রাবি লাইভ: এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় মন্দিরের সভাপতির বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ মিলেছে। ‘মন্দিরের পবিত্রতা রক্ষার অজুহাত’ দেখিয়ে নিম্নবর্ণীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী রাখার অনুমতি না দেওয়ার অভিযোগ করেছে মতুয়া শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদ। বিষয়টি নিয়ে এখন গোটা ক্যাম্পাসে আলোচনার ঝড় উঠেছে। কেন তিনি এধরনের আচরণ করেছেন এ ব্যাপারে বিভাগীয় তদন্তের দাবী তুলেছেন ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি মোহিত মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক পার্থ রায়। ১১ আগস্ট এ বিষয়ে ওই প্রতিবাদ লিপিতে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, মন্দির সভাপতি অধ্যাপক কমল কৃষ্ণ বিশ্বাসের কাছে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিচ্ছু নিম্নবর্ণীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মন্দিরে রাখার বিষয়ে আবেদন জানায় মতুয়া শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদ।
কিন্তু তাদের সঙ্গে অসদাচরণ ও ‘আমি মন্দির পবিত্র রাখতে চাই’ জানিয়ে আবেদনটি নাকচ করে দেন অধ্যাপক কমল। তবে অধ্যাপক কমল তাদের লিখিত আবেদন মঞ্জুর না করলেও বিনা আবেদনে বিশেষ একটি সংগঠনকে মৌখিক অনুমতি দেন। সেখানে তাদের অনুসারী ছাত্রদের থাকার ব্যবস্থা করেন যা অত্যন্ত বর্ণবাদী আচরণ বলে দাবি করা হয়। একটি মুক্তমনা ক্যাম্পাসে এধরনের কাজ আদৌ চলতে পারে না বলে দাবী করেছেন ওই সংগঠনের নেতারা।
ওই স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, অধ্যাপক কমল কৃষ্ণ বিশ্বাস তাদের অনুমতি না দেওয়ায় পূর্ববর্তী বছরের ধারাবাহিকতায় অসংখ্য শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিয়ে তারা এবারের ভর্তি পরীক্ষায় বিপদে পড়েছিলেন। এরপর বিভিন্ন জনের আর্থিক সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়ামে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী এবং অভিভাবককে আবাসন ও আহারের ব্যবস্থা করতে হয় তাদের। এমন বর্ণবাদী আচরণে ‘অধ্যাপক কমল সভাপতির যোগ্যতা হারিয়েছেন’ দাবি করে তার অপসারণ চেয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
তারা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি মন্দিরের সভাপতি হবেন এমন একজন অধ্যাপক যিনি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যকার সব শ্রেণিকে সমান চোখে দেখবেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক কমল কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ মিথ্যা এবং নোংরা মন-মানসিকতার প্রকাশ। মন্দির সবার জন্য। এখানে সবাই থাকতে পারবে। আমি কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনকে এমন কিছু বলিনি যে তারা থাকতে পারবে না মন্দিরে।’
এদিকে অভিযোগকারীদের মন্দিরে থাকার আবেদন নাকচের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এরকম কোনো লিখিত আবেদন আমি পাইনি। তবে মৌখিকভাবে ও ফোনে কথা বলেছে তাদের কয়েকজন। বিশ্ববিদ্যালয় মন্দির তো অনেক ছোট জায়গা। এখানে সবাইকে রাখাও কঠিন। এজন্য আমি প্রথমে তাদের অন্য কোথাও রাখার ব্যবস্থা করার জন্য বলেছি। কিন্তু আমি এটাও বলে দিয়েছি যে ব্যবস্থা না করতে পারলে আমরা রাখার ব্যবস্থা করবো।
শুধু তারা যেন খাওয়া-দাওয়া বা মাছ-মাংস মন্দিরে না তোলে।’ মতুয়া শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদ রাবির কেন্দ্রীয় মন্দিরের সহযোগী সংগঠন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বিশেষভাবে নিম্নবর্ণীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে কাজ করার জন্য ২০১৫ সালের ১৫ মার্চ প্রতিষ্ঠা করা হয় সংগঠনটি। এর পর থেকেই যাত্রা শুরু হয় ক্যাম্পাসে। কোন ধরনের বাঁধা বিপত্তি ছাড়াই চলতে থাকে তাদের কার্যক্রম।
ঢাকা, ১২ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: