Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
মৃত্যুর আধঘন্টা পূর্বে মা ছেলের কথোপকথন...

‘সোনা বাবা, তুমি আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় দেখাবা না?’

প্রকাশিত: ২১ অক্টোবার ২০২২, ১৯:০৬

‘সোনা বাবা, তুমি আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় দেখাবা না?’

রাবি লাইভ: মায়ের সাথে শেষ কথা হয়েছিল শাহরিয়ারের। আদরমাখা মুখটা দেখা হয়নি যদিও। ১৯ অক্টোবর) দূর্ঘটনার আধঘন্টা আগে ছোট ছেলে গোলাম মুস্তাক শাহরিয়ারকে ফোন দিয়েছিলেন মা শাহনাজ বেগম। অল্পকিছু সময়ে মধ্যেই ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। মাঝে মাঝে বলছেন, ‘সোনা বাবা, তুমি আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় দেখাবা না?’

শাহরিয়ারের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তার পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে আসা লোকজন মায়ের আর্তনাদ শুনে চোখের পানি কেউ ধরে রাখতে পারেননি। শাহরিয়ারের মা-বাবাসহ আত্মীয়-স্বজনরা এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত ঘটনা জনসম্মুখে তুলে ধরার দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।

শাহরিয়ারের বাবা সাবেক সেনাসদস্য গোলাম মোস্তফা ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, পূজার ছুটিতে বাড়িতে এসেছিল ছেলে। বাড়ি থেকে যাওয়ার ১০ দিন হলো। ছেলে আমার বাড়িতে ফিরলো নিথর দেহ নিয়ে।

ও পরিবারের লোকজন জানান, কিছুদিন হলো শাহরিয়ারের বড় ভাই গোলাম সারওয়ার শাকিল গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেছেন। সে উপলক্ষে গত ৯ অক্টোবর বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন নিয়ে অনুষ্ঠান করা হয়। সেদিন অনুষ্ঠান শেষ ১০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যায় শাহরিয়ার।

নিহত গোলাম মুস্তাক শাহরিয়ারের মা শাহনাজ বেগম ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘আমার ছেলে মারা যাওয়ার আধঘণ্টা আগে আমার সঙ্গে কথা বলেছিল। কারও বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই । কেউ যদি কিছু করে থাকে তার বিচার আল্লাহ করবেন।’
রুমমেট ও সহপাঠী নাজমুল হাসান ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘চার বছর ধরে আমরা একসঙ্গে, এক রুমে থাকি।

গতকাল (বুধবার) বিকেলে আমরা রুম থেকে বের হয়ে যাই। ও এক জায়গায় চলে যায় আর আমি অন্য জায়গায় চলে যাই। সন্ধ্যার দিকে শাহরিয়ার ছাদ থেকে পড়ে গেছে এমন খবর আমি পাই। পরে হাসপাতালে গিয়ে দেখি সে আহত অবস্থায় ছটফট করছে। আমরা সে সময় কোথাও কোনো ডাক্তারকে খুঁজে পাইনি। তাকে জরুরিভাবে আইসিইউতে ভর্তি করানোর জন্য বারবার বলা হলেও আমাদের কথায় কেউ কর্ণপাত করেনি।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হবিবর রহমান হলের প্রভোস্ট শরিফুল ইসলাম ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ভালো ছাত্রের পাশাপাশি শাহরিয়ার একজন ভালো ফুটবল খেলোয়াড় ছিল। ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ার পর আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি সে মারা গেছে। তার এই মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।

পারিবারিক সূত্র জানায়, তাদের জানানো হয়েছে গোলাম মুস্তাক শাহরিয়ার যখন মায়ের সঙ্গে কথা শেষ করে হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে নামতে যাবে, এ সময় বারান্দার রেলিংয়ের ওপর থেকে একটি বিড়াল নিচে পড়ে যাচ্ছিল। এ সময় বিড়ালটিকে ধরতে গিয়ে তিনি পড়ে যান।

কিন্তু ঘটনাটি কতটুকু সত্য তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি। নিহত শাহরিয়ার দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ভান্ডারা ইউনিয়নের বেতুড়া গ্রামের ডিপপাড়া গ্রামের সাবেক সেনাসদস্য গোলাম মোস্তফার দ্বিতীয় ছেলে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি এসে পৌঁছালে কান্নার রোল পড়ে যায়। মা, ভাই-বোনের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। বিকেল সাড়ে ৪টায় জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয় শাহরিয়ারকে।
উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাবির হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে যান শাহরিয়ার।

শব্দ পাওয়ার পর কয়েকজন দেখতে পেয়ে তার কাছে ছুটে যান। ততক্ষণে তার মাথা ফেটে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। পরে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঢাকা, ২১ অক্টোবর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ