রাবি লাইভ: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২১-২২ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেও পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়েছেন ৭১ শিক্ষার্থী। কোটা নীতিমালা পরিবর্তন করে পাশ নম্বর ৪০ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হয়েছে। এতে সুবিধা নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মালী, কর্মকর্তা ও প্রফেসররাও।
এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেল করা শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিলসহ তিনদফা দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো, ফেল করে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে ভর্তি বাতিল করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান পোষ্য কোটা বাতিল করা, জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিলসহ এই চক্রের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা।
মানববন্ধনে দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুল্লাহ মুহিবের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাব্বত হোসেন মিলন, রাকসু আন্দোলন মঞ্চ সমন্বক আবদুল মজিদ অন্তর, সদস্য সচিব আমানুল্লাহ খান আমান, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সভাপতি মেহেদী হাসান মুন্না, সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান প্রমুখ।
রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাম থেকে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা মেধার বলে প্রতিযোগিতা মাধ্যমে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু এখন দেখছি সেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করে ফেল করা শিক্ষার্থীদের বৈষ্যমের শিকার করা হচ্ছে। আমরা চাই ফেল করেও যে সকল অযোগ্য শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে তাদের ভর্তি বাতিল করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা, শিক্ষক, কর্মচারীদের অযোগ্য সন্তারা ভর্তি হয়ে সুনাম খর্ব করছে।
তিনি আরো বলেন, এবছর ভর্তি জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েকজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। যারা এই জালিয়াতি চক্র রয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। যদি ফেল করা শিক্ষার্থী ও জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় তাহলে আমরা ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাব।
নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সভাপতি মেহেদী হাসাম মুন্না বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কে ধ্বংস করার জন্য পোষ্য কোটাকে যে রূপ দিয়েছে তা অনৈতিক। বিশ্ববিদ্যালয়কে গোয়ালঘরে পরিণত করেছে। পরিবারতান্ত্রিক, স্বজনপ্রীতি ও সৈরতান্ত্রিক কাঠামোই এর জন্য দায়ী।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি জালিয়াতি করে ভর্তি হওয়ার তথ্য প্রকাশ হওয়ার পরেও কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করেনি প্রশাসন। আমরা প্রশাসনকে বলতে চাই যে ফেলকৃত শিক্ষার্থীদের ভর্তি জালিয়াতি (একজনের পরীক্ষা অন্যজন দেওয়া) করে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল করতে হবে। অন্যথায় আমরা ফেলকৃত শিক্ষার্থীদের সাথে যারা যোগ্যতা দিয়ে ভর্তি হয়েছেন। তাদের সাথে আমরা ক্লাস করতে দিবো না।
আগামীতে পোষ্যকোটা বাতিল করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভিসি প্রফেসর ড. হুমায়ুন কবীর ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, এই প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ সময় ধরেই চলে আসছে। আমরা আগামী ভর্তি পরীক্ষা বিভিন্ন পরিবর্তন আনতে চাচ্ছি। ভর্তি কমিটির মিটিংয়ে এসব কোটা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিব।
এর আগে গত বছর ৬ ডিসেম্বর রাবি ভিসি প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে ভর্তি পরীক্ষা উপকমিটির সভায় পোষ্য কোটায় পাশ নম্বর কমিয়ে আনা হয়। গত বছরও ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েও পোষ্য কোটায় ভর্তি হন ৪৬ শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ বছর এ ইউনিটে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন সর্বশেষ ৬১.৮৫ নম্বর ও প্রতিবন্ধী কোটায় সর্বশেষ ৪৬.৮৫ নম্বর পেয়ে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় সর্বশেষ ৫৯.৮০ নম্বর পেয়ে ভর্তি হয়েছেন। অন্যদিকে পোষ্য কোটায় অকৃতকার্য হয়েও ভর্তি হয়েছেন ৩০ নম্বর পেয়ে। এ বৈষম্য সুবিধা নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ প্রফেসর সহ ৯ শিক্ষক। অথচ প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটায় কোনো যোগ্যতা শিথিল করা হয়নি।
ভিডিও: https://www.facebook.com/Campuslive24/videos/808525513702626
ঢাকা, ১৩ নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//ওএফ//এমজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: