Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
ডেবিট কার্ড থেকে তুলে নেয়া হলো ৪৫ হাজার টাকাও....

ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়লেন রাবি ছাত্র!

প্রকাশিত: ২৭ আগষ্ট ২০২২, ০৮:০৭

 ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়লেন রাবি ছাত্র!

উমর ফারুক, রাবি: ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ লেগেই আছে। তাদের যেন অভিযোগ ছাড়ছেই না। একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে চলেছে ছাত্রলীগের একটি বিশেষ চক্র। আসলেই এরা কারা! এমন প্রশ্নও মাঝে মধ্যে উঠে ক্যাম্পাসে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে মারধরের রেশ কাটতে না করতেই আবার নতুন ঘটনার সূত্রপাত ঘটালো ছাত্রলীগের দুই নেতা।

ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর ও নির্যাতনে ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়ী চলে গেছেন হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যব্যবস্থা বিভাগের এক শিক্ষার্থী। তিনি গত ১৭ আগষ্ট হলে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে নির্যাতনের শিকার হন। এখানেই শেষ হয়নি দুই ছাত্রলীগ নেতা ঘটনাটি। তাঁরা ডেবিট কার্ড থেকে ওই শিক্ষার্থীর ৪৫ হাজার টাকাও তুলে নিয়েছেন। সেইসাথে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতারা। এমন লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।

ইতিমধ্যে অভিযোগ সংবলিত একটি চিঠি কুরিয়ারের মাধ্যমে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ আগষ্ট) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দপ্তরে পৌঁছেছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মো. আল-আমিন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলায়। তাঁর চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছে।

এদিকে অভিযুক্তরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও মতিহার হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা। ওই ভাস্করের বিরুদ্ধে আরো নানান অপকর্মের অভিযোগ এখন শিক্ষার্থীদের মুখে মুখে।

ওই ছাত্রের অভিযোগ, ১৭ আগস্ট তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে নির্যাতনের শিকার হন। নির্যাতনের পর দুই ছাত্রলীগ নেতা তাঁর ডেবিট কার্ড থেকে ৪৫ হাজার টাকাও তুলে নিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করে জানান, তিনি ১৭ আগস্ট পরীক্ষায় অংশ নেন। বিকেল সাড়ে চারটায় পরীক্ষা শেষে বের হওয়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও মতিহার হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা তাঁকে রবীন্দ্রভবন থেকে বঙ্গবন্ধু হলের ৩৩১ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর সেখানে মুমিনুর রহমান, ফয়সাল আহমেদ ওরফে শশী, তাকি আহমেদসহ অনেকে আসেন।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, মার্কেটিং বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের মুমিনুর রহমান, ফয়সাল আহমেদ শশী ও তাকি আহমেদের সঙ্গে কয়েক মাস ফ্রিল্যান্সিং ‘ডিজিটাল মার্কেটিং’-এর কাজ করেছিলেন তিনি। কিন্তু মনোমালিন্য হওয়ায় বছরখানেক আগে তিনি কাজ ছেড়ে দেন। এ কাজের জন্য তাঁদের সঙ্গে কোনো চুক্তিপত্র ছিল না।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দেওয়া অভিযোগপত্রে আল-আমিন বলেন, মুমিনুর তাঁর মাথায় দুই লিটার পানির বোতল ও লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। তিনি একপর্যায়ে অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর মুঠোফোন থেকে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেন তাঁরা। জ্ঞান ফেরার পর রাত আটটার দিকে জোরপূর্বক তাঁর ডেবিট কার্ড নিয়ে গিয়ে ৪৫ হাজার টাকা তোলেন সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও ভাস্কর সাহা। মুমিনুর ও তাঁর অনুসারীরা তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। ওই ঘটনা কারো কাছে শেয়ার কিংবা প্রশাসনকে না জানাতে বলে যায়।

আল-আমিন আরো উল্লেখ করেছেন, কিছুক্ষণ পর মুমিনুর রহমানের সঙ্গে আসা লোকজন তাঁকে প্রচুর মারধর করেন। মুমিনুর তাঁর মাথায় দুই লিটার পানির বোতল ও লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। তিনি একপর্যায়ে অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর মুঠোফোন থেকে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেন তাঁরা। জ্ঞান ফেরার পর রাত আটটার দিকে জোরপূর্বক তাঁর ডেবিট কার্ড নিয়ে গিয়ে ৪৫ হাজার টাকা তোলেন সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও ভাস্কর সাহা। মুমিনুর ও তাঁর অনুসারীরা তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেন।

মৃত্যুভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি। তাঁরা জোরপূর্বক মিথ্যা জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেন এবং সেটির ভিডিও ধারণ করেন। তাঁরা হুমকি দিয়ে বলেন, তাঁদের কথার বিপক্ষে কোনো কথা বললে এবং কোনো পদক্ষেপ নিলে তাঁকে মেরে ফেলা হবে। তাই তিনি জীবন বাঁচানোর জন্য তাঁরা যা বলেছেন, তাই করেছেন তিনি।

আল-আমিন অভিযোগে আরও উল্লেখ করেছেন, তাঁকে ভয় দেখিয়ে স্টাম্প পেপারে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু তাঁর বোন জাতীয় জরুরি নম্বরে (৯৯৯) কল করার পর পুলিশ আসায় স্বাক্ষর নিতে পারেননি। ওই হলে অন্য একটি ঘটনায় সাংবাদিক, পুলিশ ও অন্যরা এলে রাত নয়টার দিকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সে রাতেই জীবন বাঁচাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা অসম্পূর্ণ রেখে শরীয়তপুরে চলে যান তিনি। এখনো তাঁকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।

আল-আমিন বলেন, তাঁদের কাছে তাঁর পরীক্ষার প্রবেশপত্র আছে। তিনি ভয়ে আছেন। রাজশাহীতে আসতে পারছেন না। এ কারণে তিনি কুরিয়ারের মাধ্যমে অভিযোগ পাঠিয়েছেন। এ ঘটনার বিচার চান তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে মুমিনুর রহমান বলেন, আল-আমিনসহ আরও কয়েকজনকে তাঁদের দুরবস্থার সময় তিনি চাকরি দিয়েছিলেন। এক-দেড় বছর চাকরি করার পর আল-আমিন বললেন, তিনি বিসিএস পরীক্ষা দেবেন। আল-আমিন চলে যান। কিন্তু তাঁরা কয়েকজন গিয়ে আরেকটি কোম্পানি খোলেন।

সেখানে তাঁর কোম্পানির ক্লায়েন্টদের নিচ্ছেন তাঁরা। এতে তাঁর ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ নিয়ে তাঁরা ১৭ আগস্ট বিষয়টির সুরাহার জন্য কথা বলতে বসেছিলেন। তাঁকে কেউই মারধর করেননি। ৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মুমিনুর রহমান বলেন, সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও ভাস্কর সাহা আলোচনার সময় ছিলেন। কিন্তু পরে কী হয়েছে, এটা বলতে পারবেন না তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্তকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা ক্যাম্পাসলাইভকে বলছেন, তিনিসহ অনেকেই ওই দিন আলোচনার সময় উপস্থিত ছিলেন। মুমিনুর ও আল-আমিনের মধ্যে ব্যবসায়িক একটি বিষয় ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে আসা অভিযোগটি মিথ্যা। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আসাবুল হক ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, 'আমার কাছে গতকাল কুরিয়ারযোগে অভিযোগ এসেছে। ইতিমধ্যে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলে ব্যবস্থা নিতে পারব।'

উল্লেখ্য,গত শুক্রবার (১৯ আগস্ট) চাঁদা না দেয়ায় বেলা ৩ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হলে অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র সামছুল ইসলামকে নির্যাতন ও গলায় ছুরি ঠেকিয়ে ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠে মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ভাস্করের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনার তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে।


ঢাকা, ২৬ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিআইটি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ