Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
নেপথ্যে আরো কিছু...

পেটানো-হল ছাড়ার ঘটনাকে বানোয়াট দাবী করলেন রাবির দুই ছাত্রলীগ নেতা!

প্রকাশিত: ২৭ আগষ্ট ২০২২, ২১:৪৭

পেটানো-হল ছাড়ার ঘটনাকে বানোয়াট দাবী করলেন রাবির দুই ছাত্রলীগ নেতা!

রাবি লাইভ: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ছাত্র নির্যাতন ও হল ত্যাগের অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবী করেছেন ছাত্রলীগের দুই নেতা। এমনকি মেরে ফেলার হুমকি পেয়ে ভয়ে বাড়ী যেতে বাধ্য হয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। এটাকেও তারা মিথ্যা বলে দাবী করেছেন। তবে এমন ঘটনায় ক্যাম্পাসজুড়ে চলছে প্রতিবাদের ঝড়। এদিকে ওই দুই নেতা বলছেন, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকে তাদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে তবে মাঝখান থেকে আমাদের ফাঁসানোর জন্যই এমন অভিযোগ করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে দুই নেতা বিষয়টি ভিত্তিহীন বলেও দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও মতিহার হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা। এসময় সুরঞ্জিত প্রসাদ সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার দিন বঙ্গবন্ধু হলের সামনে আল আমিন এবং তার বন্ধুদের সাথে তার সাবেক কর্মস্থলের মালিক মার্কেটিং বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী মোমিনুর রহমান এবং গনিত বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শশীর সাথে তাদের ফিল্যান্সিং কোম্পানির একটা ঝামেলা নিয়ে কথা বলতে দেখি। তখন আমি তাদের কাছে ঘটনাটা শুনি। সেখানে আল আমিনের ১৫/২০জন বন্ধু ছিল।

মোমিনের বক্তব্য অনুযায়ী জানা যায় ওই ভুক্তভোগী আল আমিন তার কোম্পানির কর্মকর্তা ছিলেন এবং পরবর্তীতে মিথ্যা বলে চাকুরী ছেড়ে দেন। মোমিনের কোম্পানীর অনেক তথ্য ও ক্লায়েন্ট সে ছলছাতুরির মাধ্যমে নিয়ে যায়। মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করে। পরবর্তীতে আল-আমিন দোষ স্বীকার করে এবং সকল ক্ষতিপূরণ পুষিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তার প্রতারণা বিষয়টি তার সম্মান রক্ষার্থে না জানাতে মোমিন ও শশীকে অনুরোধ করে।

সন্ধ্যার সময় দু পক্ষ টুকিটাকিতে আসেন। মোমিন, শশী, আল আমিন ও তার বন্ধুদের সামনে বিষয়টি সুরহা হয়। সেখানেই সে বিষয়টি সমাপ্তি ঘটে। সুরঞ্জিত প্রসাদ আরো বলেন, আমার ও ভাস্কর সাহার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা, বানেয়াট, ভিত্তিহীন। মারধর কিংবা অর্থ লেনদেনের সাথে আমাদরে সম্পৃক্ততা নেই।

এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে নির্যাতন, হত্যার হুমকিসহ ডেবিট কার্ড থেকে ৪৫ হাজার টাকাও তুলে নেয়ার লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী। ইতোমধ্যে অভিযোগ সংবলিত একটি চিঠি কুরিয়ারের মাধ্যমে গত বৃহস্পতিবার (২৫ আগষ্ট) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দপ্তরে পৌঁছেছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মো. আল-আমিন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলায়। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ঘটনার নেপথ্যে আছে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব। তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী কাজ করতেন একটি আউটসোর্সিং আইটি প্রতিষ্ঠানে। তাঁরা তিনজনই একই সময় চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর নিজেরা একটি আইটি প্রতিষ্ঠান খোলেন।

আগের প্রতিষ্ঠানটি অভিযোগ করছে, এই তিনজন তথ্য চুরি করে তাঁদের ক্লায়েন্ট ভাগিয়ে নিয়েছে। এতে তাদের এক বছরেই ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এই শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন পড়াশোনা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর নাম মো. আল-আমিন। গত ১৭ আগস্ট আল-আমিন পরীক্ষা দিতে ক্যাম্পাসে আসেন। তখন আগের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা তথ্য চুরির অভিযোগ তুলে তাঁকে ধরেন।

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী উল্লেখ করে জানান, তিনি ১৭ আগস্ট পরীক্ষায় অংশ নেন। বিকেল সাড়ে চারটায় পরীক্ষা শেষে বের হওয়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও মতিহার হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা তাঁকে রবীন্দ্রভবন থেকে বঙ্গবন্ধু হলের ৩৩১ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান।

কিছুক্ষণ পর সেখানে মুমিনুর রহমান, ফয়সাল আহমেদ ওরফে শশী, তাকি আহমেদসহ অনেকে আসেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, মার্কেটিং বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের মুমিনুর রহমান, ফয়সাল আহমেদ শশী ও তাকি আহমেদের সঙ্গে কয়েক মাস ফ্রিল্যান্সিং ‘ডিজিটাল মার্কেটিং’-এর কাজ করেছিলেন তিনি। কিন্তু মনোমালিন্য হওয়ায় বছরখানেক আগে তিনি কাজ ছেড়ে দেন। এ কাজের জন্য তাঁদের সঙ্গে কোনো চুক্তিপত্র ছিল না।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দেওয়া অভিযোগপত্রে আল-আমিন বলেন, মুমিনুর তাঁর মাথায় দুই লিটার পানির বোতল ও লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। তিনি একপর্যায়ে অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর মুঠোফোন থেকে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেন তাঁরা। জ্ঞান ফেরার পর রাত আটটার দিকে জোরপূর্বক তাঁর ডেবিট কার্ড নিয়ে গিয়ে ৪৫ হাজার টাকা তোলেন সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও ভাস্কর সাহা। মুমিনুর ও তাঁর অনুসারীরা তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেন।

আল-আমিন উল্লেখ করেছেন, কিছুক্ষণ পর মুমিনুর রহমানের সঙ্গে আসা লোকজন তাঁকে প্রচুর মারধর করেন। মুমিনুর তাঁর মাথায় দুই লিটার পানির বোতল ও লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। তিনি একপর্যায়ে অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর মুঠোফোন থেকে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেন তাঁরা। জ্ঞান ফেরার পর রাত আটটার দিকে জোরপূর্বক তাঁর ডেবিট কার্ড নিয়ে গিয়ে ৪৫ হাজার টাকা তোলেন সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও ভাস্কর সাহা। মুমিনুর ও তাঁর অনুসারীরা তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেন।

মৃত্যুভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি। তাঁরা জোরপূর্বক মিথ্যা জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেন এবং সেটির ভিডিও ধারণ করেন। তাঁরা হুমকি দিয়ে বলেন, তাঁদের কথার বিপক্ষে কোনো কথা বললে এবং কোনো পদক্ষেপ নিলে তাঁকে মেরে ফেলা হবে। তাই তিনি জীবন বাঁচানোর জন্য তাঁরা যা বলেছেন, তাই করেছেন তিনি।

সে রাতেই জীবন বাঁচাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা অসম্পূর্ণ রেখে শরীয়তপুরে চলে যান তিনি। এখনো তাঁকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। আল-আমিন বলেন, তাঁদের কাছে তাঁর পরীক্ষার প্রবেশপত্র আছে। তিনি ভয়ে আছেন। রাজশাহীতে আসতে পারছেন না। এ কারণে তিনি কুরিয়ারের মাধ্যমে অভিযোগ পাঠিয়েছেন। এ ঘটনার বিচার চান তিনি।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটির আহ্বায়ক সহকারী প্রক্টর ড. শাহনেওয়াজ পারভেজ এবং সদস্য হিসেবে আছেন সহকারী প্রক্টর ড. পুরনজিৎ মহলদার ও ড. জহুরুল আনিস।

ঢাকা, ২৭ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিআইটি

 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ