উমর ফারুক, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্যাম্পাসে নির্মাণাধীন ২০ তলা একাডেমিক ভবনের ঠিকাদারের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করেছেন শহীদ হবিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মোমিনুল ইসলাম। গত শনিবার (৬ অগাস্ট) তিনি ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও তিনি এর আগে ৩৪ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ রাবির ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ৩৬৩ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়। প্রকল্পের আওতায় দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল, এ এইচ এম কামারুজ্জামান হল, ১০ তলা ভবনবিশিষ্ট শিক্ষক কোয়ার্টার, ২০ তলা একাডেমিক ভবন, ড্রেন নির্মাণসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। পরে বাজেট সংশোধিত হয়ে ২০১৯ সালে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে নির্মাণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মজিদ সন্স’ ১০ তলা বিশিষ্ট শহীদ কামারুজ্জামান আবাসিক হল ও বিশতলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের কাজ পায়।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ আগস্ট ২০ তলা একাডেমিক ভবনের কাজ চলাকালে ছাত্রলীগ নেতা মোমিন সেখানে গিয়ে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ সময় তিনি হল চালাতে তাঁর খরচ হয় বলে জানান। এর আগে গত জুনের শেষ সপ্তাহে তিনি ৩৪ হাজার টাকা চাঁদা নেন। ফের চাঁদা চাওয়া বিষয়টি প্রকল্প পরিচালককে জানান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সমাধান করে।
ছাত্রলীগ নেতা চাঁদা চাওয়ার বিষয়ে প্রকৌশলী আরফান ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলবো না। আমার বস জহিরুল ভাই বিষয়টি দেখাশোনা করছেন। যা হয়েছে, সব তাকে জানিয়েছি। আপনারা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’
ক্যাম্পাস সূত্রে আরো জানা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দুটি ভবনের নির্মাণ কাজের দেখাশোনা করেন প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম। তবে তার অধীনে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে রয়েছে প্রকৌশলী আরফান। তিনি ২০ তলা একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজের দেখভাল করেন।
জানতে চাইলে প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম সহকারী ইঞ্জিনিয়ারের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘ছাত্রলীগের ওই নেতা গত জুন মাসের শেষ দিকে একবার ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা নিয়ে গেছে। ফের গত শনিবার ওই ছাত্রলীগ নেতা সাইডে এসে ফের ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছে। এ সময় তিনি হলে ছাত্র চালাতে খরচ বলে জানান।’
জহিরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। আজ (সোমবার) প্রকল্প পরিচালক আমাদের জানিয়েছেন কাজ করতে, সমস্যা হবে না।’
চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মোমিনুল ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘আমি চাঁদা দাবি করিনি। আমি ঈদ উপলক্ষে সালামি চেয়েছিলাম। তারা বলেছেন ঈদের পরে যোগাযোগ করতে তাই শনিবার গিয়েছিলাম সালামির জন্য। তবে গত জুনে সাড়ে ৩৪ হাজার টাকা চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু ক্যাম্পাাইভকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত নই। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক প্রকৌশলী খন্দকার শাহরিয়ার আলম ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। পরবর্তীতে আমি বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানাই। গতকাল বিশ্ববিবিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে বলা হয়েছে প্রক্টর দপ্তরের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হয়েছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর আসাবুল হক ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, ‘সমঝোতার বিষয়টি প্রতিবেদকের কাছে প্রথম শুনলাম। এ সম্পর্কিত কোনো সমঝোতা প্রক্টর দপ্তর থেকে করা হয়নি।’
ভিসি প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, চাঁদা চাওয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না, মাত্রই শুনলাম। এগুলো হয়তো প্রক্টর দপ্তর দেখছেন। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে খোঁজ নিব।’
ঢাকা, ০৯ আগস্ট (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//ওএফ//এমজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: