Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

পাবিপ্রবি এখন অভিভাবক শূন্য: সমস্যার অন্ত নেই!

প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০২২, ০১:২৬

আবদুল্লাহ আল মামুন, পাবিপ্রবি: অভিভাবক ছাড়াই চলছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি)। দীর্ঘ ১৭ দিন যাবৎ চলছে এই বেহাল দশা। এদিকে গুরুত্বপূর্ন অনেক ফাইল সিদ্ধান্তের অভাবে পড়ে আছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও রুটিন ভিসি না থাকায় এক প্রকার অচল হয়ে পড়েছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও কর্মচারিদের নানান সমস্যার সমাধানও হচ্ছে না। ফাইলে সই/স্বাক্ষর না হওয়ার কারণে গুরুত্বপূর্ন বেশকিছু সিদ্ধান্ত ও কাজ আটকা পড়ে আছে ফাইলবন্দি অবস্থায়। সমস্যার যেন অন্ত নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে আর কিছুদিন চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীন সমস্যা আরও প্রকট হবে। তাদের দাবি খুব দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি তথা অভিভাবক নিয়োগ দেওয়া দরকার।

এদিকে ভিসি প্রফেসর ড. এম রোস্তম আলীর মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৬ মার্চ। ভিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় সার্বিক দিক দেখভাল করার জন্য এখন পর্যন্ত কাউকে রুটিন দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। প্রো-ভিসি ড. আনোয়ারুল ইসলামের মেয়াদ ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর শেষ হলেও গত প্রায় দেড় বছরে নিয়োগ হয়নি নতুন প্রো-ভিসি। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর ট্রেজারার ড. আনোয়ার খসরু পারভেজের মেয়াদ শেষ হলেও সেই পদ এখনো শূন্য অবস্থাতেই আছে।

সব মিলিয়ে প্রধান এই তিনটি পদ শূন্য হয়ে পড়ায় অভিভাবক শূন্যতায় সময় কাটাচ্ছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় প্রো-ভিসি ও ট্রেজারের পদ শূন্য হওয়ার পরও বেশ শক্ত হাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চালিয়েছেন ভিসি প্রফেসর ড. এম রোস্তম আলী। এই দুটি পদ খালি হলেও তাদের অনুপস্থিতি বুঝতে দেননি ভিসি। কিন্তু ভিসির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়াতে এবং ভিসি মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই নতুন প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারের নিয়োগ না হওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয় এখন অভিভাবক শূন্যতায় ভুগছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক

 

ভিসি বিরোধী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই অভিযোগ করছেন প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার ঠিক সময়ে নিয়োগ না করার পেছনে ভিসি প্রফেসর ড. এম রোস্তম আলীর হাত রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ভিসির বিরুদ্ধে নিয়োগ, দুর্নিতীসহ বিভিন্ন অনিয়মের যেসব অভিযোগ এসেছে। ভিসির অনিয়ম ঢাকতেই ভিসির পর প্রধান দুটি পদের নিয়োগের ব্যবস্থা তিনি থাকাকালীন সময়ে করে যাননি।

তবে ভিসিপন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই অভিযোগটিকে অস্বীকার করছেন। তাদের মতে প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারের নিয়োগের বিষয়টি যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে। সেহেতু ভিসির হাতে এই দুটি নিয়োগ ছিল না। তাদের মতে ভিসি প্রফেসর ড. এম রোস্তম আলীর চার বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে উন্নয়ন কাজ হয়েছে তা পূর্ববর্তী সময়ে হয়নি। এই কারণেই অনেকেই ভিসির বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ভিসি না থাকাতে ইতোমধ্যে একাডেমিক শাখা, অর্থ ও হিসাব দপ্তর এবং প্রাশাসনিক কার্যক্রমে সমস্যা তৈরী হতে শুরু করেছে।

করোনা পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট ঠিক সময়ে না হওয়ার কারণে সেশনজটের বড় একটা আশঙ্কা তৈরী হয়েছে ইতোমধ্যে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ অফিসের কর্মকর্তা তাওহীদা খানম ক্যাম্পাসলাইভকে জানান- “বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্ন সেমিস্টারের আনুমানিক ২৫টি রেজাল্ট আটকে আছে, যে সংখ্যাটা ক্রমেই বাড়ছে। ভিসি মহোদয়ের স্বাক্ষর হয়ে গেলেই স্ব স্ব বিভাগ রেজাল্ট দিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু ভিসির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়াতে স্ব স্ব বিভাগগুলো রেজাল্ট প্রকাশ করতে পারছে না।”

ভিসি না থাকাতে সমস্যা তৈরী হয়েছে অর্থ ও হিসাব দপ্তরেও। অর্থ ও হিসাব দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ শাহান শাহ ক্যাম্পাসলাইভকে জানান- “বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেজারার স্যারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আর্থিক বিষয়গুলো ভিসি মহোয়দই দেখভাল করতেন। কিন্তু মাননীয় ভিসি মহোয়দয়ের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক বিষয়গুলো দেখভাল করার মত আর কেউ রইলোনা। ফলে অর্থ ও হিসাব দপ্তরের কার্যক্রম এখন স্থবির হয়ে আছে।”

এই কর্মকর্তা আরও বলেন- “এই মাসের ভেতরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি মহোদয়ের নিয়োগ অথবা ট্রেজারার স্যারের নিয়োগ না হলে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মার্চ মাসের বেতন বোনাস সব আটকে যাবে। এই কারণে অতিদ্রুত ভিসি মহোয়দ অথবা ট্রেজারার স্যারের নিয়োগ হওয়া প্রয়োজন।”

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের ১৭ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা ২৪ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসে তালা ঝুলছে। এতে করে বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজ আটকে আছে। রেজিস্ট্রার অফিসে টানা ২৪ দিন তালা ঝুলে থাকার কারণে রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম (চলতি দায়িত্ব) অফিস করতে পারছেন না।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান তিনটি পদ শূন্য থাকাতে অনেক শিক্ষক, কর্মকর্তারা ঠিক করে ক্যাম্পাসে আসেন না এবং অফিসে করেন না।

এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্মকে (চলতি দায়িত্ব) প্রশাসনিক ভবনে না পাওয়া গেলে ফোন করা হয়। ফোনে তিনি জানান প্রাশাসনিক কাজে বর্তমানে তিনি ঢাকায় আছেন। বিশ্ববিদ্যালয় এক কঠিক সময় অতিক্রম করছে এই কথা স্বীকার করলেও চলমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি ফোনে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

 

অফিসার্স এসোশিয়েশনের সভাপতি হারুনুর রশিদ ক্যাম্পাসলাইভকে জানান- “আমাদের দাবি আদায় হওয়া না পর্যন্ত আমরা রেজিস্ট্রার অফিসের তালা খুলে দিচ্ছিনা। আমরা আশা করছি নতুন ভিসি মহোদয় এসে আমাদের ১৭ দফা দাবি মেনে নিবেন।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তরের পরিচালক ড. সমীরণ কুমার সাহা ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন- “শিক্ষার্থীদের অনেকগুলো রেজাল্ট আটকে আছে এটা ঘটনা সত্য। যারা অনার্সের ফাইনাল এবং মাস্টার্সের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করেছে তাদের রেজাল্ট প্রকাশ হওয়া অতি জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। রেজাল্টের জন্য শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন চাকরির আবেদন করতে পারছে না। অন্য রেজাল্টগুলো হওয়াও প্রয়োজন, সেক্ষেত্রেও উপচার্যের স্বাক্ষরের প্রয়োজন। এই কারণে মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ের নিয়োগ অতি জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অবস্থা নিয়ে শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন- “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান তিনটি পদ শূন্য হয়ে যাওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা কঠিন অবস্থা তৈরী হয়েছে। এই মুহূর্তে এই তিনটি শূন্য পদের নিয়োগ জরুরী। তবে শিক্ষার্থীদের ক্লাশ এবং পরীক্ষা নিয়ে প্রত্যেকটা বিভাগের শিক্ষার্ক-কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের ক্লাশ এবং পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ভিসির স্বাক্ষরের কারণে অনেকগুলো রেজাল্ট আটকে আছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো করোনাকালীন সময়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগুলো পুষিয়ে দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।”

এদিকে সেশনজট নিয়ে চিন্তায় ভুগছেন শিক্ষার্থী। পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন ক্যাম্পাসলাইভকে জানান- “করোনার কারণে আমরা বড় একটা জটে পড়ে গেছি। এখন আবার উপাচার্যের স্বাক্ষরের কারণে রেজাল্ট হচ্ছেনা। আমাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু গ্র্যাজুয়েশন শেষ হচ্ছেনা।”

গণিত বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী মহিম হাসান ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, “অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আমাদের ব্যাচমেটরা ইতোমধ্যে তাদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে চাকরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। অথচ আমরা দীর্ঘমেয়াদি একটা সেশন জটে আটকে আছি। কবে গ্র্যাজুয়েশন শেষ হবে, কবে পরিবারের হাল ধরবো সেটা চিন্তা করলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়।”

ঢাকা, ২৪ মার্চ (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ