধিকর্তা, ইনস্টিটিউট পরিচালক, বিভাগীয় সভাপতি, সিন্ডিকেট সদস্য, প্রক্টর প্রফেসর মো. আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রদীপ কুমার পান্ডেসহ বিশিষ্ট শিক্ষক ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও সকাল সোয়া ৯ টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভা। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন কমিটির সভাপতি প্রো ভিসি প্রফেসর মো. হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে এই আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ শিক্ষক মীর আব্দুল কাইয়ূমের স্ত্রী প্রফেসর মাসতুরা খানম স্মৃতিচারণ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভিসি প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার ও বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রো ভিসি প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক।

প্রফেসর মাসতুরা খানম বলেন, ১৯৪৭ সালে ইংরেজদের দুইশ বছরের শাসন-শোষণের বেড়াজাল ভেঙে দুটি জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান শাসনামলে সেই একই শোষণ-বঞ্চনার শিকার হতে থাকলো পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। দীর্ঘ ২৪ বছর এই শোষণের কষাঘাতে জর্জরিত হয়েছে বাঙালি জাতি। ১৯৭১ সালে এই অত্যাচার-নির্যাতন চূড়ান্ত রূপ নিয়েছিল। পাকিস্তানী শাসকেরা পরিকল্পিতভাবে বাঙালি জাতিকে মেধাশূণ্য করার লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। কেননা তারা বুঝতে পেরেছিল এ দেশ স্বাধীন হবেই। তাই বাঙালি যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সেজন্যই পরিকল্পিত এই হত্যাযজ্ঞ ঘটায়।

তিনি আরো বলেন, হানাদার বাহিনী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্প স্থাপন করে হত্যাযজ্ঞ চালায়। ক্যাম্পাসের জোহা হলের বন্দিশালায় ধরে নিয়ে আসা মানুষের উপর নির্যাতন চলতো। এছাড়াও মন্নুজান হল, পশ্চিমপাড়ার ১৭ নম্বর কোয়াটার, জুবেরী ভবনে তারা নির্যাতন কেন্দ্র গড়ে তোলে। যেখান থেকে প্রতিরাতে নিরীহ মানুষকে নির্যাতন ও কান্নার আওয়াজ ভেসে আসত। ফলে সাধারণ মানুষ ভয়ে সেদিকে যেত না। এসব নির্মমতা শুধু হানাদারের হাতে হয়নি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হাতেও হয়েছে। পাকিস্তানের দোসরেরা বাঙালির স্বাধীনতার পথ চিরতরে বন্ধ করতেই এসব নির্মম কর্মকাণ্ড চালায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদী কণ্ঠগুলো স্তব্ধ করতেই তারা এই ক্যাম্পাসে নির্মম হত্যাযজ্ঞ ও নৃশংস তাণ্ডব চালিয়েছিল। এই বর্বরতায় আমি স্বামীকে হারিয়েছি, কিন্তু এটা কষ্টের চেয়ে বেশি গর্বের। তাই বুদ্ধিজীবীদের চেতনা ও আদর্শ সবাইকে লালন করার আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে ভিসি প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী হত্যার উদ্দেশ্য ছিল বাঙালির স্বাধীনতার স্পৃহাকে স্তিমিত করা। তাই ইয়াহিয়া খান এই যজ্ঞ পরিচালনার জন্য বেলুচিস্তানের কসাই টিক্কা খান ও রাও ফরমান আলীকে এখানে পাঠিয়েছিলেন। তারা পরিকল্পিতভাবে বাঙালিকে মেধাশূন্য করতে বেছে বেছে বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তখন রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ গোটা দেশ। বিশ্বের কোথাও এমন হত্যার নজির নাই।

তিনি আরো বলেন, এই হত্যাযজ্ঞে সহযোগিতা করেছিল পাক হানাদারদের এদেশি দোসররা। এই রাজাকার ও আলবদরেরা খুঁজে খুঁঁজে এই বুদ্ধিজীবীদেরকে হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। নির্মম হত্যাযজ্ঞের মধ্যেও বাঙালি দমে যায়নি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রতিরোধ গড়ে, রক্ত ও জীবন দিয়ে এই দেশ মুক্ত করেছিল। প্রসঙ্গক্রমে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাক হানাদারদের বর্বরোচিত হামলা ও হত্যার নির্মম চিত্র তুলে ধরে স্মৃতিচারণ করেন।

দিবসের কর্মসূচিতে আরো আছে বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা; পৌনে ৫ টায় শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে প্রদীপ প্রজ্জ্বালন ও সন্ধ্যা ৬টায় কৌশিক সরকারের নির্দেশনা ও সুমনা সরকারের গ্রন্থনা ও অভিনয়ে নাটক ‘জয়জয়িতা’ মঞ্চায়ন করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাড়াও ইনস্টিটিউট, বিভাগ, আবাসিক হল ও অন্যান্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নিজ নিজ কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করে।

ঢাকা, ১৪ ডিসেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//ওএফ//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ