রাবি লাইভ: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) হল থেকে বের করে দেয়া, হল গেইটে তালা লাগানোর ঘটনা এখন নিত্যদিনের। এ সমস্যা যেন কোন ভাবেই সমাধান করতে পারছে না হল প্রশাসন। একের পর এক ঘটনা ঘটছে কিন্তু তদন্তেই সীমাবদ্ধ থাকছে কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার রক্ষায় নিপীড়ন ও দখলদারত্বমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে প্রতীকী অনশন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. ফরিদ খান। রবিবার (২৬ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জোহা চত্বরে এক প্রতীকি অনশনে তিনি এসব কথা বলেন। এই অনশনটি সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে।
এই প্রতীকি অনশনে সংহতি প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর সালেহ্ হাসান নকীব এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী।
এ সময় দুঃখ প্রকাশ করে প্রফেসর ড. ফরিদ বলেন, 'আমি একজন শিক্ষক। আমার দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এখানে এসেছি। যারা শিক্ষার্থী আছে আমি তাদের অভিভাবক। যখন দেখি যে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হয়রানি বা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে তখন আমার খারাপ লাগে। বর্তমানে হলের বৈধ শিক্ষার্থীদেরকে মাঝরাতে হল থেকে বের করে দেয়। তাদেরকে নির্যাতন করা হয়। আমার কাছে অনেক অভিযোগ আসে। এগুলো দেখে আমার হৃদয়ে নাড়া দেয়।'
তিনি আরও বলেন, ‘দেশকে স্বাধীন করতে অনেকেই যুদ্ধ করেছে। এমনকি তাদের প্রাণ দিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে একজন শিক্ষক হিসেবে যদি জীবন দিতে হয় তাতেও আমি প্রস্তুত। প্রশাসন যদি এসব নৈরাজ্য বন্ধ না করে তাহলে আমি আমরণ অনশনে যাবো।’
ড. ফরিদ বলেন, একজন শিক্ষার্থী এসে বললো যে হলে সিট পেয়েছে কিন্তু উঠতে পারছে না। আমি বললাম প্রাধ্যক্ষের সাথে দেখা করো। কিন্তু প্রাধ্যক্ষ তাকে বলেছে, ‘আমার সিট দেওয়ায় দায়িত্ব আমি সিট দিয়েছি। কিন্তু কিভাবে উঠবে সেটা আমি জানিনা।’ এরকম অসংখ্য ঘটনা ঘটে আমাদের এখানে। যেটা একটা সভ্য সমাজে হওয়া উচিত না।
প্রফেসর ফরিদ আরও বলেন, আমরা শিক্ষাকে জাতির মেরুদন্ড বলি। কিন্তু আজ এই শিক্ষা অবহেলিত এবং পরাধীনতার মধ্যে আছে। এটি আমাদের ভালো লাগে না। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় পত্রিকাতে অনেক নিউজ হয়েছে। এই নিউজগুলোকি শিক্ষামন্ত্রী পড়েন না? অবশ্যই পড়েছেন। কিন্তু আমার বিশ্বাস তিনি এবিষয়ে উপাচার্যের সাথে কোনো কথা বলেননি। উপাচার্যও প্রাধ্যক্ষদের ডেকে নিয়ে এ বিষয়ে কোনো কার্যক্রম করেছে এটা আমার চোখে পড়েনি।
দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার অবস্থা দিন দিন অবনতি হচ্ছে। ইট-কংক্রিট দিয়ে যে উন্নয়ন এটা বেশি দিন টিকবে না। যদি না এর পিছনে গুণগত মেধার বিকাশ ঘটে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নৈরাজ্য, মানষিক নির্যাতন চলছে এগুলো বন্ধ করতে হবে। আমি মনে করি শিক্ষার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য এগুলো বন্ধে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
উল্লেখ, গত (২৩ জুন) বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলে থেকে এক শিক্ষার্থীকে কক্ষ থেকে বের করে দেয়াসহ মারধরের অভিযোগ উঠে হল ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে সকাল ১১টায় হল গেইটে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর কুদরত জাহান, পর্দাথ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. সালেহ আহমেদ নকীব, অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ফরিদ খান, আরবি বিভাগের প্রফেসর ইফতেখার আলম মাসুদ। তারা অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি জানান। এ ঘটনায় তিনজনকে শাস্তির আওতায় এনেছে হল প্রশাসন।
এদিকে, গত (১৮ জুন) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলে ২২৮ নাম্বার কক্ষে এক শিক্ষার্থীর বেডিংপত্র বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। ছয় দিন পাড় হলেও এখনো তালাবদ্ধ রয়েছে সেই কক্ষ।
এরপূর্বে, গত (১৬ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে প্রভোস্ট অনাবাসিক ছাত্রকে কক্ষ থেকে নামিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীকে তুলে দিলে ক্ষুব্ধ হয়ে হল গেটে তালা লাগিয়ে দেয় শামীম ওসমান নামে এক ছাত্রলীগ নেতা। শামীম ওসমান অবৈধ ভাবে হলে ৩বছর ধরে অবস্থান করছে। এরপূর্বেও রমজান মাসে হল ডাইনিংয়ে প্লেট ভাংচুরসহ আরো কিছু অভিযোগ রয়েছে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে। সন্ধ্যায় ৭টায় প্রভোস্টের নির্দেশনায় শামীম ওসমানের বেড নামানো হয়।
ভিডিও: https://www.facebook.com/watch/?v=562993078787869
ঢাকা, ২৬ জুন (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//ওএফ//এমজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: