রাবি লাইভ: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিতে) ছাত্রীদের আবাসিক হলে প্রবেশের সময় বেঁধে দিয়ে নোটিশ দেয়ার পর থেকেই চলছে বিস্তর আলোচনা -সমালোচনা। এ ক্ষোভ চলছে শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের মধ্যেও। এবার এ বিষয়ে মুখ মুখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড.গোলাম সাব্বির সাত্তার।
সান্ধ্য আইন নিয়ে ক্যাম্পাসলাইভের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আসলে সান্ধ্য আইন নিয়ে সম্প্রতি ফেসবুকে যে লেখাগুলো আসছে তা গুজব। আমাদের শিক্ষার্থীদের বলব চিলে কান নিয়ে গেল তা খোঁজার আগে নিজের কানে হাত দিয়ে দেখা উচিত। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। একটা জিনিস মনে রাখবেন প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটা ভেবে চিন্তেই নেয়া হবে। সে চিঠি ইস্যু করবে রেজিস্ট্রার তবেই সেটাকে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বলা হয়।'
তিনি আরো বলেন, 'আমি জানিনা এটা কি হয়েছে। এ পর্যন্ত আমি ফেসবুক ও শিক্ষার্থীরা যেটা বলেছে এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। যতটুকু জানি একসময় সান্ধ্য আইন ছিলো, এখনো আছে তবে সেটা যতটুকু শিথিল করা যায় আমরা ছাত্রীদের সাথে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নিব।'
এরপূর্বে, গত ৯ মে সব হলের প্রাধ্যক্ষদের সম্মতিতে মেয়েদের আবাসিক হলে রাতে প্রবেশের নতুন সময়সীমা বেঁধে দিয়ে নোটিশ দেয় রোকেয়া হল কর্তৃপক্ষ। প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিলো , "সকল ছাত্রী হলের প্রাধ্যক্ষদের সর্ব সম্মতিক্রমে মেয়েদের রাতে হলে প্রবেশের সময় সাড়ে ৮টা নির্ধারণ করা হয়।" হলে রাতে প্রবেশের সময়সীমা বেঁধে দেয়ার নোটিশ দেয়ার পরপরই সেটা "রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার" ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করলে মুহুর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুকে) ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় আলোচনা- সমালোচনা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আবাসিক ছাত্রীরাসহ শিক্ষকরাও।
তাদের ভাষ্যমতে, হুট করে এমন সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। এমন নির্দেশনা দিয়ে মেয়েদের ওপর এক প্রকার জোর করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এমন সিদ্ধান্ত দেখে মনে হচ্ছে মেয়েদের রাত ৮টার পর কাজ থাকে না। এমন সিদ্ধান্ত মানা যায় না। 'ছাত্রীহলে প্রবেশের সময় রাত ১০ টা থেকে ৮.৩০ করার মানে কি? এটা তো শীতকালও না! সান্ধ্য আইন নিয়ে এত কিছুর পর কি এটা সান্ধ্য আইনের মডিফাইড ভার্সন? সন্ধ্যাই তো এখন ৭ টায়। হঠাৎ এই সিদ্ধান্তের কারণ কি? এটা কি আসলেই যৌক্তিক?
এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে রোকেয়া হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড.জয়ন্তী রাণী বসাক ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, 'আসলে এ সিদ্ধান্তটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকেই বলা হয়েছে যে ছাত্রীরা যাতে রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে হলে প্রবেশের ব্যবস্থা করি। কারণ প্রায়ই দেখা যাচ্ছে ১০টার পরেও বাইরে ঘুরাঘুরি করতে থাকে। ওরা বলে হয়ত কাজের জন্য বা লাইব্রেরির কথা বলে কিন্তু এমনি এমনি প্রক্টরিয়াল বডির হাতে ধরা পড়ে। আর প্রভোস্ট কাউন্সিলের মিটিং হয়েছে তখনই এটা বলা হয়েছে। সেইসাথে প্রক্টরিয়াল বডির অনুরোধে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'আসলে প্রশাসনিক ভাবেই এই বিষয়টা নিয়ে ভাবতে বলা হয়েছে। সে কারণে এ নোটিশ দেয়া হয়েছে। আবার প্রশাসন যদি বলে দরকার নাই এখন এটা উড্রো হয়ে যাবে।'
তাপসী রাবেয়া হলের প্রভোস্ট ও প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহব্বায়ক প্রফেসর ড মোসা. ফেরদৌসী মহল ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন,' মূলত ওটা কোন বিজ্ঞপ্তি নয়। এর আগে আমরা মেয়েদের ৬টি হলে প্রাধ্যক্ষরা বসেছিলাম। ছুটির পর এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যায় কিনা। এ নিয়ে আমরা ছুটির পর হলের ছাত্রীদের সাথেও কথা বলব এমনটাই বলা হয়েছিলো প্রভোস্টদের। কিন্তু ভুলক্রমে এক হলের প্রভোস্ট নোটিশ আকারে দিয়ে দিয়েছিলো। আসলে এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত হয়নি এখনো।'
উল্লেখ্য, এরআগে করোনায় দীর্ঘ বন্ধ শেষে গতবছরের নভেম্বরে হলের সান্ধ্য আইন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হলের ছাত্রীরা। এসময় তারা হলের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে সান্ধ্য আইন বাতিলের দাবি জানায়। একই সাথে আন্দোলনে নামে রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও সেসময় তাদের দাবি মেনে নিয়ে হলে প্রবেশের সময়সীমা রাত ১০টা পর্যন্ত করেছিলো হল কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা, ২০ মে (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//বিএসসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: