Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০
teletalk.com.bd
thecitybank.com

গৌরবের ৭০ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ৬ জুলাই ২০২২, ২১:০২

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

উমর ফারুক, রাবি: প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৫৩ সালের ৬জুলাই। প্রতিষ্ঠার ৬৯ বছর পেরিয়ে ৭০ বছরের পা রেখেছে এই বিদ্যাপীঠ। শুধু দেশই নয় দেশের সীমানা ছাড়িয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গৌরব ও ঐতিহ্যে বিশ্বময় উদ্ভাসিত। শত-সহস্র স্মৃতিমাখা ক্যাম্পাসের মায়ায় জড়িয়ে আছে লাখো শিক্ষার্থী।

ব্রিটিশ আমলে রাজশাহী অঞ্চলের শিক্ষাদীক্ষা উন্নয়নের জন্য ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী কলেজ। কিন্ত এর কিছুদিন পরেই বন্ধ হয়ে যায় এসব কার্যক্রম। সে সময়েই রাজশাহীতে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজন অনুভূত হয়। ভাষা আন্দোলনের কিছুদিন আগে থেকেই মূলত রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু হয়।

১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শহরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজশাহী কলেজ প্রাঙ্গণে সমবেত হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ পাসের দাবি তোলে। ক্রমেই তা তীব্র হতে থাকে। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাতে গিয়ে কারারুদ্ধ হন ১৫ ছাত্রনেতা। পরে ছাত্রজনতার পক্ষ থেকে ঢাকায় একটি ডেলিগেশন পাঠানো হয়। যাতে সদস্যদের মধ্যে মরহুম আবুল কালাম চৌধুরী ও আব্দুর রহমানের নাম উল্লেখযোগ্য।

এভাবে একের পর এক আন্দালনের চাপে স্থানীয় আইন পরিষদ রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়। এই আন্দোলনে একাত্ব হন পূর্ববঙ্গীয় আইনসভার সদস্য প্রখ্যাত আইনজীবী মাদার বখশ।

১৯৫৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ভুবন মোহন পার্কে আরও একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মাদার বখশ সরকারকে হুঁশিয়ার দিয়ে বলেন, ‘যদি রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন না হয় তবে উত্তরবঙ্গকে একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ দাবি করতে আমরা বাধ্য হব।’

মাদার বখশের এই বক্তব্যে সাড়া পড়ে দেশের সুধী মহলে এবং সাথে সাথে টনক নড়ে সরকারেরও। অবশেষে ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইন সভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আইন পাস হয়। নতুন উপাচার্য প্রফেসর ইতরাত হোসেন জুবেইরীকে সঙ্গে নিয়ে মাদার বখশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। এ দুজনকে যুগ্ম সম্পাদক করে মোট ৬৪ সদস্য বিশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। এর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার এম এ খুরশীদ৷ একই বছর ৬ জুলাই প্রফেসর ইতরাত হোসেন জুবেইরীকে উপাচার্য নিয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে।

শুরুতে ১৬১ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম ক্লাস শুরু হয় রাজশাহী কলেজে। উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের দফতর প্রতিষ্ঠা করা হয় পদ্মা তীরের বড়কুঠি নামে পরিচিত ঐতিহাসিক নীল কুঠির উপর তলায়। বড়কুঠির কাছেই তৎকালীন ভোলানাথ বিশ্বেশ্বর হিন্দু একাডেমিতে চিকিৎসা কেন্দ্র ও পাঠাগার তেরি করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দফতর স্থাপন করা হয় জমিদার কুঞ্জমোহন মৈত্রের বাড়িতে। শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাড়া করা বাড়িতে গড়ে ওঠে ছাত্রাবাস। রাজশাহী কলেজ সংলগ্ন ফুলার হোস্টেলকে রুপান্তরিত করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস হিসেবে। বড়কুঠি এলাকার লালকুঠি ভবন ও আরেকটি ভাড়া করা ভবনে ছাত্রী নিবাস স্থাপন করা হয়।

১৯৫৮ সালে বর্তমান ক্যাম্পাসে দালান-কোঠা ও রাস্তাঘাট নির্মাণ শুরু হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয় মতিহারের নিজস্ব ক্যাম্পাসে এবং ১৯৬৪ সালের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অফিস ও বিভাগ এখানে স্থানান্তরিত হয়। এই ক্যাম্পাসটি গড়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়ান স্থপতি ড. সোয়ানি টমাসের স্থাপত্য পরিকল্পনায়।

আজকের এ অবস্থানে আসতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে। হাজারো ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্বাধীনতা সংগ্রাম, নানা ঘটনার সাক্ষী এই বিদ্যাপীঠ। মুক্তিযুদ্ধ তথা অধিকার আদায়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ কর্মকর্তা- কর্মচারীগণ।

বর্তমানে এর শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৮ হাজার। নয়টি অনুষদের ৫৯টি বিভাগে পাঠদান চালু রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ৬টি উচ্চতর গবেষণা ইন্সটিটিউট ও ১৩টি একাডেমিক ভবন।

যা থাকছে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে:
অন্যান্য বছরের মত এবারের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে থাকছেনা জমকালো কোন আয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভাষ্যমতে, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আয়োজনের বাজেটের টাকা দেশে বন্যার্ত্যদের মাঝে বিতরণ করার লক্ষ্যে আয়োজন সীমিত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বেলা ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম একাডেমিক ভবনের সামনে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও পতাকা উত্তোলন মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু হবে। পায়রা, ব্যানার, ফ্যাস্টুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানে উদ্বোধন করবেন অতিথিরা।

এরপর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরবর্তীতে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল- মূল সড়ক পদক্ষিণ করবে। পরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অব: প্রফেসর ও গণিতবিদ প্রফেসর সুব্রত কুমার মজুমদার বাংলা বিভাগের অব: প্রফেসর কবি জুলফিকার মতিন।

আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার, প্রো ভিসি প্রফেসর চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া, প্রফেসর সুলতান- উল- ইসলামসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

ঢাকা, ০৬ জুলাই (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//ওএফ//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ