রাবি লাইভ: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ সংক্ষেপে রাকসু নামে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সৎ, মেধাবী এবং দেশপ্রেমিক ছাত্র নেতৃত্ব তৈরির উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে নতুন ছাত্র নেতৃত্ব তৈরি করতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়টি।
রাকসু সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠার পরে এখন পর্যন্ত মোট ১৪ বার রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পদাধিকারবলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাকসু -এর সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। সদস্যরা সরাসরি ভোট দিয়ে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং অন্যান্য পদ নির্বাচন করেন। রাকসু সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ও রুহুল কুদ্দুস বাবু এক বছরের জন্য যথাক্রমে ভিপি ও জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময়, ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এছাড়া সামরিক শাসনের জন্য ১৯৭৫-১৯৮০ এবং ১৯৮১-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত ছিল। ১৯৮৯ সাল এর পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত রাকসু নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে।
বিভিন্ন সময় অচল রাকসু সচলের দাবি জানিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলো। যার প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রশাসনের সংলাপ শুরু হলেও তা করোনা প্রকোপে দীর্ঘ সময় ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তা আর চালিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি।
তবে করোনা পরবর্তী সময়ে রাকসুর অর্থায়নে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করলে নতুন করে আলোচনায় আসে রাকসু নির্বাচন।
এদিকে অনতিবিলম্বে রাকসু নির্বাচনসহ ১০দফা দাবি জানিয়ে ভিসি প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আজ রবিববার দুপুরে এ স্মারকলিপি প্রদান করে তারা।
অনতিবিলম্বে রাকসু নির্বাচন দেয়ার দাবি ছাড়াও তাদের অন্য দাবি গুলোর মধ্যে রয়েছে, শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম- শৃঙ্খলা সংশোধন করা, সান্ধ্য আইন বাতিল, 'ছাত্র সংগঠন থাকা যাবেনা' এমন নোটিশ প্রত্যাহার করা, প্রক্টরিয়াল ক্ষমতা শুধু প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের কাছে থাকবে, কোন কর্মকর্তা কাছে এ ক্ষমতা দেয়া যাবেনা, মেয়েদের হল গুলোতে নির্দিষ্ট প্রয়োজনে অভিভাবক ও অতিথিদের থাকার অনুমতি দেয়া,মেয়েদের হলে কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, হলে ডাইনিং ও ক্যান্টিনে খাবারের মান বৃদ্ধি করা, ক্যাম্পাসে খাবারের দোকানগুলোতে খাবারের মান বৃদ্ধি ও মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া, সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস সিসি টিভি ক্যামেরা আওতায় এনে নিরাপত্তা জোরদার করা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, 'আমরা অনেক আগে থেকেই রাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছি। গত কয়েকদিন পূর্বেও সকল ছাত্র সংগঠন একসাথে বসেছিলাম সবারই একটাই দাবি রাকসু নির্বাচন। সব সংগঠনগুলোই এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছে। সেইসাথে তাদের নিজ-নিজ জায়গা থেকে দাবি জানাবে। তারপর আমরা সংগঠনগুলো মিলে ভিসি সাথে কথা বলব। যদি এতেও কাজ না হয় পরবর্তী স্টেপ আলোচনা সাপেক্ষে হবে।'
এরপূর্বে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা মতবিনিময় সভা করেছেন। গত ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের সামনে আমতলায় এই সভা হয়েছে। এতে সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা রাকসু নির্বাচনের পক্ষে দাবি জানান।
রাকসু আন্দোলন মঞ্চের উদ্যোগে আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় রাকসুর সাবেক ভিপি রাগিব আহসান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র অধিকার পরিষদ, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের নেতারাসহ তিন সাংবাদিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা, ২৬ ডিসেম্বর (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমআই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: