Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
ব্রিব্রত প্রশাসন...

রাবি ক্যাম্পাসে অনৈতিক কর্মকান্ড: তিনমাসে আটক ৮৪!

প্রকাশিত: ৪ সেপ্টেম্বার ২০২২, ২২:১৫

রাবি ক্যাম্পাসে অনৈতিক কর্মকান্ড

উমর ফারুক, রাবি: দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। শিক্ষা,গবেষণা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের জন্য সুনাম রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। তবে এমনি কিছু কান্ড ঘটেছে যা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষকে বিব্রত করে তুলছে। বহিরাগত ও মাদকাসক্তদের অবাদ চলাচলে বেড়েছে নিরাপত্তা সংকট। সেইসাথে সম্প্রতি ক্যাম্পাসে 'অনৈতিক কর্মকাণ্ড' বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। গত তিনমাসে বিভিন্ন 'অনৈতিক কর্মকাণ্ডে' জড়িত ৮৪ জনকে আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ক্যাম্পাস অভ্যন্তরে দিনে-রাতে এমন কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থী বলছেন, বহিরাগতরা এসে অবাধে ক্যাম্পাসে বিচরণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। যা খুবই দুঃখজনক এবং বিপদজনক। তারা যেকোন সময় অঘটন ঘটাতে পারে। এছাড়া ক্যাম্পাসে কিছু ছেলে-মেয়েরা এমনভাবে মেলামেশা করছেন, যা খুবই দৃষ্টিকটু। তাছাড়া ক্যাম্পাসে রাতে বহিরাগতদের দ্বারা ইভটিজিং করার ঘটনাও ঘটে। তাই অবিলম্বে এসমস্ত অপকর্ম বন্ধের পাশাপশি ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদার ও সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মাদকসেবন ও নারী-পুরুষের অবৈধ মেলামেশার বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডে বহিরাগতসহ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও জড়িত রয়েছেন। তবে এদের অধিকাংশই বহিরাগত বলে জানা গেছে। দিনের বেলা ক্যাম্পাসে এসব অপকর্ম তুলনামূলক কম চোখে পড়লেও প্রতিদিন সন্ধ্যার তা বাড়তে থাকে। তাই বিকেল থেকেই বিশেষ কিছু জায়গায় জনসমাগম বাড়তে শুরু করে। সন্ধ্যা নামার ঠিক পরেই শুরু হয় তাদের এসব অপকর্ম। ছেলে- মেয়েদের একটা অংশ অবৈধ মেলামেশায় লিপ্ত হয়। অন্য আরেকটি হয়ে যায় মাদকসেবনে মগ্ন।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বদা তৎপরতা থাকায় এসব অপকর্মে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে। তবে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত এবং এমন নৈতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছাড়া এসব অপকর্ম রোধ করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী মাঠ, পুরাতন শেখ রাসেল স্কুল মাঠ (ইবলিশ চত্বর), সাবাস বাংলাদেশ মাঠ, মমতাজউদ্দিন কলাভবন ও শহিদুল্লাহ কলাভবনের আম বাগান, বেগম রোকেয়া হল ও রহমতুন্নেসা হল সংলগ্ন পুকুরপাড়, রোকেয়া হলের পিছনের রাস্ত, তৃতীয় বিজ্ঞান ভবন পিছনে তুঁত বাগান সংগলগ্ন যায়গায় এসকল অপকর্ম সংঘটিত হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ও কৃষি অনুষদের ফাঁকা মাঠ, পূর্বপাশে সৈয়দ আমীর আলী হল সংলগ্ন মাঠ এবং মুক্তিযুদ্ধের গণকবর বদ্ধভূমির ফাঁকা জায়গাগুলোতে দিনে-রাতে মাদকসেবনের পাশাপাশি নারী-পুরুষের অবৈধ মেলামেশা দেখা যায়। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের বাথরুমসহ ক্যাম্পাসের এমন বেশ কিছু জায়গায় মাদকজাত তথা গাঁজা ও ফেনসিডিলসহ অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য এবং অবৈধভাবে মেলামেশার উপকরণ পাওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত তিনমাসে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ধরণের অনৈতিক কর্মকাণ্ড সংঘটনের দায়ে প্রক্টরিয়াল বডির হাতে আটক হয়েছে ৮৪ জন। যারমধ্যে গুরুতর অভিযোগ ৩০টি। যার বেশ কয়েকটি সমাধান হয়েছে এবং কিছু তদন্তরত অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পাসে এসব অপকর্মের অপরাধে প্রক্টর দপ্তরে নিয়ে কাউন্সিলিং-এর পাশাপাশি ভবিষ্যতে এমন কাজ না করার শর্তে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে ৫৪ জনকে। যার মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে ২১ জন এবং রুয়েট, বরেন্দ্র, মেডিকেল ও অন্যান্য স্কুল কলেজসহ বহিরাগত ৩৩ জন।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারীজ বিভাগের প্রফেসর মাহবুবুর রহমান ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ক্যাম্পাসে বহিরাগত মাদকসেবনকরীদের বিরুদ্ধে জিরো-টলারেন্স নীতি অবলম্বন করতে হবে এবং এদের দৃশ্যমান শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যাতে পরবর্তীতে মাদক নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকার সাহস না পায়। তাছাড়া মাদক বিরোধী বিভিন্ন সেমিনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক ও ছাত্রসংগঠন সকলকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।

নারী-পুরুষের অবৈধ মেলামেশার বিষয়ে তিনি বলেন, বহিরাগত কিংবা শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে অবৈধভাবে মেলামেশা উচিত নয়। বিশ্বববিদ্যালয় একটি সম্মানের যায়গা। এখানে পড়াশোনার পাশাপাশি উন্নত চরিত্র গঠনের যায়গা। তাই এখানে সব ধরণের অশ্লীল ও নোংরামি বন্ধের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের মাঝে নৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটানোর পরামর্শ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রফেসর শামীসা আক্তার ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, বর্তমান সময়ে নৈতিকতা চর্চার ব্যাপক হারে কমে গেছে। ফলে সমাজে মানবিক অবক্ষয় চরম আকার ধারণ করেছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সকলের মাঝে নৈতিকতা চর্চা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া নৈতিকতাচর্চা কাউকে জোর করে শেখানো যায় না। এটাতে পারিবারের যেমন প্রভাব রয়েছে, তেমনি বয়সের ব্যাপারটাও গুরুত্বপূর্ণ। তাই সকলের সচেতনতার পাশাপাশি নৈতিকচর্চায় উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে সমাজের এ অবক্ষয়রোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন।

ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর আসাবুল হক ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ক্যাম্পাস নিরাপদ রাখতে পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনিসহ প্রক্টরিয়ালবডি সর্বদা সজাগ রয়েছেন। তাছাড়া প্রক্টরিয়াল টিম সারাদিন ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করছেন। ক্যাম্পাসে কোথাও মাদকসেবন কিংবা অনৈতিক কোন কর্মকাণ্ড ঘটলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া এবিষয়ে আমরা সর্বদা তৎপর আছি। তবে বিনা প্রয়োজনে গভীররাত পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বহিরাতদের অযথা ঘুরাঘুরি না করার আহ্বান জানান প্রক্টর।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভিসি প্রফেসর সুলতান-উল ইসলাম ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, ক্যাম্পাসে মাদক কিংবা যেকোন ধরনের অপকর্ম হওয়া দুঃখজনক। এবিষয়ে আমরা সতর্কদৃষ্টি রাখার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি। তবে মাদক কিংবা নৈতিক অবক্ষয়ের এ বিষয়গুলো একদিনে সমাধান সম্ভব নয়। এটা সমাধানকল্পে সকলের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ছাত্র-শিক্ষককেও এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে মাদক সেবনের বিষয়টি খুবই জোরালো ভাবে দেখছি। যদি ক্যাম্পাসের কোন শিক্ষার্থী মাদকসহ যেকোন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়, তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানোর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং বহিরাগত হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

ঢাকা, ০৪ সেপ্টেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ