Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | সোমবার, ৬ই মে ২০২৪, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com
সিট ফিরে পেলেও হুমকি অব্যাহত

'তুই হলে উঠছিস কেন?' রাবিতে শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের প্রশ্ন!

প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২২, ০১:২০

'তুই হলে উঠছিস কেন?'

রাবি লাইভ: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলের কক্ষ থেকে এক শিক্ষার্থীকে বের করে দেয়াসহ মারধরের অভিযোগ উঠেছে হল ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলে ২৪৮ নাম্বার কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী মুন্না ইসলাম। তিনি আব্দুল লতিফ হলের ২৪৮ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। অভিযুক্তরা হলেন, আব্দুল লতিফ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম এবং তার অনুসারী পারভেজ ও তওহীদ।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমি গত ৫ মাস যাবৎ নবাব আব্দুল লতিফ হলে অবস্থান করছি।আমি এই হলের ২৪৮ নাম্বার রুমের একজন আবাসিক ছাত্র কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে আজ রাত ২ টার দিকে শামীম ভাইয়ের কিছু ছেলে (ছাত্রলীগ) এসে আমাকে বলে 'তুই এই রুমে উঠছিস কেনো?'

এ সময় ওই শিক্ষার্থী বলতে থাকেন 'আমি এই রুমের বৈধ একজন শিক্ষার্থী। আমার হল কার্ড আছে কিন্তু তারা আমার কথা শুনতে রাজি নয় নেতা-কর্মীরা। তারা আমাকে বলে তুই বের হয়ে যা। কিন্তু আমি বের হয়ে যেতে রাজি না হওয়ায় তারা জোর করে আমার বেড সাথে আরো কিছু জিনিস পত্র রুমের বাইরে ফেলে দেয়। আর আমাকেও বের হয়ে যেতে বলে।

আমি বের না হয়ে বেডে বসে পড়ি, এমন অবস্থায় পারভেজ এবং তওহীদ নামের ২ ভাই খুব বাজে ব্যবহার করা শুরু করে তারপর তওহীদ আমার ঘাড় চেপে ধরে টানতে টানতে দরজার কাছে নিয়ে আসে আর পিঠে ২ টা মার বসিয়ে দেয়। আমি বিষয়টা তৎক্ষণাৎ প্রভোস্ট স্যারকে জানাই।।আমি হলের একজন আবাসিক ছাত্র আমার রুমে ঢুকে আমার সিট জোরপূর্বক দখল করে নেয়। তিনি বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমি এর জন্যে যথোপযুক্ত বিচার দাবি করছি। সাথে আমার বৈধ সিট পুনরায় ফেরৎ দেয়ার জন্যে আবেদন করছি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম জানান, মুন্না নামের ছেলেটা ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী। বর্তমান প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এ সেশনের কোন শিক্ষার্থী হলে উঠতে পারবে না। কিন্তু তার পারিবারিক সমস্যা দিক বিবেচনা করে প্রাধ্যক্ষ সিটে এলোট দিয়েছেন। অন্য আরেকজন সিনিয়র শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মীও এলোট প্রাপ্ত। তাই তাকে সিট ছেড়ে অন্য রুমে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু সে তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেছে। তবে তাকে কোন ধরণের মারধর কিংবা কিল-ঘুষি মারা হয়নি বলে জানান এ ছাত্রলীগ নেতা।

এদিকে হল থেকে শিক্ষার্থীকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে সকাল ১১টায় হল গেইটে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর কুদরত জাহান, পর্দাথ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. সালেহ আহমেদ নকীব, অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ফরিদ খান, আরবি বিভাগের প্রফেসর ইফতেখার আলম মাসুদ।

এসময় প্রফেসর সালেহ আহমেদ নকীব বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যক ছাত্র সমান অধিকার নিয়ে ভর্তি হয়। একটা ছেলে কোন ধর্ম, বর্ণ, বিভাগ, কোন পলিটিক্যাল সেটা দেখার বিষয় না। শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের ল্যাব, ক্লাস, সব বাদ দিয়ে এসব দেখতে হচ্ছে, কিন্তু কেনও? ওরা কি মগেরমুল্লুক পেয়েছে? একজন শিক্ষার্থীকে বের করে দেয়ার রাইট নেতাদের নেই। হলগুলোতে সিট বানিজ্যের কথা সবাই জানি।

কিন্তু কেউ এটা অকপটে স্বীকার করছি না। এসব ঘটনা যদি প্রশাসন ব্যবস্থা নিতো তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতো না। হল প্রশাসন এখন থেকে তৎক্ষনাৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আবার এরকম ঘটনা ঘটাবে।' শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর কুদরত জাহান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি দিন এরকম ঘটনা ঘটছে। শিক্ষার্থীকে মারধর করা হচ্ছে কিন্তু প্রশাসন এ নিয়ে কোন সমাধান করতে পারছেনা।

তিনি প্রভোস্টকে প্রশ্ন করে বলেন, 'আপনি এ ঘটনায় কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন, সে শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়েছে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন কিনা?' মন প্রশ্নের জবাবে নবাব আব্দুল লতিফ হলের প্রভোস্ট প্রফেসর এএইচএম মাহবুবুর রহমান বলেন, 'এ ঘটনা জানার পর সকালে এসে আমরা সেই শিক্ষার্থীকে কক্ষে তুলে দিয়েছি, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।'

তিনি বলেন,' আমরা চেষ্টা করছি আবাসিক শিক্ষার্থীদের ডাটাবেইজ তৈরি করার। যাতে করে আমরা নির্দিষ্ট আসন সংখ্যা বিন্যাস করতে পারি। আমরা চেষ্টা করব এরকম ঘটনা যাতে আর না ঘটে।'

প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তোলার ক্ষমতা কারও নেই। একজন শিক্ষার্থীকে মেরে হল থেকে বের করার অভিযোগ উঠেছে। প্রাধ্যক্ষকে তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্তের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


ঢাকা, ২৪ জুন (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ