আব্দুল্লাহ আল মামুন, পাবিপ্রবি: টেক জায়ান্ট অ্যামাজনে সফটওয়্যার ডেভোলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি পেয়েছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের ২০১২-১৩ সেশনের শিক্ষার্থী আবু রায়হান। করোনার কোন সমস্যা না হলে আগামী এপ্রিলেই আম্যাজনের আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন অফিসে যোগ দিবেন। নিজের ফেইসবুক আইডিতে পোস্টের মধ্যে দিয়ে সবাইকে বিষয়টি জানিয়েছেন আবু রায়হান।
অ্যামাজনে চাকরি পাওয়া এবং নিজের জীবনের অনেক গল্প নিয়ে আবু রায়হান কথা বলেছেন ক্যাম্পাসলাইভ২৪ডটকম-এর সাথে।
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগে ভর্তি হওয়া কেন এই প্রশ্নের জবাবে আবু রায়হান ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন- “CSE তে ভর্তি হওয়ার পিছনের মূল কারণ কম্পিউটারের প্রতি আকর্ষণ। ছোটবেলা থেকেই টেকনিক্যাল বিষয়গুলো ভালো লাগতো আমার। তবে কম্পিউটারের কাজ সম্পর্কে খুব একটা জ্ঞান ছিল না আগে। শুধুমাত্র সাধারণ ব্যবহার পারতাম। প্রোগ্রামিং এর হাতেখড়ি ও হয়েছে ভর্তি হওয়ার পরেই। আগে এই বিষয়ে কোন জ্ঞান ছিল না আমার। তবে ভর্তির সময় আমার পরিবারের খুব ইচ্ছে ছিল আমি EEE তে ভর্তি হই। কিন্তু আমি আমার পছন্দ CSE তেই যাই এবং আমার পরিবারকেও বুঝাতে সক্ষম হই আমার ইচ্ছার ব্যপারে”।
প্রোগ্রামিংয়ের প্রতি ভালোবাসা কীভাবে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- “ডিপার্টমেন্টের বড় ভাইয়ারা প্রথম দিক থেকেই প্রোগ্রামিং এর গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক কিছু বলতো। বড় ভাইয়াদের অনুপ্রেরণায় প্রোগ্রামিং শুরু করি। তারপর বিভিন্ন অনলাইন জাজে প্রবলেম সলভ করতে যেয়ে এর প্রতি আসল ভাল লাগা শুরু হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোগ্রামিং কন্টেস্টে যাওয়ার সুযোগ হয়। কখনই খুব বেশি ভালো করতে পারিনি কিন্তু লেগে থাকতাম ভালো কিছু করার চেষ্টায়”।
বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজাল্টের প্রয়োজন কেমন সেটা নিয়ে তিনি বলেন- “প্রথম ২ সেমিস্টার ফলাফল অনেক খারাপ করি আমি। ৩য় সেমিস্টারে এসে বুঝতে পারি রেজাল্টের গুরুত্বও আছে। তাই তখন থেকে একাডেমিকের প্রতিও গুরুত্ব দেয়া শুরু করি। ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে স্যামসাং এ পরীক্ষা দেই। পরীক্ষা শেষ হওয়ার কিছুদিন পরেই স্যামসাং এ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেই”।
অ্যামাজনে নিজের লক্ষ্য কী থাকবে সেটা নিয়ে তিনি বলেন- “চেষ্টা করবো আমাজনে নিজের ভালো একটা অবস্থান তৈরি করার। তবে মূল লক্ষ্য থাকবে সামনের আরও অনেক বছর অনেক নতুন কিছু শেখার”।
আম্যাজনের মত বড় বড় টেক জায়ান্ট কোম্পানিগুলোতে চাকরি পেতে হলে কী করতে হবে সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি ক্যাম্পাসলাইভকে জানান- “অ্যামাজন অথবা এরকম টেক জায়ান্ট কোম্পানি সকলের রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়া প্রায় একইরকম। তাদের একটা গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড আছে। তাদের সকল রিক্রুটকে নির্দিষ্ট কিছু ধাপে যাচাই করা হয় যে, সে তাদের মানদণ্ড অনুযায়ী ঠিক আছে কিনা। পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে শুরু করে নিয়োগ পর্যন্ত সকল প্রক্রিয়া গ্লোবালি দেখা হয়। আমাকেও সেই পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। স্ক্রিনিং রাউন্ড, কোডিং টেস্ট, সিস্টেম ডিজাইন টেস্ট, বিহ্যাবরিয়াল টেস্ট সহ আরও কিছু পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে আমাকে। সকল পরীক্ষা শেষে যখন হায়ারিং কমিটি তাদের মানদণ্ড অনুযায়ী আমাকে ঠিক মনে করেছে, তখন আমাজন আমাকে ফাইনাল অফার দিয়েছে”।
নিজের স্বপ্নের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে রায়হান বলেন- “আমার কিছু ব্যক্তিগত স্বপ্ন এবং লক্ষ্য আছে। তবে সফল হওয়ার আগে কাওকে কখনও স্বপ্নের কথা বলি না আমি। অনেক সময় অনেক স্বপ্ন একটু বেশি বড় থাকে”।
মানুষের জীবনের সফলতা নিয়ে তিনি জানান- “জীবনে ভালো কিছু করতে চাইলে কষ্ট করতে হবে। প্রতিটা মানুষের সামনে অসংখ্য বিকল্প পথ আসবে চলার পথে। এর মধ্যে নিজের পছন্দ এবং স্বপ্ন অনুযায়ী একটা পথ ঠিক করে সেই পথে এগুতে হবে। তবে সবসময় সামনে কিছু বিকল্প পথ রাখা উচিত। সবাইকে আমাজন, গুগল, ফেসবুকে চাকরি করতে হবে এমন না। অথবা সবাইকে বিসিএস ক্যাডার ও হতে হবে না। আবার সবার পক্ষে টপার হওয়াও সম্ভব না। প্রত্যেকের নিজস্ব চিন্তা-চেতনা, স্বপ্ন আছে। সফলতা হলো সেই টার্গেটে পৌছাতে পারা। সবার সফলতা এক মানদণ্ডে বিবেচনা করা উচিত না”।
আবু রায়হানের অ্যামাজনে চাকরি নিয়ে আমরা কথা বলি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আবদুর রহিমের সাথে। তিনি ক্যাম্পাসলাইভকে জানান- ''এই খবরটা সত্যি আমাদের জন্য আনন্দের। শুধু আমাদের জন্য নয় পুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই এই খবরটা আনন্দের। আমরা চেষ্টা করছি শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর বিষয়ে দক্ষ করে তুলতে। এক্ষেত্রে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি আমাদের ‘প্রোগ্রামিং ক্লাব’ শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিংয়ে দক্ষ করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে।''
তিনি আরও বলেন, ''আমাদের বিভাগের সবার সার্বিক প্রচেষ্টায় আজ আমাদের শিক্ষার্থীরা দেশে বিদেশে সব জায়গাতে ভালো করছে। তবে আমাদের প্রতিটি অর্জনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব সময় সহযোগিতা করেছে এবং আমরা আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সামনেও তাদের এই সহযোগিতার ধারা অব্যাহত রাখবেন''।
ঢাকা, ১১ জানুয়ারি (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমজেড
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: