Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
অন্যরকম চাঁদাবাজি, কে সেই ভাস্কর সাহা!

রাবি শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ নেতার মারধর, মেরে ফেলার হুমকি-ধমকি

প্রকাশিত: ২০ আগষ্ট ২০২২, ২৩:৩১

রাবি শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ নেতার মারধর, মেরে ফেলার হুমকি-ধমকি

রাবি লাইভ: এবার নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরারের মতো পিটিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছে। বাড়াবাড়ি করলে কোন মাফ নেই। সেই দুশ্য দেখবে লোকেরা, এমন নানান কথা বলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক ছাত্রলীগ নেতা। শিক্ষার্থীকে হলকক্ষে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার পাশাপাশি গলায় ছুরি ঠেকিয়ে ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনার শিকার হয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সামছুল ইসলাম। তিনি এখন মানসিকভাবে জিম্মি।

প্রত্যক্ষদর্শি ও হল সূত্রে জানাগেছে শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হলে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী সামছুল জানিয়েছেন তাকে এভাবেই নানান হুমকি ও মারধরের শিকার হতে হয়েছে। তিনি এখন অসহায়। এ ছাড়া নির্যাতনের ঘটনাটি সাংবাদিক কিংবা পুলিশকে জানালে তাকেও বুয়েটের আবরার ফাহাদের মতো মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয় বলে তিনি জানান।

এদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী বলে সংশ্লিস্টরা জানান। বিষয়টি নিয়ে ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন মহলে নানান সমালোচনা চলছে।

ওই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সামছুল ইসলাম জানান, নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি হলেই মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করে পরিবার চালানোর পাশাপাশি ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ চালান তিনি। নিরবেই চলছিল তার জীবন যাত্রা। শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে রুমে ডেকে নিয়ে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর সাহা।

কিন্তু চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আটকে রেখে ভুক্তভোগীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন ভাস্কর সাহাসহ ছাত্রলেগের কয়জন নেতা-কর্মী। এই কথা কোথাও প্রকাশ হলে জীবনে মেরে ফেলার হবে বলেও শাসিয়েছেন তারা।

সামছুল ইসলাম আরো জানান, এ সময় তার কাছে থাকা বিভিন্ন জনের মোবাইল সার্ভিসিংয়ের প্রায় ২০ হাজার টাকা গলায় ছুরি ঠেকিয়ে জোর করে ছিনিয়ে নেয় ওই ছাত্রলীগ নেতা। এ ছাড়া নির্যাতনের কথা সাংবাদিক কিংবা পুলিশকে জানালে বুয়েটের আবরার ফাহাদের মতো তাকেও মেরে ফেলা হবে বলে হুমকিও দেয় অভিযুক্ত ভাস্কর সাহা। তিনি হাতে পায়ে ধরে প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে কোন রকমে পার পেয়েছেন এই যাত্রা। আগামীতে আরো ভয়াবহ অবস্থার স্বীকার হতে হবে সামসুলকে।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কারও ইন্ধনে আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসব করা হচ্ছে। আমি কারও নিকট চাঁদা দাবি করিনি। এমনকি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনও করিনি। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান ভাস্কর সাহা। বলেন প্রশাসন আছে তারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।

এদিকে এসব নানান বিসয়ে জানতে চাইলে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু জানান, আমি এ বিষয়ে এই মাত্র অবগত হলাম। খোঁজ নিচ্ছি। কেন কে বা করা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। সত্যতা পেলে বা প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি কোন অন্যায়কে ছাড় দেই না। যেই হোক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবেই।

মতিহার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম এবিষয়ে বলেন, ছাত্রকে নির্যাতনের বিষয়টি প্রক্টর অফিস থেকে জেনেছি ৷ ঘটনার সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা ছাড় দেব না। কোন শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হোক তা চাইনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি ইতোমধ্যে অভিযোগ পেয়েছি। আমি বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। কোনো শিক্ষার্থীর শরীরে হাত দেওয়া অপরাধ। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য তাকে আপাতত মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ পত্রটি হস্তান্তর করা হয়েছে। তাছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি কো ধরনের অন্যায়কে প্রশ্রয় দেব না। চাঁদাবাজি তো প্রশ্নই উঠে না।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আরিফুর রহমানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির অন্য দুজন সদস্য হলেন সহকারী প্রক্টর ফার্মেসী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আল মামুন ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জহুরুল আনিস।

মারধর, হুমকি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক জানান, দু:খজনক অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা সার্বিক বিষয়ে খতিয়ে দেখছি। তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে। আমরা সকলের কাছে শান্তি ও সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখার আহবান জানিয়েছি বার বার। বিষয়টি নিয়ে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেবে প্রশাসন।


ঢাকা, ২০ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ