উমর ফারুক, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ৬০ শতাংশ নম্বর পেয়েই সাবজেক্ট পাচ্ছেন না ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা ঠিক অন্যদিকে ফেল করেও মিলছে ভর্তির সুযোগ। কথাটি শুনে আঁতকে উঠলেও এমনিই কান্ড ঘটেছে দেশের দ্বিতীয় সেরা এই বিদ্যাপীঠে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পোষ্য কোটায় ৩০ নম্বর পেয়েও অকৃতকার্য শিক্ষার্থী ভর্তির এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কোটায় আসন সংখ্যা পূর্ণ না হওয়ায় নূন্যতম ৪০ নম্বর কমিয়ে ৩০ নম্বরেই ভর্তি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি উপ-কমিটি।
এ বছর মোট তিনটি ইউনিটে ৪ হাজার ৬৪৬ সিটের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষা দেন দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। নূন্যতম পাশ নম্বর ছিলো ৪০। সর্বশেষ ৮ নভেম্বর পর্যন্ত ভর্তির সময়সীমা ছিল। তবে বিভিন্ন ইউনিটে বেশকিছু আসন ফাঁকা থাকায় ভর্তির সময়সীমা বাড়িয়ে ২৪ নভেম্বর করা হয়েছে।
প্রশাসন বলছে, পোষ্য কোটায় আসন ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে ন্যূনতম পাস নম্বর কমিয়ে ৩০ করা হয়েছে। কেননা হিসেব অনুসারে এই কোটায় ২০১ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। কিন্তু পাস নম্বর ৪০ থাকায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছে মাত্র ৬৭ জন। এখন পাস নম্বর কমানোর ফলে আরো ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু এখনো ৭৪টি আসন ফাঁকাই থাকবে।
সূত্রে জানা গেছে, ফেল করেও ভর্তি সুযোগ পাওয়া নিয়ে এক ধরনের চাপ থাকলেও শিক্ষক, কর্মকর্তা- কর্মচারীদের কারণেই এই কোটা বাতিল করা সম্ভব হচ্ছে না।
ভর্তি কমিটির এক সদস্য ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, ন্যূনতম পাস নম্বর ৪০ থাকার কারণে সেই কোটায় অধিকাংশ আসন ফাঁকাই থাকছে। তাই আসন পূর্ণ করার জন্যই নম্বর কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে পরবর্তীতে এই কোটায় ৩ শতাংশ আসন বরাদ্দের পাশাপাশি নূন্যতম পাশ নম্বর না রাখার প্রস্তাব দিয়েছে অধিকাংশ সদস্য।
সভা সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর রাবিতে পোষ্য কোটায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য মোট আসনের ৫ শতাংশ বরাদ্দ থাকে। যেখানে নূন্যতম পাস নম্বর পেলেই ভর্তির সুযোগ পায় তারা। কিন্তু সভায় এই সময়সীমা বাড়িয়ে ২৪ নভেম্বর করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ডীনরা বলছেন, বিভিন্ন ইউনিটে এখনো আসন ফাঁকা রয়েছে প্রায় ৭০টি। যার মধ্যে এ-ইউনিটে প্রায় ৩০টি এবং সি-ইউনিটে প্রায় ৪০টি। তাই আসন ফাঁকা থাকায় ভর্তির সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এদিকে নম্বর কমিয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প, শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তারিফ হাসান মেহেদী ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী/বিশেষ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরণে বেশকিছু ক্যাটাগরির কোটা বিদ্যমান। তাদের চান্স পাওয়ার ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করাটা বাধ্যতামূলক। কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এর ভিন্নতা চোখে পড়ার মতো। বিগত কয়েকবছর ধরে এখানে পোষ্যকোটায় ভর্তি করা হচ্ছে নিয়মের তোয়াক্কা না করেই। যেখানে পাস মার্ক ৪০ সেখানে এসব পোষ্য কোটাধারীরা পাস মার্কই তুলতেই ব্যর্থ। অথচ তাদের জন্য পাশ নম্বর কমিয়ে ৩০ করা হয়েছে যা কিনা শিক্ষা ব্যবস্থায় চরম একটি অব্যবস্থাপনা। যারা কিনা পাশই করতে পারেনি তারাই একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা হবে। একটু ভেবে দেখেছেন এসব অযোগ্যরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। নৈতিকতা ও স্বচ্ছতার কথা চিন্তা করে এসব অযোগ্যদের ভর্তি না করিয়ে সাধারণ কোটার শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দের জোর দাবি জানাচ্ছি।
রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ অন্তর ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, 'আমরা বিগত কয়েকবছর যাবত পোষ্যকোটা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছি। আমরা ইতিমধ্যে যে ১৬ দফা দাবি জানিয়ে গণসাক্ষর কর্মসূচী করছি তার মধ্যে পোষ্য কোটা বাতিল অন্যতম। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ এসব অযোগ্য শিক্ষার্থীদের ভর্তি না করিয়ে মেধাবীদের সুযোগ দিন।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র প্রফেসর ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, 'শিক্ষকরা-তো তার সন্তানদের সুযোগ সুবিধা দিয়েই পড়াশোনা করাতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে ভর্তির জন্য আলাদা সুবিধা কেন নিতে হবে। ফেল করেও যারা ভর্তির সুযোগ নেয় তারা মেধাবীদের সাথে অন্যায় করছে। কর্তৃপক্ষের উচিত এই কোটা আসন সংখ্যা শিথিল করা।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের এসোসিয়েট প্রফেসর আমিরুল ইসলাম কনক ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, 'বর্তমানে এ বিষয়টি খুব চিন্তার। যারা পিছিয়ে পরা তাদের জন্যই এই কোটা সিস্টেম তবে শিক্ষকরা তাদের সন্তানদের জন্য ঢালাওভাবে সুবিধা নিলে গ্রাম পর্যায় থেকে আসা শিক্ষার্থীদের সাথে অন্যায় করা হবে। তারা মেধার সাক্ষর রেখে এখানে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে অন্যজন বিশেষ সুবিধা নিয়ে ফেল করেও ভর্তি হচ্ছে বিষয়টা খুব বিব্রতকর। তাই এখন প্রশাসনের উচিত হবে এই আসনগুলো শিথিল অথবা বাতিল করা।'
পোষ্যকোটা প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. সুলতান-উল ইসলাম বলেন ক্যাম্পাসলাইভকে, 'এই কোটা প্রক্রিয়াই একটু জটিল। কেননা এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতেই সিদ্ধান্ত হয়। তবে আমরা পরবর্তীতে এই কোটায় বরাদ্দকৃত আসন কমানোর সুপারিশ করব।'
ঢাকা, ০৭ নভেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: