Azhar Mahmud Azhar Mahmud
teletalk.com.bd
thecitybank.com
livecampus24@gmail.com ঢাকা | সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১
teletalk.com.bd
thecitybank.com

রাবির আবাসিকে বাসা ছাড়ছেন শিক্ষকরা!

প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০১৭, ১৯:৫০

 

মনিরুল ইসলাম নাঈম, রাবি লাইভ: ষাটের দশকে নির্মিত আবাসিক বাসা-বাড়িতে অতিরিক্ত ভাড়া ও সেই তুলানায় সুযোগ-সুবিধা না থাকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) অধিকাংশ শিক্ষক বাসা ছেড়ে দিচ্ছেন। বিগত কিছুদিনের ব্যবধানে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক এই বাসা বাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবাসিক বাসা বরাদ্দের জন্য নতুন করে নোটিশ দিয়েও আগ্রহের সাড়া মিলছে না বলে জানা গেছে। অন্যদিকে বাসাগুলো সংস্কারের জন্য প্রশাসের কাছে দাবি করলেও কার্যকারী কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন একাধিক শিক্ষক। অবশ্যই বাসা বরদ্দ কমিটির কর্তৃপক্ষ জানালেন, বাসাগুলোতে সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভিসি, প্রো-ভিসির বাস ভবনসহ শিক্ষক-অফিসারদের জন্য দ্বি-তল, তিন তলা ও ৪ তলা মিলিয়ে প্রায় ৮৮ টি ভবনে ‘এ’ ‘বি’ সি’ তিন ক্যাটাগারিতে ৩১৯ টি বাস আছে। এর মধ্যে ফিক্স রেন্টে ৬০টি বাসা, যা চার বছরের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। অন্যদিকে ২৫৯ টি বাসা আছে, যেখানে বেতনের উপর বাসা ভাড়া বাবদ সরকারী বরাদ্দের টাকা কর্তন করা হয়। এছাড়া সাধারণ ও সহয়ক কর্মচারীদের জন্য ১৩৮ টি বাসা রয়েছে। এর মধ্যে ৮৮টি ফিক্স রেন্টে ও ৫০ টি বেতন কর্তন হিসেবে।

বাড়ি ভাড়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের উপ-পরিচালক শরিফুল ইসলাম জানান, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সরকারি গেজেট অনুযায়ী বেতন স্কেলের ৮২৫০-৯৭০০ টাকা বেতনধারীদের ৫৫ শতাংশ, ৯৭০১ থেকে ১৬০০০ টাকা পর্যন্ত ৫০ শতাংশ,  ১৬০০১ থেকে ৩৫৫০০ টাকা বেতনধারীদের ৪৫ শতাংশ এবং ৩৫৫০১ থেকে তদূর্ধ বেতনধারীদের বেতনের ৪০ শতাংশ এই চারটি পর্যায়ে বাসা ভাড়া বাবদ পেয়ে থাকেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক বাসাতে থাকতে বেতনের গেজেট হিসাবে কোন কোন শিক্ষককে সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া প্রদান করতে হয় বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপকের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকারী নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি অধ্যাপক বেতনের চল্লিশ শতাংশ বাসা ভাড়া বাবদ পেয়ে থাকে। সেই হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে বাড়ি ভাড়া বাবদ তাকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। যা রাজশাহীর মত যায়গায় ব্যাপক ব্যায় বহুল। অথচ রাজশাহী শহরে এর চেয়ে কম দামে বাসা বাড়ি পাওয়া সম্ভব বলে জানান তারা।

অবশ্যই সেই তুলনায় প্রভাষক, সেকশন অফিসার ও অন্যকর্মকর্তারা কম খরচে বাসায় থাকতে পারে। যার কারণে বাসা ছেড়ে যাওয়া অধিকাংশ শিক্ষকই সিনিয়র।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আবাসিক বাসা বাড়িতে থাকা সিনিয়র শিক্ষক ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘আমাকে বাসা ভাড়া বাবদ প্রায় ৪০ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। অথচ একই বিল্ডিংয়ে অন্য একজন কর্মকর্তাকে ৯ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। এটা অসমঞ্জস্য বলে মনে করেন তিনি।’ এসময় এই শিক্ষক বলেন, ‘প্রতিটি বাসার ভাড়া নির্ধারণ, বাসা আধুনিকায়ন এবং শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বাসা আলাদাভাবে নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। অন্যথায় শিক্ষকদের ডিগনিটি নষ্ট হচ্ছে।’

আবাসিক শিক্ষকদের অভিযোগ, ‘ষাটের দশকে যেভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল সেভাবেই রয়ে গেছে আবাসিক বাসাগুলো। নষ্ট হয়ে গেছে পেইন্ট ও ফিটিংস। বাহির থেকে ভাল মনে হলেও ভবনগুলো পুরাতন হওয়ায় অনেক সময় ছাদ থেকে বালু, পলেস্তারা খসে পড়ে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষকরা। তারা অভিযোগ করেন, ওয়াশ রুমের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আর দূর্গন্ধের কারণে রুমের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। এভাবে বসবাসে স্বাচ্ছন্দ্য নষ্ট হচ্ছে আবাসিক শিক্ষকদের।’

এদিকে বাড়ি ভাড়ার তুলনায় বাসার অবস্থা মানসম্মত না হওয়ায় সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য বারবার আবেদন করা হচ্ছে তবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলে দাবি শিক্ষকদের।

অনেকে ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিকতায় যে ব্যয় হয় রাজশাহীর সবচেয়ে বিলাসবহুল এলাকাতে তার অর্ধেক ব্যয়ে অনেক বেশি সুবিধা পাওয়া যায়।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত তিন মাসের ব্যবধানে প্রায় ৪০ জন শিক্ষক আবাসিক এলাকা থেকে চলে গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে খালি পড়ে আছে প্রায় ৩৯টি বাসা। এদিকে ছেড়ে যাওয়া বাসাগুলোতে শিক্ষকদের আবাসিকতা গ্রহণের উদ্দেশ্যে নোটিশ দিলেও শিক্ষকদের তেমন একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলে জানান বাসা বরাদ্দ কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. শহীদুল্লাহ ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘শিক্ষকদের বাসাগুলোর অবস্থার প্রেক্ষিতে বাড়ি ভাড়া সম্পর্কে দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসছেন তারা। কিন্তু এখনও শিক্ষকরা বিষয়টির সুরাহা পাওয়া যায়নি।’

ভাড়া যথার্থ দিয়েও সুবিধা না পাওয়ায় আবাসিক শিক্ষক প্রফেসর ইশতিয়াক হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিকতায় একজন শিক্ষক বা কর্মকর্তার যে ব্যয় হয়। তার অর্ধেক ব্যয়ে রাজশাহীর সবচেয়ে বিলাসবহুল আবাসিক এলাকায় অনেক স্বাচ্ছন্দ্যে থাকা যায়।’

বাসাগুলোর ভাড়ার অনুপাতে সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসা বরাদ্দ কমিটির আহবায়ক জীব ও ভূবিজ্ঞান অনুষদের ডীন প্রফেসর সাইফুল ইসলাম ফারুকী ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘বাসাগুলোতে শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলছে।’

 

ঢাকা, ১১ এপ্রিল (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)//এমএইচ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


আজকের সর্বশেষ